
সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা: নির্বাসনে আওয়ামী লীগ নেতারা, দল নিষিদ্ধ - আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা: নির্বাসনে আওয়ামী লীগ নেতারা, দল নিষিদ্ধ - আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ
ঢাকা / নয়াদিল্লি | ৪ আগস্ট ২০২৫
বিশেষ প্রতিবেদক | আন্তর্জাতিক পাঠকদের জন্য সম্পাদিত সংস্কর
২০২৪ সালের গণবিপ্লবের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমূল পরিবর্তন আসে। দেশটির দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এখন সরকারি নিষেধাজ্ঞার মুখে। দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর রয়েছে। এর ফলে দেশীয় রাজনীতি যেমন অস্থিরতায় ঘনিভূত হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও এই ইস্যু নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
পতনের মুখে একদা শক্তিশালী রাজনৈতিক দল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে গণআন্দোলন ও সামরিক অসহযোগিতার মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়। “জুলাই-আগস্ট গণজাগরণ” নামে পরিচিত আন্দোলনের মূলে ছিল গণতন্ত্র হরণ, নির্বাচন কারচুপি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ।
পরবর্তীতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং শুরু হয় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান - অপারেশন ডেভিল হান্ট, যার আওতায় হাজার হাজার সাবেক সরকারপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
আইনি পদক্ষেপ ও দল নিষিদ্ধ ঘোষণা
২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম ট্রাইব্যুনাল ফর ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি আইন সংস্কারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অভিযোগ ছিল, দলটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক সহিংসতা উসকে দেওয়া ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ভারত ও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো এ বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়।
শেখ হাসিনা, যিনি বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সহিংসতা, বিরোধী কণ্ঠ দমন ও নির্বাচনী জালিয়াতি অভিযোগে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচার চলছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ভারতের কূটনৈতিক উদ্বেগ
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র ভারত সরকার এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে একাধিকবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়। ভারত বাংলাদেশে রাজনৈতিক বৈচিত্র্য রক্ষার আহ্বান জানায় এবং বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার তাগিদ দেয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে বলেন:
“বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত না হয়ে বরং বিস্তৃত হওয়া উচিত। কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর একচেটিয়া নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ব্যাহত করতে পারে।”
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কমপক্ষে ২৭ জন আওয়ামী লীগ নেতা ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে আশ্রয় নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন করেছেন।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিশেষ রাজনৈতিক শরণার্থী নীতিমালার অধীনে বিবেচনা করছে।
গোপালগঞ্জে সহিংসতা: সংঘাতের নতুন মাত্রা
সম্প্রতি গোপালগঞ্জে একটি জাতীয় ঐক্য পার্টি (NCP)-র সমাবেশে সহিংসতায় চারজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় আওয়ামী লীগপন্থী এবং সরকারপন্থী কর্মীদের মধ্যে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একে “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক সহিংসতা” হিসেবে নিন্দা জানালেও, আওয়ামী লীগের নির্বাসিত নেতৃত্ব একে “রাষ্ট্রীয় নিধনযজ্ঞ” বলে দাবি করে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্বাধীন তদন্ত এবং রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য স্বচ্ছ বিচার দাবি করেছে।
মূল ঘটনাসমূহের সময়রেখা
তারিখ ঘটনা
জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণবিপ্লব ও শেখ হাসিনা সরকারের পতন
ফেব্রুয়ারি ২০২৫ অপারেশন ডেভিল হান্ট চালু - ১১,০০০+ গ্রেফতার
মে ২০২৫ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা
জুলাই ২০২৫ শেখ হাসিনার অনুপস্থিত বিচার শুরু
আগস্ট ২০২৫ গোপালগঞ্জে সহিংসতা, নিহত ৪
দক্ষিণ এশিয়ার জন্য পরিণতি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে:
ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ: নির্বাসিত নেতাদের আশ্রয় দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি ঘটতে পারে।
চীনের কৌশলগত নীরবতা: বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে পুনর্বিবেচনায় থাকতে পারে।
নিরাপত্তা ঝুঁকি: বিতাড়িত নেতাদের আশ্রয়ে জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ: বড় রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা ২০২৬ সালের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
লন্ডন স্কুল অফ ইকনোমিক্স-এর দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ড. রেহমান সিদ্দিকী বলেন:
> “এই রাজনৈতিক রূপান্তর সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে কংগ্রেসের ১৯৭৭ সালের পতনের পর সবচেয়ে বড় ঘটনা। আগামী কয়েক মাসে বাংলাদেশের পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।”
এগিয়ে কী আছে?
বাংলাদেশ বর্তমানে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক পথে। প্রশ্ন রয়ে গেছে:
দেশ উদার গণতন্ত্র, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হবে, নাকি সহিংসতা, নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হবে?
সম্পাদকের টীকা:
এই প্রতিবেদন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ উৎস, সরকারি বিবৃতি এবং যাচাইকৃত তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্বাসিত আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও, তারা এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত সাড়া দেননি।
যোগাযোগ:
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ
ইমেইল: southasia@globalreport.org
-