ষড়যন্ত্রের বুলি নয়, জবাব চাই সংস্কারে
লেখক: একজন সচেতন নাগরিক
৪ আগস্ট ২০২৫-একই দিনে দুই বিপরীত রাজনৈতিক অবস্থান থেকে এসেছে দুইটি উদ্বেগজনক বার্তা। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, “১/১১ এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।” অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুবদলের সমাবেশে বলেছেন, “দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে।”
এই দুই বক্তব্যে একটি অদ্ভুত মিল রয়েছে-দুই পক্ষই অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন, কিন্তু কেউই জনগণের সামনে স্পষ্ট করে বলছেন না, কে ষড়যন্ত্র করছে, কীভাবে করছে, এবং কেন এখনই এই আশঙ্কা উত্থাপিত হচ্ছে।
জনগণ প্রশ্ন করে: কোথায় সংস্কার?
একটি বছর পার হয়ে গেছে অন্তর্বর্তী সরকারের। অথচ তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার, বিতর্কিত আইন সংস্কার-কোনোটিই দৃশ্যমান নয়। মাহফুজ আলম যদি সত্যিই ১/১১-এর পদধ্বনি শুনতে পান, তাহলে তার দায়িত্ব জনগণকে আশ্বস্ত করা, ভয় দেখানো নয়। ২০০৭ সালের মতো আরেকটি অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি কি নিজেই সংস্কারহীনতার দায় এড়াতে চাইছেন?
ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কী অর্জন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যেও একই ধরনের অস্পষ্টতা। “দেশ নিয়ে চক্রান্ত চলছে”-এই অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু বিএনপি কি নিজেই তার রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নেতৃত্বের স্বচ্ছতা, এবং গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি নিয়ে আত্মসমালোচনায় প্রস্তুত? যদি সত্যিই ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে জনগণকে কেবল ভয় দেখিয়ে নয়, তথ্য দিয়ে, প্রমাণ দিয়ে, বিকল্প পথ দেখিয়ে নেতৃত্ব দিতে হয়।
জনগণের প্রত্যাশা: স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সংস্কার
বাংলাদেশের জনগণ আর ষড়যন্ত্রের গল্পে বিশ্বাস করে না। তারা চায়-
সংবিধানসম্মত প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন
বিতর্কিত আইন সংস্কার
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র
নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা
মানবাধিকার ও তথ্য কমিশনের কার্যকর ভূমিকা
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না দিয়ে যদি দুই পক্ষই “ষড়যন্ত্র” আর “পদধ্বনি”র গল্পে মত্ত থাকে, তাহলে জনগণ ধরে নেবে-এই ভয় দেখানো আসলে ব্যর্থতার আড়াল।
শেষ কথা
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১/১১ ছিল একটি ব্যথাতুর অধ্যায়। সেই অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি কেউ চায় না। কিন্তু সেই ভয়কে পুঁজি করে যদি সংস্কার এড়িয়ে যাওয়া হয়, তাহলে জনগণই একদিন জবাব দেবে-ভোটে, রাস্তায়, এবং ইতিহাসে।