
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » মুখে সংস্কার, ভিতরে মোড়লতন্ত্র: এনসিপি’র দ্বিচারিতা গণতন্ত্রের জন্য কতটা বিপজ্জনক?
মুখে সংস্কার, ভিতরে মোড়লতন্ত্র: এনসিপি’র দ্বিচারিতা গণতন্ত্রের জন্য কতটা বিপজ্জনক?
শফিকুল ইসলাম ঃ
বাংলাদেশে যখন রাজনৈতিক সংস্কার আর গণতান্ত্রিক পুনরাগঠনের দাবি উঠেছে, তখন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটি স্বাগতধর্মী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। তারা মুখে বলছে -স্বৈরতন্ত্র-পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের পক্ষে। কিন্তু তাদের কাজ-কর্ম, ভাষ্য ও সাংগঠনিক ধরন গভীর পর্যবেক্ষণে অনেকটা বিপরীত চিত্রই উপস্থাপন করে।
এই দ্বিচারিতা কি নিছক কৌশল, নাকি রাজনৈতিক মোড়কে নব্য-মব্বাদ ফ্যাসিবাদের সূচনা?
বাহ্যিক গণতন্ত্র, অভ্যন্তরীণ কর্তৃত্ববাদ এনসিপি তাদের বক্তব্যে যতই বিকেন্দ্রিক ক্ষমতা, কমিশন নির্ভর নিয়োগ, এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির কথা বলুক-মাঠপর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে সংগঠনের গতিপ্রকৃতি ক্রমশ একনায়কতন্ত্রমুখী, যেখানে প্রশ্ন তোলা মানে বিদ্রোহ।
এটিই মব্বাদ তন্ত্রের আত্মপ্রকাশ-যেখানে দল বা নেতৃত্ব “আল্লাহর পক্ষ” দাবি করে, অথচ জনগণের অংশগ্রহণকে সংকুচিত করে।
ধর্মীয় ভাষ্য দ্বারা জনতাকে নিয়ন্ত্রণ?
স্বৈরতন্ত্রের এক মারাত্মক রূপ হলো ধর্মীয় আবরণে ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা। এনসিপির কিছু বক্তৃতা, মঞ্চ ভাষ্য কিংবা শ্লোগান-যেমন “জনগণের সরকার আল্লাহর পক্ষের সরকার”-ইঙ্গিত দেয়, তারা ধর্মের নাম ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী আবেগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এটি ইসলামি নামধারী জঙ্গি ন্যারেটিভের সূক্ষ্ম সংস্করণ, যেখানে রাজনীতি একটি পবিত্র দায়িত্ব নয়, বরং কর্তৃত্বের হাতিয়ার।
ভিন্নমত দমন, আপাত সংস্কারে ফ্যাসিবাদি মনোভব
গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো বিতর্ক, মতপার্থক্য এবং জবাবদিহিতা। কিন্তু এনসিপির অভ্যন্তরীণ তৎপরতায় দেখা যাচ্ছে:
ভিন্নমত প্রকাশে বাধা ,স্বচ্ছতার অভাব
নেতৃত্বে গডফাদারতন্ত্রের পুনরাবৃত্তি অর্থাৎ তারা যে সংস্কারের কথা বলছে, তা শব্দের ভেতরে শাসনের ছায়া লুকিয়ে রাখে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূল্যায়ন
গণতান্ত্রিক সংস্কার মানে শুধু নির্বাচন নয়-মানে মানবাধিকার, মুক্ত মতপ্রকাশ, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রপরিচিতি, এবং নেতৃত্বে জবাবদিহিতা। এসব মানদণ্ডে এনসিপি’র কার্যক্রম যত না অগ্রগামী, ততটাই প্রশ্নবিদ্ধ। মুখে তারা যাই বলুক, বাস্তবে ফ্যাসিবাদী শাসন কাঠামোর আদলেই একটি সংগঠন দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে, যেখানে জনগণ শুধু অনুসরণ করবে, প্রশ্ন করবে না।
মোড়ক উন্মোচনের সময় এসেছে
এনসিপি যদি সত্যিই গণতন্ত্র চায়, তাহলে তাদের দরকার প্রমাণযোগ্য স্বচ্ছতা, অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা, এবং ধর্মীয় আবরণ ত্যাগ করে রাজনীতিকে জনগণের স্বার্থে পরিচালনা। নাহিদ ইসলাম ও তাঁর সহচরগণ এখন দুই মুখের রাজনীতি করছে-মুখে সংস্কার, আর বাস্তবে আধিপত্য।
এই দ্বিচারিতা শুধু রাজনৈতিক নয়, আদর্শিক বিপদও। সময় এসেছে মোড়ক সরিয়ে জনতার সামনে সত্য তুলে ধরার।