শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ » স্বাধীনতার ৫০ বছর: যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’
প্রথম পাতা » অপরাধ » স্বাধীনতার ৫০ বছর: যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’
৩৬৪ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

স্বাধীনতার ৫০ বছর: যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’

---

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদর্শনীতে ১৯৭১ এর গণহত্যার ফটোগ্রাফ

ঢাকায় এক রাতের যে অভিযানে অর্ধ লক্ষ মানুষের প্রাণহানী হয়েছিল, সেই রাতটিকে স্বাধীন বাংলাদেশে বর্ণনা করা হয় ‘কালরাত্রি’ হিসেবে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের ওই সেনা অভিযানের সাংকেতিক নাম বা কোডনেম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
এই অভিযানটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল তারও এক সপ্তাহ আগে, ১৮ই মার্চ।
সময়টা ছিল রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ। গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করায় ঢাকা তখন বিক্ষোভের শহর। ঢাকায় ইতিমধ্যে ওড়ানো হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এরই মধ্যে ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিয়েছেন। ডামি রাইফেল নিয়ে ঢাকার রাস্তায় মার্চ করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
ঢাকায় তখন চলছে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। আলোচনায় অংশ নিতে জুলফিকার আলী ভুট্টোও রয়েছেন শহরে। সব মিলে খুবই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।
এরকম প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা অপারেশন সার্চলাইটের, যুক্তি ছিল রাজনৈতিক সমঝোতা ‘ব্যর্থ’ হলে সামরিক অভিযান চালিয়ে ‘পাকিস্তান সরকারের কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
‘কালরাত্রির’ সেই ভয়াবহ সেনা অভিযানের পরিকল্পনা কীভাবে হয় তার ধারণা পাওয়া যায় সেসময় ঢাকায় দায়িত্বরত পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতিকথা থেকে।
.
---
.
সাতই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ
যেভাবে ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল
মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা তখন পূর্ব পাকিস্তানের ১৪তম ডিভিশনের জিওসি ছিলেন। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে সামরিক অভিযানের অন্যতম পরিকল্পনাকারী তিনি।
‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ঔন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১’ শিরোনামের একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ১৭ই মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান টেলিফোনে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজাকে কমান্ড হাউজে ডেকে পাঠান।
মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের উপদেষ্টা।
দুইজন সেখানে যাওয়ার পর টিক্কা খান তাদের বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আলোচনায় ‘প্রত্যাশিত অগ্রগতি’ হচ্ছে না।
যে কারণে এখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘মিলিটারি অ্যাকশনে’র জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।

ডামি রাইফেল হাতে মার্চ

---

আর সে কারণে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সে অনুযায়ী ১৮ই মার্চ সকাল থেকে ক্যান্টনমেন্টে খাদিম হুসাইন রাজার বাসায় রাও ফরমান আলী এবং তিনি দুইজন মিলে অপারেশন সার্চলাইটের খসড়া তৈরি করেন।
খাদিম হুসাইন রাজা লিখেছেন, ১৮ই মার্চ সকালে তিনি তাঁর স্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন যাতে তিনি তার বাঙ্গালি এডিসিকে ব্যস্ত রাখেন, এবং তাঁর অফিস থেকে দূরে রাখেন।
যেন রাও ফরমান আলী সকাল সকাল খাদিম হুসাইন রাজার অফিসে কী করছেন এমন সন্দেহ বাঙ্গালি এডিসির মনে উদয় না হয়।
সারা সকাল ধরে জেনারেল রাজা এবং জেনারেল আলী সামরিক অভিযান পরিচালনার খসড়া তৈরি করেন।
অল্প সময়ের মধ্যেই তারা দুইজন পরিকল্পনার পরিসর নিয়ে একমত হন, এরপর দুইজনে দুইটি আলাদা পরিকল্পনা লেখেন।
ঢাকা অঞ্চলে সামরিক অপারেশনের দায়িত্ব নেন রাও ফরমান আলী, আর বাকি পুরো প্রদেশে অভিযানের দায়িত্ব নেন খাদিম হুসাইন রাজা।
রাও ফরমান আলী পরিকল্পনায় তার অংশে একটি মুখবন্ধ লেখেন, এবং কিভাবে ঢাকায় অপারেশন চালানো হবে তা বিস্তারিত লেখেন।
ঢাকার বাইরে বাহিনী কী দায়িত্ব, কিভাবে পালন করবে তার বিস্তারিত পরিকল্পনা করেন খাদিম।
সন্ধ্যায় খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে তারা হাজির হন কমান্ড হাউজে।
জানুয়ারি মাসে ইয়াহিয়া খানের সাথে এক দফা আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন শেখ মুজিব।

জানুয়ারি মাসে ইয়াহিয়া খানের সাথে এক দফা আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন শেখ মুজিব।
খাদিম হুসাইন রাজা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন এবং কোন আলোচনা ছাড়াই পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সিদ্দিক সালিক।
‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ শিরোনামের একটি বইয়ে তিনি ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নিয়ে লিখেছেন, জেনারেল রাও ফরমান আলী হালকা নীল কাগজের অফিসিয়াল প্যাডের ওপর একটি সাধারণ কাঠ পেন্সিল দিয়ে ওই পরিকল্পনা লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, তিনি স্বচক্ষে সেই হাতে লেখা পরিকল্পনার খসড়া দেখেছিলেন।
তাতে সামরিক অভিযানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, ‘শেখ মুজিবের ডিফ্যাক্টো শাসনকে উৎখাত করা এবং সরকারের (পাকিস্তানের) কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।’
সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিকল্পনা ছিল ১৬টি প্যারা সম্বলিত এবং পাঁচ পৃষ্ঠা দীর্ঘ।
পরিকল্পনা অনুমোদিত হলেও কবে সামরিক অপারেশন চালানো হবে সেই দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল না।
খাদিম হুসাইন রাজা তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ২৪শে মার্চ দুইটি হেলিকপ্টার নিয়ে রাও ফরমান আলী এবং তিনি নিজে ঢাকার বাইরে অবস্থানরত ব্রিগেড কমান্ডারদের সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হবার নির্দেশনা দিতে রওয়ানা হন।
জুলফিকার আলী ভুট্টো

আলোচনার জন্য ২১শে মার্চ ঢাকায় আসেন জুলফিকার আলী ভুট্টো
তারা চেয়েছিলেন গোপনীয়তা বজায় রেখে বিভাগীয় কমান্ডারদের সরাসরি নির্দেশনা দেবেন এবং মাঠ পর্যায়ে যদি কোন সমস্যা থাকে সেটি কৌশলে সমাধান করবেন।
তারা যশোর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে যান।
সিলেট, রংপুর এবং রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে পাঠানো হয় সিনিয়র স্টাফ অফিসারদের।
অভিযানের জন্য প্রস্তুত হতে বলেও ব্রিগেড কমান্ডারদেরকে জানানো হয়েছিল যে, আঘাত হানার সময় পরে জানানো হবে।
সিদ্ধান্ত হয়েছিল সব গ্যারিসনকে একই সঙ্গে এক সময়ে অপারেশনে নামতে হবে।
পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী আটটি স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যান্টনমেন্টে বিন্যস্ত ছিল—ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর।
এর সাথে ২ নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল ঢাকার কাছে, জয়দেবপুরে।
অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা সম্পর্কে খাদিম হুসাইন রাজা তাঁর ‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ঔন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১’ বইয়ে লিখেছেন, পরিকল্পনার মূল দিকগুলো ছিল এরকম—
* যে কোন ধরণের বিদ্রোহ বা বিরোধিতাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে
* সফল হওয়ার জন্য আকস্মিক চমক এবং চাতুরীর গুরুত্ব আছে। সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকেও চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে তাদের সাহায্য করার পরামর্শ দিয়েছিল
* বাঙ্গালি সেনা সদস্য ও পুলিশকে নিরস্ত্র করা হবে। বিশেষ করে পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের অস্ত্রাগার, রাজারবাগের রিজার্ভ পুলিশ এবং চট্টগ্রামে কুড়ি হাজার রাইফেলের অস্ত্রভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ আগেভাগে নিয়ে নেয়া,
* অপারেশন শুরুর সাথে সাথে সব রকমের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নতুন করে যাচাই-বাছাই করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে
* অস্ত্রশস্ত্র এবং অপরাধীদের খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ঘিরে ফেলতে হবে, এবং তল্লাশি চালাতে হবে
* শেখ মুজিবকে জীবিত অবস্থায় ধরতে হবে। এর বাইরে ১৫ জন আওয়ামী লীগ এবং কম্যুনিস্ট পার্টির নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হবে, তাদের কাউকে পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করতে হবে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন ব্যারাকে ঘুরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা তদারকি করলেও, অপারেশন সার্চলাইটে অংশ নেয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর কারো কাছেই কোন লিখিত অর্ডার পাঠানো হয়নি।
সময় জানিয়ে মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইনের কাছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের কাছ থেকে ফোনটি এসেছিল ২৫শে মার্চ সকাল ১১টায়।
সংক্ষেপে বলা হয়েছিল, “খাদিম, আজ রাতেই।”
সময় নির্দিষ্ট হয়েছিল রাত ১টা। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেবে অবশ্য তখন থাকবে ছাব্বিশে মার্চ।
হিসেব করা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ততক্ষণে নিরাপদে করাচি পৌঁছে যাবেন।
তারপরের ইতিহাস তো সবার জানা।

B B C



এ পাতার আরও খবর

সারজিস আলমের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসা থেকে ৩ বস্তা টাকা উদ্ধার: রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সারজিস আলমের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসা থেকে ৩ বস্তা টাকা উদ্ধার: রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়
একজন গুমের শিকার সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা একজন গুমের শিকার সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা
বাংলাদেশে মবের শাসন: যখন রাষ্ট্র নীরব, তখন জনতা হয়ে ওঠে জল্লাদ বাংলাদেশে মবের শাসন: যখন রাষ্ট্র নীরব, তখন জনতা হয়ে ওঠে জল্লাদ
গণপিটুনি: ধর্ষণ আইনহীনতার ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি ইউনুসের শাসনকাল গণপিটুনি: ধর্ষণ আইনহীনতার ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি ইউনুসের শাসনকাল
ভিআইপি রুম না পেয়ে যুবদল নেতার অনুসারীদের বার ভাঙচুর, নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ ভিআইপি রুম না পেয়ে যুবদল নেতার অনুসারীদের বার ভাঙচুর, নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ
কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান সফল, নিহত ‘মেজর’সহ উদ্ধার বিপুল অস্ত্র কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান সফল, নিহত ‘মেজর’সহ উদ্ধার বিপুল অস্ত্র
সদ্য অবসরে যাওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার বিপুল সম্পদের মালিকানা নিয়ে রহস্য সদ্য অবসরে যাওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার বিপুল সম্পদের মালিকানা নিয়ে রহস্য
‘ব্যালট’ প্রকল্পে ৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা- ‘ব্যালট’ প্রকল্পে ৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা-
পেতংতার্নকে বরখাস্ত এবং তার বিরুদ্ধে নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত শুরু পেতংতার্নকে বরখাস্ত এবং তার বিরুদ্ধে নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত শুরু
বিদেশি এজেন্টদের হাতে বাংলাদেশ-দায়মুক্তির রাজনীতি ও গণতন্ত্রের অপমৃত্যু বিদেশি এজেন্টদের হাতে বাংলাদেশ-দায়মুক্তির রাজনীতি ও গণতন্ত্রের অপমৃত্যু

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)