শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

Daily Pokkhokal
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি » বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সফরের নেপথ্যে
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি » বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সফরের নেপথ্যে
৪৬৫ বার পঠিত
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সফরের নেপথ্যে

---
সালমান রাফি শেখ
চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি পশ্চিমাদের জন্য ‘অস্বস্তির’ কারণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চালু করার পর। তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে আরও জোরদার করেছে।
ইউরোপে যদিও চীন যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু দেশটির ভৌগলিক অবস্থান হলো এশিয়াতে, যেখানে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাটা সবচেয়ে তীব্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এশিয়া মূলত মার্কিন প্রভাবাধীন অঞ্চল ছিল। কিন্তু চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ মার্কিন প্রভাবকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে, এবং সেটার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রকে এখন নতুন নতুন কৌশল খুঁজতে হচ্ছে।
বর্ধিত সামরিক সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে এই দেশগুলোর পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার মত চাপিয়ে দেয়ার জন্য একটা পরিস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্রশান্ত কৌশল (আইপিএস) গ্রহণ করেছে - যে নীতিটি সব দিক থেকেই এ অঞ্চলে চীনকে ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখতে এবং মার্কিন প্রভাব বলয়কে সক্রিয় রাখতে এমনকি সামরিকভাবে সক্রিয় রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
২০১৯ সালের জুনে আইপিএস ঘোষণার পর থেকে এর অধীনে বাংলাদেশসহ বেশ কিছু এশিয়ার দেশের সাথে নতুন সামরিক চুক্তির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে এই নীতির সাম্প্রতিক বহি:প্রকাশ ঘটেছে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব ডিফেন্স র‍্যান্ডাল জি শ্রিভারের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে। সফরে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশান এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) এবং অ্যাকুইজিশান অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (এসিএসএ) - এই দুটো সামরিক চুক্তি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
মালদ্বীপ আরেকটি দেশ যেখানে সামরিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে মালদ্বীপকে ৭ মিলিয়ন ডলারের বিদেশী সামরিক অর্থায়ন তহবিল দিচ্ছে। নেপালের সাথে ইউএস আর্মি প্যাসিফিকের নেতৃত্বাধীন ল্যান্ড ফোর্সেস আলোচনা শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুনে। এ যাবতকালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘটিত এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক পর্যায়ের আলোচনা।
একইভাবে, ইন্দোনেশিয়াও মার্কিন-নেতৃত্বাধীন ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি এডুকেশান অ্যান্ড ট্রেইনিং (আইএমইটি) কর্মসূচির বড় গ্রাহক। মালয়েশিয়াতেও যুক্তরাষ্ট্র একজন নৌ উপদেষ্টা মোতায়েনের কথা ভাবছে এবং আশা করছে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-মালয়েশিয়া নৌ সহযোগিতা জোরালো হবে এবং এ অঞ্চলে এক সারি এলাকা গড়ে উঠবে এবং যেখানে বিশেষ মনোযোগ থাকবে মালাক্কা প্রণালীর দিকে, কারণ এই প্রণালী চীনের বাণিজ্য ও তেল পরিবহনের অন্যতম প্রধান রুট।
বাংলাদেশ এবং আরও বহু দেশ যেখানে এরই মধ্যে চীনের বিআরআই-এর সদস্য হয়ে গেছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র বর্ধিত সামরিক সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে আসছে যাতে চীনের প্রসারিত প্রভাবকে সীমিত করে আনা যায়।
বাস্তবতা হলো আইপিএস তৈরির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের যে ধারণাটা কাজ করেছে, সেটা হলো চীনের সাথে সম্পাদিত বিভিন্ন দেশের চুক্তিগুলো ‘অসম’ এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আর পশ্চিমাদের শর্তগুলো হলো সুসম ও স্বচ্ছ। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আইপিএস নীতি পত্রে বলা হয়েছে যে, চীনের সাথে চুক্তিগুলো “একপক্ষীয় ও অস্বচ্ছ”, যেগুলো “অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়” এবং এগুলো “চীনের আগ্রাসী আচরণের ফল, যেটা মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিয়ে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ইউরোপসহ সারা বিশ্বেই প্রয়োগ করা হচ্ছে”।
অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আইপিএস নীতি পত্রে চীনকে ‘সংশোধনবাদী শক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ‘ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে আধিপত্য’ অর্জনের চেষ্টা করছে।
চীনকে এইভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে বিকল্প উৎস হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে, যাতে বাংলাদেশসহ ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের দেশগুলোকে চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যায়।
চীন অন্যদিকে নিশ্চিতভাবেই এই ঘটনাপ্রবাহের প্রতিক্রিয়া জানাবে। চীনের হিসেবে, এই দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত সামরিক সহযোগিতা চুক্তি হলে ভবিষ্যতে এই দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে পারে। সেটা হলো যুক্তরাষ্ট্র চীনের কর্মকাণ্ডের উপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখারই শুধু সুযোগ পাবে না, বরং সেটাকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়েও আনতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে আরও বেশি সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়িয়ে এই ঘাঁটিগুলোর ডিজাইন করা হচ্ছে এবং এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে চীন আমেরিকান সামরিক শক্তিকে অকার্যকর করে দ্রুত কোন যুদ্ধে জিততে না পারে।
ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে কমান্ডার স্ট্র্যাটেজিক এনগেজমেন্টের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিসের মতে, ২০১৪ সালে ফিলিপাইন্সের সাথে যে ইনহ্যান্সড ডিফেন্স কোঅপারেশান এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়, আর মূল উদ্দেশ্য ছিল ফিলিপাইন্সের হাতে নতুন সরঞ্জামাদি তুলে দেয়া যাতে তারা ‘চীনের নৌ আগ্রাসন’কে রুখতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার সম্প্রতি বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলের ঘাঁটিগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে চায়।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার বিষয়টির সাথে অবশ্য এই মোতায়েনের বিষয়টি জড়িত নয়। এখানে সম্ভবত সম্পূর্ণ নতুন সেনাদের মোতায়েন করা হবে এবং উপদেষ্টাদের পুরোপুরি নতুন কনসাইনমেন্ট মোতায়েন করা হবে, যারা এই অঞ্চলের সাথে পরিচিত।
তবে, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার কারণে ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য পররাষ্ট্র নীতির চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এবং এই দেশগুলোকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার উপায় খুঁজতে হবে।
আরএএনডি কর্পোরেশানের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই প্রতিযোগিতাকে ‘কোল্ড ওয়্যার ২.০’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। যে সব দেশের সাথে সামরিক চুক্তি করছে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের চ্যালেঞ্জ হবে মার্কিন বর্ধিত সামরিক কর্মকাণ্ডের কাছে যাতে তারা দাবার ঘুঁটি হয়ে না পড়ে।
পররাষ্ট্র নীতি ও পররাষ্ট্র সম্পর্কে বৈচিত্র আনার মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সেটার সাথে সাথে সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জও সামনে আসে, যেটা অধিকাংশ সময়েই খুব একটা সফলভাবে করা হয় না।



এ পাতার আরও খবর

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের রেকর্ড বৃদ্ধি: ব্যাংক খাতে সংকট বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের রেকর্ড বৃদ্ধি: ব্যাংক খাতে সংকট
লন্ডনে বিলাস, দেশে ভোটের প্রতারণা - ইউনূসের ভণ্ড রাজনীতির মুখোশ উন্মোচন কসিম উদ্দিনের বয়ান সমাচার লন্ডনে বিলাস, দেশে ভোটের প্রতারণা - ইউনূসের ভণ্ড রাজনীতির মুখোশ উন্মোচন কসিম উদ্দিনের বয়ান সমাচার
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্ণর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে ঘুষ, চক্রান্ত ও অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ! বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্ণর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে ঘুষ, চক্রান্ত ও অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ!
ইউনূসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক  অপরাধ আদালতে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি ইউনূসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি
ড. ইউনূসের লন্ডন সফর: রাষ্ট্রীয় খরচে ব্যক্তিগত সম্মাননা, জনমনে প্রশ্ন ড. ইউনূসের লন্ডন সফর: রাষ্ট্রীয় খরচে ব্যক্তিগত সম্মাননা, জনমনে প্রশ্ন
সন্দেহজনক লেনদেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের  উত্তর না পাওয়াতে আমার জিজ্ঞাসা?  সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল সন্দেহজনক লেনদেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর না পাওয়াতে আমার জিজ্ঞাসা? সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল
সন্দেহজনক লেনদেন ইউনূসের নাম পরিষ্কার করে বললেন না বি এফ ইইউ প্রধান সন্দেহজনক লেনদেন ইউনূসের নাম পরিষ্কার করে বললেন না বি এফ ইইউ প্রধান
নূর আলী ও ইউনিক গ্রুপ: কর্পোরেট ক্ষমতার ছায়ায় দুর্নীতির অভিযোগ নূর আলী ও ইউনিক গ্রুপ: কর্পোরেট ক্ষমতার ছায়ায় দুর্নীতির অভিযোগ
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের নতুন প্রস্তাবিত শাসন ব্যবস্থা সরকার ব্যবস্থা সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের নতুন প্রস্তাবিত শাসন ব্যবস্থা সরকার ব্যবস্থা
প্রস্তাবিত বাজেটেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সংস্কারের বিপরীতে চলছে অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি প্রস্তাবিত বাজেটেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সংস্কারের বিপরীতে চলছে অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)