শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » অপরাধ | ই-পেপার | তথ্য-প্রযুক্তি | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » সাতই মার্চের জনসভা ঘিরে যৌন হয়রানি
প্রথম পাতা » অপরাধ | ই-পেপার | তথ্য-প্রযুক্তি | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » সাতই মার্চের জনসভা ঘিরে যৌন হয়রানি
৬১২ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ ২০১৮
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সাতই মার্চের জনসভা ঘিরে যৌন হয়রানি

 অভিযোগ জানাতে কেন ফেসবুক বেছে নিলেন বাংলাদেশের নারীরা?

---বাংলামটর মোড়ে শ্লীলতাহানির বর্ণনা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন একজন ভুক্তভোগী সাতই মার্চ আওয়ামী লীগের ঢাকার জনসভা কেন্দ্র করে অনেক নারী যৌন হয়রানি ও অশ্লীল মন্তব্যের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।

তাদের সবাই এই অভিযোগ করেছেন ফেসবুকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত পথে প্রতিকার না পাওয়া হতাশা থেকেই নিজেদের ক্ষোভ জানাতে তারা ফেসবুকে আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তার বার্ষিকী উদযাপনে বুধবার ঢাকায় একটি জনসভার আয়োজন করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

যৌন হয়রানির শিকার নারীরা অভিযোগ করেছেন, সেই সমাবেশে আসা লোকজন তাদের অশ্লীল মন্তব্য করেছেন, শারীরিকভাবেও হেনস্থা করেছেন।

ফেসবুকে আরেকজন নারীর স্ট্যাটাস
যে স্ট্যাটাসটি সবার আগে নজরে পড়েছে, সেটি লিখেছেন ঢাকার একজন কলেজ ছাত্রী।

তিনি লিখেছেন, ”শান্তিনগর মোড়ে একঘণ্টা দাড়ায় থেকেও কোন বাস পাইলাম না। হেটে গেলাম বাংলামটর। বাংলামটর যাইতেই মিছিলের হাতে পড়লাম। প্রায় ১৫-২০জন আমাকে ঘিরে দাড়াইলো। ব্যস! যা হওয়ার তাকে তাই। কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়েকে হ্যারাস করতেসে এটা কেউকেউ ভিডিও করার চেষ্টা করতেছে। আমার কলেজ ড্রেসের বোমাত ছিঁড়ে গেছে, ওড়নার জায়গাটা খুলে ঝুলতেছে। ওরা আমাকে থাপড়াইসে। আমার শরীরে হাত দিসে। আমার দুইটা হাত এতগুলা হাত থেকে নিজের শরীরটাকে বাঁচাইতে পারে নাই।”

এই স্ট্যাটাসটি অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর তিনি স্ট্যাটাসটি “অনলি মি” করে নিজের প্রোফাইলে লিখেছেন, “আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। পোস্টটা অনলি মি করেছি কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দেইনি।”

Image caption বুধবার ঢাকার একজন নারীর ফেসবুক স্ট্যাটাস
আরেকজন লিখেছেন, ”হল থেকে বের হয়ে কোন রিক্সা পাইনি। কেউ শাহবাগ যাবে না। হেটে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসতে হয়েছে। আর পুরোটা রাস্তা জুড়ে ৭ মার্চ পালন করা দেশভক্ত সোনার ছেলেরা একা মেয়ে পেয়ে ইচ্ছেমতো টিজ করছে। নোংরা কথা থেকে শুরু করে যেভাবে পারছে টিজ করছে।”

ভাইরাল হওয়া ভুক্তভোগী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে আরেক নারী লিখেছেন, ”আরো আছে। আজকে ডাক্তার দেখাতে আবার ল্যাব এইড যাব। একটা রিকশাও যাবে না। অনেকক্ষণ দাঁড়ায় থেকে একটা রিকশায় উঠলাম। …..রিকশা থামিয়ে শার্ট পইরা মাথায় কাপড় কেন জাতীয় টিজ শুনতে হইসে। ….উল্লেখ্য আমার মাও সাথে ছিল।”

একজন সুন্দর পরিবেশ হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, ”হাই সেক্সি, নিবা”” ক্যাম্পাসের জয় বাংলা মিছিল থেকে ভেসে আসা কিছু শব্দ এবং আমি বিরক্ত, হতভম্ব, উদ্বিগ্ন”.

Image caption একজনের স্ট্যাটাস, ‘আজ যে আমি স্বাভাবিক অবস্থায় বাসায় ফিরতে পারবো জানতাম না
একজনের স্ট্যাটাস, ”আজ যে আমি স্বাভাবিক অবস্থায় বাসায় ফিরতে পারবো জানতাম না। এতগুলো হায়েনার চোখ উপেক্ষা করে সাইন্স ল্যাব থেকে কাকরাইল এর জার্নি আমার জন্য কম কষ্টের ছিলো না তাও পুরো পথ হেটে, তবে কিছু কিছু হায়েনার চোখের ভাসা দেখে কেঁদে দিবোই ভাবছিলাম।”

তাদের এসব স্ট্যাটাস বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই এর বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেছেন।

Image caption বুধবার ঢাকার রাস্তার অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক নারীর স্ট্যাটাস অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ”৭১ সালের ৭ই মার্চ আর ১৮ সালের ৭ই মার্চে কতো তফাৎ! অনেকগুলো নারী নির্যাতনের খবর দেখলাম ফেসবুকে। ১০টি নির্যাতনের খবর যদি ফেসবুক পর্যন্ত আসে তবে এই সমাজ ব্যবস্থার চাপে আর ১শটি নারী নির্যাতনের খবর যে প্রকাশ্যে আসবে না সেটা বলাই বাহুল্য। রাস্তায় রাস্তায় এই হায়েনাদের লোলুপ নির্যাতন আর মাঠ-স্টেডিয়াম ভাড়া করে হাফন্যাংটো লোকদের নাঁচগান- ৭ই মার্চ উৎযাপনের নামে কী বীভৎসতা!”

এর আগে ২০১৫ সালে নববর্ষের আয়োজনে অনেক নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় তদন্ত করে একজনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিয়েছিল পুলিশ। সেই ঘটনারও প্রথম অভিযোগ ওঠে ফেসবুকে।

Image caption অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ৭১ সালের ৭ই মার্চ আর ১৮ সালের ৭ই মার্চে কতো তফাৎ
কেন এ ধরণের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে এই নারীরা তাদের প্রতিবাদ জানাতে ফেসবুক বেছে নিলেন?

আইন ও শালিস কেন্দ্রের কর্মকর্তা নীনা গোস্বামী বলছেন, ”কোন ধরণের প্রতিকার পাওয়া যাবে না, এই হতাশা থেকেই আগে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যায় না। কারণ ধরুন পহেলা বৈশাখের কথা সবার মনে আছে, আমরা কিছুই বের করা করতে পারিনি। যারা অভিযোগ করবেন, তাদের তো আগে আশ্বস্ত হতে হবে যে আমি এর বিচার পাবো। কিন্তু এরকম ঘটনার তো কোন বিচারই হয়না।”

”সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন থাকে। যারা লিখেছেন, তারা নিজের ভেতরের একটি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই লিখেছেন যে, আর কোথাও না হলেও, ফেসবুকে আমি আমার ক্ষোভের কথাটা জানাই।”

এ ধরণের ঘটনাগুলোয় কারো বিচার হয়েছে, বা শাস্তি হয়েছে, এরকম কোন ঘটনার উদাহরণও তাদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন আইন ও শালিস কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা।

কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে মেয়েদের হেনস্থা করার পেছনে কি মানসিকতা কাজ করে? কেন একদল মানুষ এভাবে ভিড়ের সুযোগে মেয়েদের যৌন হয়রানি করে?

সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন বলছেন, মেয়েরা যে আগে গৃহবন্দী থাকতো, এখন যে থাকে না, এখন যে বাইরে আসছে, অনেকের মানসিকতায় সেই পরিবর্তনটা আসেনি এখনো। মেয়েদের তারা পাবলিক প্লেসে দেখতে চায়না। তারা তাকে পুরোপুরি মানুষ হিসাবে দেখতে পারছে না। এই বিকৃত মানসিকতার লোকজন ওত পেতে থাকে, কখন নারীদের হেনস্থা করা যাবে।

তিনি বলছেন, মেয়েরা আগে এ ধরণের সমাবেশে কম আসতো। এখন তারা আসতে শুরু করেছে আর একদল সেটাতেই বাধা দিতে চায়। এ ধরণের মবের কোন বিচার না হওয়ায় এসব অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তাই এ ধরণের অপরাধ আবারো ঘটায়।

Image caption বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ”ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ এর অনুষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা কিংবা গল্পের কথা শুনা যাচ্ছে। সত্য মিথ্যা কতটুকু জানিনা। হয়তো শিগগিরই তা উদঘাটিত হবে।
ফেসবুকের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ”ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ এর অনুষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা কিংবা গল্পের কথা শুনা যাচ্ছে। সত্য মিথ্যা কতটুকু জানিনা। হয়তো শিগগিরই তা উদঘাটিত হবে। উল্লেখিত ঘটনার আসে পাশে সবখানেই সিসি ক্যামেরা আছে। সত্যিই ঘটনা ঘটে থাকলে কারা কারা দায়ী এবং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কি তা খুঁজে বের করা কঠিন কিছু হবেনা। না ঘটলেও হয়তো রটনার রহস্য উদঘাটিত হবে। উত্তেজিত হয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে অপেক্ষা করাই ভালো।”

এসব অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, ঘটনার কয়েকটি ফুটেজ তাদের হাতে এসেছে। ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে, অপরাধী যে দলেরই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না।

বি বি সি



এ পাতার আরও খবর

কাশ্মীরে হামলার ১০ মিনিটের মাথায় মামলা! উঠছে ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’-এর অভিযোগ কাশ্মীরে হামলার ১০ মিনিটের মাথায় মামলা! উঠছে ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’-এর অভিযোগ
নারী সংস্কার কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি নারী সংস্কার কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি
পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত, আহত ৪ পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত, আহত ৪
ধর্মবিরোধী’ অভিযোগ তুলে পাঠাগার থেকে নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের বই নিয়ে গেলেন একদল যুবক ধর্মবিরোধী’ অভিযোগ তুলে পাঠাগার থেকে নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের বই নিয়ে গেলেন একদল যুবক
একই অঙ্গে বহুরূপ ছাগল চোর যুবলীগ নেতা হৃদয় কি আইনের উর্ধ্বে একই অঙ্গে বহুরূপ ছাগল চোর যুবলীগ নেতা হৃদয় কি আইনের উর্ধ্বে
বান্দরবানে বিএনপি নেতার অবৈধ কাঠবোঝাই ট্রাকসহ চালক আটক বান্দরবানে বিএনপি নেতার অবৈধ কাঠবোঝাই ট্রাকসহ চালক আটক
লাল্মনিরহাটের টোল প্লাজায় যুবদলের হামলায় আহত পাঁচ, ১৪ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ লাল্মনিরহাটের টোল প্লাজায় যুবদলের হামলায় আহত পাঁচ, ১৪ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ
মেহেরপুরে শি’শু ব’লাৎকারের অভিযোগে একজনকে গণধোলাই মেহেরপুরে শি’শু ব’লাৎকারের অভিযোগে একজনকে গণধোলাই
গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় : আইন উপদেষ্ গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় : আইন উপদেষ্
শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)