
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্যাংক-বীমা | রাজনীতি » ‘আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিলো’-এইচএসবিসি ব্যাংক কর্মীদের আর্তনাদ!
‘আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিলো’-এইচএসবিসি ব্যাংক কর্মীদের আর্তনাদ!
পক্ষকাল ডেস্ক
বিশ্বখ্যাত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসির প্রায় তিনশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণার পর বাধ্যতামূলক অবসরকালীন যে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হয়েও এইচএসবিসি বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যূনতম ক্ষতিপূরণ দিয়ে কর্মীদের বিদায় করতে চাইছে, যা তাদের প্রতি চরম উদাসীনতার পরিচায়ক।
এইচএসবিসি
ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে ব্যাংকের নেওয়া মোটা অংকের ঋণ। অনেক কর্মকর্তা ফ্ল্যাট বা বাড়ি করার জন্য কম সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। চাকরি চলে গেলে সেই বিশাল অংকের ঋণ কীভাবে শোধ করবেন, তা নিয়ে তারা এখন দিশেহারা। এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিলো, আমরা কীভাবে নতুন চাকরি খুঁজব যখন আমাদের বরখাস্তের খবর আগে থেকেই প্রকাশ করা হয়েছে?’ এখন পর্যন্ত ২২৭ জনের বেশি কর্মীকে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা অতীতের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন তারা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৩০ জুলাই। ওই দিন ভোরে ই-মেইলের মাধ্যমে কর্মীরা রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধের খবর পান। এরপর এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব-উর-রহমানের নেতৃত্বে একটি অভ্যন্তরীণ সভা হলেও তা কর্মীদের উদ্বেগ কমাতে পারেনি। বরং গ্রাহকদের আমানত ফেরত বা কর্মীদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা না থাকায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। ব্যাংকটি জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরনো গ্রাহকদের সঙ্গে কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার পরিকল্পনা থাকলেও এই প্রক্রিয়া আগামী মার্চ পর্যন্ত চলতে পারে।
কর্মীদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ আরও জোরালো হয় অতীতের ঘটনার পর্যালোচনায়। এই একই ব্যাংক ২০১১-১২ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১০০ কর্মীকে ছাঁটাই করার সময় দুটি বিকল্প দিয়েছিল-এইচএসবিসির অন্য কোনো বিভাগে চাকরি অথবা পাঁচ বছরের বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ। এমনকি গত বছরের শেষে শ্রীলঙ্কায় রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধ করার সময়ও কর্মীদের সাত বছরের একটি প্যাকেজ দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল চার বছরের বেতন ও তিন বছরের চাকরির নিশ্চয়তা। ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে দেওয়া প্রস্তাবটি বৈশ্বিক মানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
জানা গেছে, বাংলাদেশি কর্মীদের এই ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ চূড়ান্ত করার দায়িত্বে ছিলেন ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান নাজিকা ইমাম, সিএফও জিগনেস চেতন রুপারেল, সিআরও চন্দ্র বাল গোস্বামী এবং সিইও দেবেশ মাথুর। এদিকে, এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মাহবুব-উর-রহমান পুরো বিষয়টি এইচএসবিসি ইন্ডিয়ার সিইও হিতেন্দ্র দেবের কাছে রিপোর্ট করেন।
এ বিষয়ে মাহবুব-উর-রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে জনসংযোগ বিভাগও কর্মীদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, ‘রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমে ছয় থেকে আট মাসে সম্পন্ন করা হবে। আমরা কর্মীদের প্রদেয় সুবিধাদি বা ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করি না।’