
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | ব্রেকিং নিউজ » কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য ফাঁস অ্যামনেস্টির
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য ফাঁস অ্যামনেস্টির
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পূর্ব গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সংঘাতে লিপ্ত বিভিন্ন পক্ষ বেসামরিক মানুষের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এর মধ্যে রয়েছে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নির্বিচার হত্যা ও অপহরণের মতো ভয়াবহ সব অপরাধ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের লোগো
মানবাধিকার সংস্থাটি বুধবার প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ এক তদন্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এম২৩ বিদ্রোহী এবং সরকারপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠী ওয়াজালেন্দো-উভয় পক্ষই নারীদের সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছে এবং বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন চালিয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক টাইগেরে চাগুটা বলেছেন, বিবদমান পক্ষগুলোর নৃশংসতার কোনো সীমা নেই। প্রতিটি পক্ষই নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় বেসামরিক নাগরিকদের শাস্তি দিতে, ভয় দেখাতে এবং অপমান করতে এসব বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
পূর্ব কঙ্গোর সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এম২৩ বিদ্রোহীরা এই অঞ্চলের বিশাল একটি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। চলতি বছরের শুরুতে তারা গোমা ও বুকাভুর মতো প্রাদেশিক রাজধানীগুলোও দখল করে নেয়। জাতিসংঘ, কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসা এবং অন্যান্যরা প্রতিবেশী রুয়ান্ডাকে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থনের জন্য অভিযুক্ত করে আসছে, যদিও রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালি বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কঙ্গো সরকার বা এম২৩ বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে চাগুটা বলেছেন, রুয়ান্ডা এবং কঙ্গোকে অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা ৫৩ জনেরও বেশি ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এদের মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি, চিকিৎসাকর্মী এবং নাগরিক সমাজের সদস্যরাও রয়েছেন। এছাড়া এম২৩-এর আনুষ্ঠানিক বিবৃতি, অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রমাণ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে গোমা, বুকাভু, রুতশুরু, মাসিসি এবং কালেহে অঞ্চলে এসব ঘৃণ্য অপরাধের ঘটনা ঘটেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, সাক্ষাৎকার দেওয়া যৌন সহিংসতার শিকার ১৪ নারীর মধ্যে আটজন এম২৩ বিদ্রোহীদের দ্বারা এবং পাঁচজন ওয়াজালেন্দো যোদ্ধাদের হাতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অন্য একজন নারী কঙ্গোর সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বুকাভু শহরে শুধু বিয়াট্রিস নামে পরিচিত এক নারীকে ‘এম২৩-এর একটি সামরিক শিবিরে’ পাঁচজন বিদ্রোহী মিলে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
চাগুটা বলেন, ‘পূর্ব কঙ্গোর নারীদের জন্য কোনো স্থানই নিরাপদ নয়। তারা নিজেদের ঘরে, মাঠে অথবা আশ্রয় নেওয়া শিবিরে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। বিশ্বকে এখন অবশ্যই যথেষ্ট হয়েছে বলতে হবে। সংঘাতে লিপ্ত সব পক্ষকে অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের, যারা এই সংঘাতের সবচেয়ে বড় শিকার।’