
বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | স্বাস্থ্য ও আইন » অধিকার চাই, করুণা নয়: নারীর ক্ষমতায়নের মৌলিক প্রশ্ন
অধিকার চাই, করুণা নয়: নারীর ক্ষমতায়নের মৌলিক প্রশ্ন
মতামত -নীলা ইসরাফিলের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া.
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন দীর্ঘদিন ধরে পুরুষের “দয়া” বা “অনুগ্রহ” হিসেবে দেখা হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো, ক্ষমতায়ন কোনো অনুদান নয়; এটি সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে নারী-পুরুষের সমতা স্বীকৃত, ২৮(২) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসেবে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, আর ৪২(১) অনুচ্ছেদে প্রতিটি নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন ও ভোগ করার অধিকার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে নারীরা বিশেষ করে সম্পত্তির ক্ষেত্রে সমান ভাগ পান না। পরিবারিক ও সামাজিক কাঠামো এখনো নারীর সম্পত্তির অধিকার সীমিত করে রেখেছে, এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি স্পষ্ট। উদ্বেগের বিষয় হলো, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা অনেক সংগঠনও সম্পত্তির সমানাধিকারের প্রশ্নে প্রায়শই নীরব থাকে।
ক্ষমতায়নের অর্ধেক পথ
আজকের বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন প্রায়শই শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা রাজনৈতিক অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধ করে দেখা হয়। অথচ প্রকৃত ক্ষমতায়ন তখনই সম্ভব, যখন নারীরা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, বিশেষ করে সম্পত্তিতে সমান অধিকার ভোগ করবেন। বর্তমানে দেশের ৭৪% নারী কৃষিতে কাজ করলেও জমির মালিকানায় তাদের অংশীদারিত্ব মাত্র ৩-৫%। অর্থাৎ যারা ঘাম ঝরিয়ে জমিকে উর্বর করছে, তাদের অধিকারের স্বীকৃতি মাটিতেই অনুপস্থিত।
সহিংসতার শিকার নারী
অর্থনৈতিক বঞ্চনার পাশাপাশি নারীরা প্রতিদিন পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৭৫% নারী জীবনের কোনো না কোনো সময়ে সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন-স্বামীর হাতে গৃহে, জনসমক্ষে, কিংবা ডিজিটাল পরিসরে ব্ল্যাকমেইল, হুমকি ও অপমানের মাধ্যমে। এই নিয়মিত অপমান নারীর আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয় এবং সম্ভাবনাকে সীমিত করে। শুধু বক্তৃতা নয়, এখন প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ।
করণীয় পদক্ষেপ
১. সমান সম্পত্তির অধিকার কার্যকর করা
উত্তরাধিকার, দাখিলা ও মিউটেশনে নারীর সমান ভাগ আইনি বাধ্যবাধকতা হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে।
জমি ও সম্পত্তি হস্তান্তরে বৈষম্যমূলক শর্ত বাতিল করতে হবে।
২. সহিংসতা প্রতিরোধ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা
হাইকোর্টের ২০০৯ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি বাধ্যতামূলক করতে হবে।
গার্হস্থ্য সহিংসতার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল বা বিশেষ আদালত প্রয়োজন।
3. ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদার করা
নারীর বিরুদ্ধে অনলাইন হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল প্রতিরোধে সাইবার ইউনিটকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভুক্তভোগীর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত করতে হবে।
৪. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন
নারীকে “দয়া” বা “অবদানহীন” ভাবনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শিক্ষা ও সচেতনতা কর্মসূচি চালাতে হবে।
পাঠ্যবই, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিতে নারীকে সমান মর্যাদায় উপস্থাপন করতে হবে।
উপসংহার
নারীর ক্ষমতায়ন মানে কেবল কর্মসংস্থান বা শিক্ষার সুযোগ নয়; এটি সম্পত্তিতে সমান অধিকার, আর অপমান ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা। ক্ষমতায়ন কোনো করুণা নয়, এটি নারীর সাংবিধানিক অধিকার। তাই রাষ্ট্র, সমাজ ও নীতিনির্ধারকদের কাছে আজকের আহ্বান-নারীর ক্ষমতায়নকে মুখের বুলি থেকে নামিয়ে আনা হোক জীবনের বাস্তবতায়।
এখনই সময়-কথা নয়, কাজের।