
বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির নতুন জাগরণ: গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির নতুন জাগরণ: গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, বাংলাদেশ – বাংলাদেশের রাজনৈতিক জাগরণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবারও জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। ২০২৫ সালের ঐতিহাসিক ডাকসু নির্বাচন ঘিরে এই ক্যাম্পাসে যে লড়াই শুরু হয়েছে, তা কেবল ছাত্রনেতৃত্বের প্রতিযোগিতা নয়; বরং গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা এবং কর্তৃত্ববাদবিরোধী সংগ্রামের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বহুত্ববাদী প্যানেল
ভিপি পদপ্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি মেঘমল্লার জুবেল ঘোষণা দিয়েছেন একটি বহুত্ববাদী প্যানেলের, যেখানে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও রয়েছেন। ইমি বলেন,
“আমি শুরু থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল গঠন করা, যা বহুত্ববাদকে প্রতিনিধিত্ব করবে। গণমাধ্যম আমাদের বামপন্থী জোট হিসেবে উল্লেখ করছে, কিন্তু আমাদের অভিন্ন পরিচয় হলো— আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে এবং মানুষের সংগ্রামের পক্ষে। কোনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে আমরা ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে দেব না।”
এই প্যানেল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন এবং সাম্প্রতিক তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছে।
সংগ্রামী এক কণ্ঠের প্রত্যয়
এই নির্বাচনী মুহূর্তে নৈতিক শক্তি যোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও প্রবীণ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। আশির দশক থেকে শুরু করে টানা নয় বছরের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের একজন সক্রিয় ফ্রন্টলাইন কর্মী ছিলেন তিনি।
কাজল বলেন,
“আমি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়েছি, আর আমি কখনো থামিনি। আশির দশক থেকে আজ অবধি আমি সাধারণ মানুষের অধিকার, শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে, মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং কালা কানুনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছি। আমি যেখানে ছিলাম, সেখান থেকেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মানুষের মুক্তির সংগ্রাম চালিয়েছি। তখন অগ্রভাগে ছিলাম, এখনো আছি, সামনে থাকবও।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য
ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্রআন্দোলন—প্রতিটি পর্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল প্রতিরোধের প্রতীক।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শিকড় থেকে উঠে আসা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী—বিশেষত জামায়াত-শিবির—আবারও রাজনৈতিক মাটিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বহুত্ববাদী প্যানেল স্পষ্ট করেছে, এই শক্তিগুলিকে প্রতিহত করাই তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
ক্যাম্পাসের বাইরে জাতীয় গুরুত্ব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন প্রায়ই জাতীয় রাজনীতির গতিপথকে পূর্বাভাস দেয়। তাই এবারের নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।
ইমি মেঘমল্লার জুবেলের বার্তা স্পষ্ট: প্রতিরোধ, বহুত্ববাদ এবং অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রই টিকে থাকবে। স্বাধীন মতপ্রকাশ ও নাগরিক অধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন আজ জাতির প্রতিষ্ঠাকালীন মূল্যবোধ রক্ষার প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ