শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | বিশ্ব সংবাদ » সহিংসতার স্রোত: শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার মূলধারাকরণ
প্রথম পাতা » অপরাধ | বিশ্ব সংবাদ » সহিংসতার স্রোত: শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার মূলধারাকরণ
২৬ বার পঠিত
বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সহিংসতার স্রোত: শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার মূলধারাকরণ

---
সহিংসতার স্রোত: শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার মূলধারাকরণ
শফিকুল ইসলাম কাজল |
লন্ডন,  | জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ঘৃণার বিস্তার আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতা শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিকভাবে পুষ্ট প্রবণতায় রূপ নিয়েছে-যা পর্যবেক্ষকদের মতে “ঘৃণার মূলধারাকরণ” বা cynical mainstreaming of hate।

রাজনৈতিক রূপান্তরের ছায়া
২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণআন্দোলন ও ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে আসেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এই “গণতন্ত্রমুখী পুনর্জাগরণ”-এর পেছনে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ এক মানবাধিকার সংকট, বিশেষত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ (BHBCUC)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২,১৮৪টি সহিংস ঘটনা রেকর্ড হয়েছে, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায় ছিল প্রধান লক্ষ্য। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আরও ৯২টি ঘটনা ঘটেছে, যা সহিংসতার প্রবণতা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত দেয়।

রাজনীতি ও প্রতিশোধের ছায়া
বিশ্লেষকরা মনে করেন, হিন্দুদের ওপর হামলার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিশোধ। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সরকার পতনের পর সেই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরগুলোকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হয়েছে।
ঢাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. নুরুল কবির বলেন,
“এই সহিংসতা বিচ্ছিন্ন নয়। এটি পরিকল্পিত ও রাজনৈতিকভাবে চালিত-এক ধরনের কৌশল, যার লক্ষ্য হলো ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে দুর্বল করা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।”

উগ্রবাদের উত্থান ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা
রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগে উগ্রপন্থী ইসলামি সংগঠনগুলোর প্রভাব বাড়ছে। বিশেষত, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট Ansarullah Bangla Tigers-এর মতো গোষ্ঠীগুলো হিন্দুবিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের কিছু অঞ্চল, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে “হিন্দু বিতাড়ন” ও “ইসলামী ভূখণ্ড মুক্ত করার” নামে বক্তৃতা দেওয়া হচ্ছে।
জেমসটাউন ফাউন্ডেশন ও ইস্ট এশিয়া ফোরাম-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংগঠনগুলো ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়িয়ে একটি ভয়ানক সামাজিক বিভাজন তৈরি করছে।

সম্পত্তি দখল ও বাস্তুচ্যুতি
হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার একটি বড় কারণ হচ্ছে সম্পত্তি দখল। বহু হিন্দু পরিবারকে বাড়ি ও জমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ কেউ জোরপূর্বক উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন।
Eurasia Review-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭২% গ্রামীণ হিন্দু পরিবার মনে করে, সুযোগ পেলে তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করবে।

দায়মুক্তির সংস্কৃতি
এত বড় পরিসরের সহিংসতার পরও এখনো পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
Times of India-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ২,৪৪২টি ঘৃণাজনিত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা শাস্তির মুখ দেখেনি।
চট্টগ্রামের মানবাধিকার আইনজীবী রিনা পাল বলেন,
একটা দায়মুক্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে সাহস পান না, সাক্ষীরা হুমকির মুখে পড়েন, প্রশাসন নীরব থাকে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে বলা হয়, গত কয়েক মাসে ৭৫টিরও বেশি হিন্দু-বিরোধী হামলা হয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের হোম অফিস ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব ঘটনাকে “অত্যুক্তিপূর্ণ” বলে উল্লেখ করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, আন্তর্জাতিক সমাজ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় সহিংসতাকে উপেক্ষা করছে।

একটি গভীর সংকট: বাংলাদেশের বহুত্ববাদ কি টিকে থাকবে?
বাংলাদেশ দীর্ঘকাল ধরে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।
বিশ্লেষকরা একে শুধুই সহিংসতা নয়, বরং “ঘৃণার সাংগঠনিক সংস্থাপন” বলে অভিহিত করছেন-যেখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং প্রশাসনিক নীরবতা এক হয়ে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাচ্ছে।

এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ, আর বৃহত্তরভাবে দেশের ধর্মীয় সহনশীলতার ঐতিহ্য-এই মুহূর্তে এক সংকটকাল অতিক্রম করছে।
স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ, দোষীদের শাস্তি, এবং আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সহিংস প্রবণতা বন্ধ হবে না।


এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে Eurasia Review, Times of India, East Asia Forum, VOA News, ও Al Jazeera সহ একাধিক উৎসের ভিত্তিতে।



এ পাতার আরও খবর

বিচার না, প্রহসন: বাংলাদেশে রাজসাক্ষ্য, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি বিচার না, প্রহসন: বাংলাদেশে রাজসাক্ষ্য, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি
বিচার না, প্রহসন: বাংলাদেশে রাজসাক্ষ্য, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি বিচার না, প্রহসন: বাংলাদেশে রাজসাক্ষ্য, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি
এনসিপি’র বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপরাধের অভিযোগ: রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণের দাবি উঠছে এনসিপি’র বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপরাধের অভিযোগ: রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণের দাবি উঠছে
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা
গাজায় অনাহার: যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিন্দা, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশ্ন তুললেন মার্কিন সিনেটর ওয়েলচ গাজায় অনাহার: যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিন্দা, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশ্ন তুললেন মার্কিন সিনেটর ওয়েলচ
সিডনীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার লেনদেন! সিডনীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার লেনদেন!
বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা মারজুকের বিরুদ্ধে চাদাঁবাজি,মামলা বানিজ্য ও এক নারীকে এসিড নিক্ষেপের হুমকির অভিযোগ বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা মারজুকের বিরুদ্ধে চাদাঁবাজি,মামলা বানিজ্য ও এক নারীকে এসিড নিক্ষেপের হুমকির অভিযোগ
মতিঝিলে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি: ঝনা পিন্টিং প্রেসের মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায় যুবদল নেতার মতিঝিলে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি: ঝনা পিন্টিং প্রেসের মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায় যুবদল নেতার

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)