
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি » সারাদেশে সতর্কবার্তা: জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার
সারাদেশে সতর্কবার্তা: জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার
পক্ষকাল প্রতিবেদক | ২৯ জুলাই ২০২৫ | ঢাকা
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে দেশে সম্ভাব্য অস্থিরতা ও নৈরাজ্যের আশঙ্কায় গোটা দেশে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে ‘সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে।
চিঠিটি পাঠানো হয়েছে ডিএমপি কমিশনার, বিভাগীয় উপ-পুলিশ কমিশনার, সিটি এসবি এবং সব জেলা পুলিশ সুপারদের কাছে। নির্দেশনায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সন্দেহভাজনদের নজরদারি, এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসবির আশঙ্কা: উসকানিমূলক তৎপরতা
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী ওই সময়কালকে ঘিরে সংগঠিত প্রচারণার মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে।
এসবি চিঠিতে উল্লেখ করে,
“ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে বা উসকানির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা হতে পারে।”
এছাড়াও, দলটির ভার্চুয়াল স্কোয়াডের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া এবং এনক্রিপটেড প্ল্যাটফর্মে প্রচারণা চালিয়ে সাইবার সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।
নির্দেশনা ও প্রস্তুতি:
আঞ্চলিকভাবে রাজনৈতিক পরিবেশের সতর্ক পর্যবেক্ষণ
যানবাহন ও ব্যক্তির উপর বিশেষ নজরদারি
সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সাইবার গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি
প্রয়োজন হলে পূর্বপ্রস্তুত মোবাইল টিম মোতায়েনের নির্দেশ
সরকারের অবস্থান: কঠোর নজরদারি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন-
“ভেতরে ও বাইরে থেকে যেসব অপচেষ্টা চলছে, প্রশাসন তা নজরে রেখেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রেক্ষাপট: রাজনৈতিক উত্তেজনার ছায়া
জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিকে ঘিরে দেশের নানা প্রান্তে ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলছে। তবে নিষিদ্ধ দলগুলোর সম্ভাব্য ছায়া-তৎপরতা ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারি ও জবাবদিহির প্রশ্ন উঠছে।
দেশজুড়ে এই নিরাপত্তা প্রস্তুতি রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাসমূহ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এই সংবাদটিকে আপনি চাইলে দীর্ঘতর প্রতিবেদন, অনুসন্ধানভিত্তিক বিশ্লেষণ বা মতামত পাতায় রূপ দিতে পারেন। আমি প্রস্তুত আছি সহযোগিতায়। কীভাবে এগিয়ে যাব?
মতামত পাতায় মতামত | পক্ষকাল
নিরাপত্তা বনাম গণতন্ত্র: সতর্কবার্তার আড়ালে যা প্রশ্নে ওঠে
২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে কেন্দ্র করে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সারাদেশে যে সতর্কবার্তা দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশাসনিক প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু এই সতর্কতার ভাষা এবং অভিপ্রায় বিশ্লেষণ করলে উঠে আসে একাধিক গভীরতর রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রশ্ন।
সাবধানতাকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট হুমকির ভিত্তিতে গঠিত হতে হবে। সতর্কবার্তায় ‘নৈরাজ্য’ এবং ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মসূচি’কে একসাথে উল্লেখ করে সমাজিক প্রতিরোধকে অপরাধের মতো চিহ্নিত করার প্রবণতা দেখা যায়। এটি কী গণতন্ত্রে স্বীকৃত প্রতিবাদ ও মতপ্রকাশের অধিকারের সীমারেখা অতিক্রম করছে না?
প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক অবস্থান ও ভার্চুয়াল তৎপরতা রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠেছে-এটিই এসবির মূল বক্তব্য। কিন্তু এর বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, ছাত্র ও নাগরিক সমাজের অংশবিশেষ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে অতীতের অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্মৃতি রক্ষা এবং প্রতিবাদ করছেন। ইতিহাসের অগ্নিঝরা জুলাই একদিকে সরকার পরিবর্তনের স্মারক, অন্যদিকে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের চিহ্ন। এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির সংঘাতে রাষ্ট্র-নাগরিক সম্পর্কের পরীক্ষাও চলছে।
আইনশৃঙ্খলা না কি নিয়ন্ত্রণমূলক সতর্কতা?
এসবির চিঠিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনের ওপর নজরদারি, স্থাপনায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা, সাইবার গোয়েন্দা তৎপরতা ইত্যাদির নির্দেশ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে-এই নির্দেশনাগুলো কি নিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখে?
নিরাপত্তা সবার প্রয়োজন, কিন্তু যদি তা সংগঠিত মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ রুদ্ধ করে, তবে সেটি বিপজ্জনক। এমন সতর্কবার্তা যদি হয় রাজনৈতিক বিচারের হাতিয়ার, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর প্রশ্ন তুলে দেয়।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের করণীয় কী?
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে-
উপযুক্ত গোয়েন্দা বিশ্লেষণ ও তথ্যভিত্তিক প্রস্তুতি
নাগরিক স্বাধীনতা ও প্রতিবাদ অধিকারের নিশ্চয়তা
অতীতের ভুলের শিক্ষা গ্রহণ করে অংশগ্রহণমূলক ভবিষ্যৎ নির্মাণ
এবারের সতর্কতা শুধু নিরাপত্তা নয়, এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার একটি প্রতিচ্ছবি। যদি রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তবে তার উচিত সতর্কতার পাশাপাশি সংলাপ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা।