
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » » কারফিউ ভাঙার বর্ষপূর্তি: নারীর প্রতিবাদে রাষ্ট্রের দায়
কারফিউ ভাঙার বর্ষপূর্তি: নারীর প্রতিবাদে রাষ্ট্রের দায়
মতামত | পক্ষকাল
২৭ জুলাই ২০২৪-বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক সাহসী অধ্যায়। কারফিউ উপেক্ষা করে নারীরা পল্টন মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন, কণ্ঠে ছিল প্রতিবাদের গান, স্লোগানে ছিল প্রতিরোধের আগুন। এক বছর পর, সেই স্মৃতিকে ঘিরে শাহবাগে অনুষ্ঠিত হলো স্মরণ সমাবেশ। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়-এই এক বছরে কতটা বদলেছে রাষ্ট্রের মনোভাব?
সমাবেশে উঠে এসেছে তিনটি স্পষ্ট দাবি: ১️⃣ তথ্য আপা প্রকল্পের নারী কর্মীদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করা ২️⃣ কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার পুনঃতদন্ত ও বিচার ৩️⃣ পাহাড়-সমতলে নারীর ওপর চলমান নিপীড়নের বিচার এবং বম জনগোষ্ঠীর মুক্তি
সরকার বদলেছে, কাঠামো নয়
বক্তারা বলছেন, সরকার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু নিপীড়নের কাঠামো অটল। বিচারহীনতা, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য, এবং নারীর নিরাপত্তাহীনতা-সবই ফিরে এসেছে নতুন মোড়কে।
তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা দুই মাস ধরে রাজপথে, অথচ রাষ্ট্র তাদের সাত বছরের বেতন ফেরত দিচ্ছে না। কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার বিচার আজও ঝুলে আছে। পাহাড়ে ধর্ষণ, মব সন্ত্রাস, এবং কারাগারে মৃত্যুর মতো ঘটনা রাষ্ট্রীয় অবহেলার প্রতিচ্ছবি।
নারীর প্রতিবাদ: প্রতিরোধের ভাষা
এই সমাবেশ শুধু স্মরণ নয়, এটি প্রতিরোধের পুনরাবৃত্তি। বক্তারা বলছেন, “লড়াই থেমে থাকবে না।” শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত বর্ণাঢ্য মিছিল ছিল সেই বার্তার বহিঃপ্রকাশ।
নারীমুক্তি কেন্দ্র, ছাত্র ইউনিয়ন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন-সবাই এক কণ্ঠে বলেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।
রাষ্ট্রের করণীয় কী?
এই তিন দফা দাবি শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি নৈতিক ও গণতান্ত্রিক দায়।
তথ্য আপা কর্মীদের চাকরি রাজস্বভুক্ত না করা মানে নারীর শ্রমের অবমূল্যায়ন।
কল্পনা চাকমার মামলার বিচারহীনতা মানে রাষ্ট্রীয় দায় এড়ানো।
পাহাড়ে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার না হওয়া মানে সংখ্যালঘু নারীর অধিকার অস্বীকার।
রাষ্ট্র যদি সত্যিই গণতান্ত্রিক হয়, তবে তাকে এই দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এই প্রতিবাদ, এই দাবি, এই স্মরণ-সবই প্রমাণ করে, নারীর লড়াই ইতিহাসের প্রান্তে নয়, কেন্দ্রবিন্দুতে। পক্ষকাল এই সংগ্রামের পাশে থাকবে, প্রশ্ন তুলবে, এবং জবাব চাইবে।