শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » গণতন্ত্র ও বৈষম্যবিরোধী সমতার সংগ্রাম জারি থাক
প্রথম পাতা » রাজনীতি » গণতন্ত্র ও বৈষম্যবিরোধী সমতার সংগ্রাম জারি থাক
২২ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গণতন্ত্র ও বৈষম্যবিরোধী সমতার সংগ্রাম জারি থাক

---
যে কোনো অভ্যুত্থানের মূল্যায়ন করা কঠিন কাজ। অভ্যুত্থানকারীরা যাকে বিজয় মনে করেন, পরাজিতরা তাকে বিপর্যয় হিসেবে দেখেন। সাফল্যও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়ে থাকে। এসব ব্যাখ্যার কোনোটাই নিরপেক্ষ নয়; রাজনৈতিক মতাদর্শ, ক্ষমতা, স্বার্থ ও বয়ান দিয়ে এসব ব্যাখ্যা তৈরি হয়। গত আগস্টের অভ্যুত্থানও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। তবে অভ্যুত্থান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমরা কতগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নিতে পারি। প্রথমত, আন্দোলনকারী জনগণের অভিপ্রায়। দ্বিতীয়ত, অভ্যুত্থান-উত্তর সরকার গঠন ও শাসনের সঙ্গে অভ্যুত্থানের অভিপ্রায়ের সামঞ্জস্য এবং অভ্যুত্থানের পরিণতিতে কোনো ইতিবাচক রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও নতুন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে কিনা। এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর এখনই দেওয়া কঠিন। তবে, সরকার পরিবর্তন হলেও আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য বৈষম্য নিরসন হয়নি ও গণতন্ত্র আসেনি এবং তা অর্জনের কোনো পথরেখাও নেই। সুশাসন আসেনি; হানাহানির রাজনৈতিক সংস্কৃতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
অভ্যুত্থানের সময়কার মানুষের স্বপ্ন এবং পরবর্তী বাস্তব অর্জনের মধ্যে অতীতেও বড় ব্যবধান দেখা গেছে। সকল অভ্যুত্থানের একটা অধরা ও অসম্ভব বাস্তবতা থাকে। আলোচ্য অভ্যুত্থানও এর বাইরে নয়। অভ্যুত্থান এমন একটি মুহূর্ত তৈরি করেছিল, যেখানে সবকিছুই ‘সম্ভব’ বলে মনে হয়েছে। তখন এমন এক মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল, যখন সব নিয়ম ভেঙে যায় এবং ‘অসম্ভব’ এক রোমাঞ্চকর ও ভীতিকর মুহূর্তে তা ‘সম্ভব’ হয়ে ওঠে। অভ্যুত্থানের রাজনীতি ছিল অনির্দিষ্ট। আগে থেকে ঠিক করা কর্মসূচির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়নি আন্দোলন। ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ১৯৭১ সালের জনগণের আকাঙ্ক্ষা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে পূরণ হয়নি। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানকে শাসক শ্রেণি লোপাট করেছে। তাই বলে ১৯৬৯, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৯০-এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থান ভুল ছিল, বলা চলে না। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানকেও বিচার করতে হবে। নইলে আমরা জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী রেজিম চেঞ্জ ও মার্কিন ষড়যন্ত্রতত্ত্বের আওয়ামী বয়ানের আগ্রাসনে পড়ব।
এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমতায় বসানো হয়। ক্ষমতারোহণের পর বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি কিছুই করেননি। তাঁর বাজেটে দরিদ্র মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কিছুই নেই। এই সরকারের সময়ে চরম দারিদ্র্য ৭ দশমিক ৭ থেকে ৯ দশমিক ৩ হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে চরম দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়েছে। আয় বৈষম্যও বেড়েছে। ওপরের দিকের ৫ শতাংশ জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশ আয় দখল করে নিয়েছে। বৈষম্য নিরসনে কোনো বাস্তব উদ্যোগ না নিয়ে কেবল বৈষম্য বিরোধিতার স্লোগান ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই না। এই আমলে রাজপথে বকেয়া বেতনের দাবি করায় শ্রমিকদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আদিবাসীদের ওপর হামলা হয়েছে। শতাধিক মাজার ভাঙা হয়েছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে নারীরা সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ ও বৈষম্যের শিকার। শুল্ক বাণিজ্য চুক্তির নামে মার্কিনিদের কাছে দেশের নিরাপত্তা বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকার মবতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিয়েছে। সাধারণ মানুষকে বাইরে রেখে এলিট সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। তারা দেশকে একটি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের দিকে নিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দিয়ে তাক ভরে তুলেছে। যেমন শ্রম কমিশন ও নারী কমিশন প্রতিবেদন। সর্বজনীন নিম্নতর মজুরি, ডিজিটাল শ্রমিক নিবন্ধন ও নিয়োগপত্র দিতে সংবিধান সংস্কারের দরকার পড়ে না। এর কিছু না করায় এসব এখন খেরোখাতায় পরিণত। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন শক্তির উদ্বোধন হয়েছিল, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নিজেই তাকে ধ্বংস করেছে। তারা কেবল কোনো সুস্পষ্ট রাজনীতি দিতেই ব্যর্থ হয়নি; ধর্মীয় ডানপন্থিদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে গণঅভ্যুত্থানের ফসল তাদের গোলায় তুলে দিয়েছে। হুমকিধমকি, হানাহানি ও হামলা ছাড়া তারা কোনো ইতিবাচক রাজনীতি গড়ে তুলতে পারেনি। নারীর সমঅধিকারের বিরোধিতা, শ্রমিকদের বিষয়ে চুপ থাকা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে তাদের কোনো কথা নেই। আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা এবং সাধারণ দরিদ্র মানুষের অবস্থার পরিবর্তনে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। বৈষম্য নিরসনে তাদের কোনো কর্মসূচি নেই। মোট কথা, তারা পরিবর্তনের জন্য সমাজের মধ্যে যে অনুরণন ও স্বপ্ন সঞ্চার করতে হয়, সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আফসোস, তরুণরা প্রচলিত লুটেরা দলগুলোর বাইরে নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের উত্থান ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনীতি এখন ওপরতলার লোকদের পার্লামেন্ট ও সংবিধান ঠিকঠাক করা নিয়েই ব্যস্ত। তথাকথিত বামপন্থিরাও এ কাজে শামিল হয়েছে।
এই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় শক্তি ও দুর্বলতা হলো এর কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনীতি ছিল না। ফলে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সবাই দ্রুত এক হতে পেরেছিল। এই উন্মুক্ততাই অভ্যুত্থান-উত্তরকালে তার দুর্বল দিক হিসেবে দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা না থাকায় তা এখন অনির্দিষ্ট যাত্রায় পথ হারিয়েছে। ছাত্রদের তেমন কোনো সংগঠিত শক্তি না থাকায় অভ্যুত্থান-উত্তর ঘটনাপ্রবাহের ওপর তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন কেবল নয়, তাদের ওপর মানুষের আস্থাও ক্ষয়ে গেছে।
এখানকার পুরো আর্থসামাজিক ব্যবস্থাই লুটেরা পুঁজিবাদী ও ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর। এটি সংস্কারের অতীত। সমাজের গভীরে যে সংকট তার সুরাহা না করে ওপরতলার কাগুজে সংস্কার কোনো কাজে দেবে বলে মনে হয় না। এই পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে সমতাভিত্তিক নতুন সমাজ-অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। দেশের নানা সংকট আছে; সবচেয়ে বড় সংকট হলো এই সংকট মোকাবিলা করার রাজনীতি ও দল নেই। অতএব, গণতন্ত্র ও বৈষম্যবিরোধী সমতার সংগ্রাম জারি রাখুন। জুলাই অভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে ধারণ করে অভ্যুত্থানের বিপরীত যাত্রাকে মোকাবিলা করতে হবে। বহু জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতনে তাৎক্ষণিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা মোকাবিলা ও ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তন নির্ভর করবে এই অভিযাত্রায় জনগণ, বিশেষত মেহনতি মানুষের অংশগ্রহণ ও লুটেরা ব্যবস্থা পরিবর্তনের নতুন রাজনীতি গড়ে তোলার ওপর।
আখতার সোবহান মাসরুর
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫
ড. আখতার সোবহান মাসরুর: লেখক ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা

সুত্র ঃ সমকাল



এ পাতার আরও খবর

নির্বাচনই স্বাভাবিকতার একমাত্র পথ: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সর্বজনীন ঐক্য প্রয়োজন নির্বাচনই স্বাভাবিকতার একমাত্র পথ: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সর্বজনীন ঐক্য প্রয়োজন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগকে ‘মিথ’ বললেন সাবেক কূটনীতিক জন ড্যানিলুইৎজ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগকে ‘মিথ’ বললেন সাবেক কূটনীতিক জন ড্যানিলুইৎজ
কারফিউ ভাঙার বর্ষপূর্তি: নারীর প্রতিবাদে রাষ্ট্রের দায় কারফিউ ভাঙার বর্ষপূর্তি: নারীর প্রতিবাদে রাষ্ট্রের দায়
সারাদেশে সতর্কবার্তা: জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার সারাদেশে সতর্কবার্তা: জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার
ফেনী সীমান্তে বিএসএফের গু/লি/তে দুই বাংলাদেশির ঝরলো প্রাণ, একজন আহত। ফেনী সীমান্তে বিএসএফের গু/লি/তে দুই বাংলাদেশির ঝরলো প্রাণ, একজন আহত।
সিডনিতেও উপদেষ্টা মাহফুজের সাড়ে ছয় কোটি টাকার  কমিশন কেলেঙ্কারি সিডনিতেও উপদেষ্টা মাহফুজের সাড়ে ছয় কোটি টাকার কমিশন কেলেঙ্কারি
“এনসিপি: এক বিপজ্জনক রাজনৈতিক বিভ্রম” “এনসিপি: এক বিপজ্জনক রাজনৈতিক বিভ্রম”
অস্ত্র হ্যান্ডেল আর ইতিহাসের সুবিধাবাদ: পাটওয়ারীর অর্ধসত্য ও জবাবদিহির ফাঁকি অস্ত্র হ্যান্ডেল আর ইতিহাসের সুবিধাবাদ: পাটওয়ারীর অর্ধসত্য ও জবাবদিহির ফাঁকি
বাংলাদেশ সরকার বোয়িং থেকে ২৫টি বিমান কিনার অর্ডার দিয়েছেন, কমিশন বানিজ্য বাংলাদেশ সরকার বোয়িং থেকে ২৫টি বিমান কিনার অর্ডার দিয়েছেন, কমিশন বানিজ্য

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)