
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর | রাজনীতি » উত্তাল গোপালগঞ্জ: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর কারফিউর নিস্তব্ধতা
উত্তাল গোপালগঞ্জ: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর কারফিউর নিস্তব্ধতা
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ
গোপালগঞ্জে দিনভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার পর পুরো জেলায় সান্ধ্য আইন জারি করেছে সরকার। আজ রাত ৮টা থেকে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই আইন বলবৎ থাকবে। আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) অভিযুক্ত কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ছবি - সংগৃহীত
আজ সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার তথ্য শাখা থেকে এই সান্ধ্য আইন জারির ঘোষণা দেওয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সেনা পাহারায় শহর ছাড়তে হয়।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন আবু সায়ীদ মো. ফারুক জানান, আজকের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। তিনি গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের বরাত দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন-গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পোস্ট অফিস মোড়ের বাসিন্দা দীপ্ত সাহা, থানা পাড়ার রমজান কাজী ও সোহেল এবং আরপাড়ার ভেড়ার বাজারের ইমন। সিভিল সার্জন তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জিতেশ বিশ্বাস সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিশ্চিত করেন যে, দীপ্ত সাহা ও রমজান কাজীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তাঁদের গুলি করা হয়েছিল।’ তিনি আরও জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরও নয়জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং তাঁদের অস্ত্রোপচার চলছে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ বিকেলে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীরা সমাবেশের জন্য জড়ো হলে তাঁরা হামলার শিকার হন। অভিযোগ উঠেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যরা এই হামলা চালায়। ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বিকেল ৫টার দিকে এলাকায় চার প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়।
এর আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে লাঠিসোঁটা হাতে ২০০-৩০০ জন স্থানীয় ব্যক্তি এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। তারা সমাবেশের আগেই মঞ্চের শব্দযন্ত্র ও চেয়ার ভাঙচুর করে এবং দলীয় কর্মীদের ওপর চড়াও হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সমর্থক। তারা আরও জানান, বিশৃঙ্খলার সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমা (ককটেল) বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা যোগ করেন, হামলার সময় মঞ্চের কাছে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দ্রুত আদালত চত্বরের দিকে পিছু হটেন এবং এনসিপির নেতা-কর্মীরাও ঘটনাস্থল থেকে সরে যান।
সমাবেশস্থলে হামলার আগেও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় পৃথক ঘটনায় দুর্বৃত্তরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলে জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এনসিপির ‘দেশ গঠনে জুলাই মার্চ’ কর্মসূচির ঘিরে দেশব্যাপী চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল। দলটি গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের সব জেলায় এই কর্মসূচি পালন করে আসছে। গতকাল নিজেদের যাচাইকৃত ফেসবুক পাতায় এনসিপি ‘১৬ জুলাই: চলো গোপালগঞ্জ’ শিরোনামে আজকের এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল।