
বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » ঘোষণার পর আবু সাঈদ দিবস বাতিল করায় পরিবারের আক্ষেপ
ঘোষণার পর আবু সাঈদ দিবস বাতিল করায় পরিবারের আক্ষেপ
রেখা মনি ব্যুরো প্রধান রংপুর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের নামে কোনো দিবস নথাকায় আক্ষেপ জানান তার বড় ভাই আবু হোসেন।
মঙ্গলবার(১জুলাই)সকালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি শুরুর আগে রংপুরের পীরগঞ্জে পরিবারের পক্ষ থেকে এই আক্ষেপের কথা জানান আবু হোসেন।
আবু হোসেন বলেন, ১৬ জুলাই নিয়ে নাটক করা হয়েছে। তারা যদি আগেই ঘোষণা দিতেন, ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ তাহলে আমাদের আপত্তির জায়গাটা কম থাকতো।কিš‘ ঘোষণা দিয়ে একজন আইকনিক শহীদের এই ধরনের অপমান আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই।
তিনি বলেন, যার অনুপ্রেরণা যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, তার জন্য একটা দিন রাখা হলো না। আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি অনেক দিবস পালন করা হয়েছে অনেক মানুষের নামে। যাদের জাতির জন্য এক পয়সারও উপকার ছিল না। কিš‘ শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটা ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণাতে সমস্যাটা কোথায় ছিল? আমরা যুগে যুগে তো দেখে আসছি। বিভিন্ন বিপ্লবের শহীদের বিভিন্নভাবে স্মরণ করা হয়।
গেল বছরের ১৬ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।
১৬ জুলাই ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ রাখার দাবি জানান আবু হোসেন বলেন, আমাদের দাবি, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ছিল আমরা এটা শহীদ আবু সাঈদ দিবসই চাই।
জুলাই শহীদ দিবস যেটা আছে, জুলাইয়ের যেকোনো দিন সেটা সরকার পালন করতে পারে। ১৬ জুলাই যার আত্মত্যাগে এত বড় বিপ্লব সংঘটিত হলো তাকে এভাবে অবহেলা করা আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে মেনে নিতে পারছি না।
১৬ জুলাই আবু সাঈদের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন একটা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। লোকজন আর ঘরে বসে থাকেনি, রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, জীবনের মায়া ত্যাগ করে।জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানুষের রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়া-এটার যে অনুপ্রেরণা, সেটা হচ্ছে আবু সাঈদ।
তিনি বলেন, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে সেটা শহীদ জুলাই দিবস করা হলো। তারা জুলাই শহীদ দিবস পালন করার আরও দিন পেতেন। এই রকম একজন বৈপ্লবিক শহীদ, যার আত্মত্যাগ যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, অন্যায়ের বির“দ্ধে লড়াই করার জন্য। তার জন্য কি ৩৬৫ দিন থেকে ১৬ জুলাই তার স্মরণে নির্ধারণ করা যেত না? তাকে স্মরণ করলে কি অন্য শহীদদের অপমান করা হতো। তার আত্মত্যাগ তো তাদের অনুপ্রাণিত করছে রাজ পথে নামার জন্য।
আবু হোসেন বলেন, বৈষম্যর জন্য সবাই লড়াই করলো, আদৌ রাষ্ট্রে কতটুকু বৈষম্য দূর হলো আমরা জানি না। আমাদের কাছে বোধগম্য নয় এখনো। বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়ে গেছে। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে শুধু নির্দিষ্ট একটা অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নেওয়া হয়েছে। রংপুর অঞ্চল থেকে আবু সাঈদ শহীদ হয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় অথচ রংপুর বিভাগ থেকে একজনও উপদেষ্টা নেই। এখানে কি কোনো যোগ্য লোক ছিলেন না? শুধু কি দক্ষিণ অঞ্চলের লোক যোগ্য?
আবু সাঈদের ভাই আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা আন্দোলনকারী ছিলেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাই উপদেষ্টা হলেন। কিন্তু শহীদ পরিবার থেকে কোনো প্রতিনিধি নেওয়া হলো না। শহীদ পরিবার সাড়ে ৮০০। তাদের মধ্যে কি কোনো যোগ্য লোক ছিল না? মনে হয়েছে যে, এখনো বৈষম্য পুরোপুরি দূর হচ্ছে না। আমরা চাই, এই দেশ বৈষম্যমুক্ত হয়ে গড়ে উঠুক।
অন্যদিকে গত বছরের পহেলা জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। যে আন্দোলনে আবু সাঈদসহ লাখ লাখ তরুণ যোগ দিয়েছিল। পরে সেই আন্দোলন গণবিস্ফোরণে রূপ নেয়। সেই সময় আবু সাঈদের মৃত্যু স্বৈরাচার পতনের ক্ষেত্রে ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনের কর্মসূচীর প্রথম দিনেই সহযোদ্ধা আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্যদিয়ে কর্মসূচী শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি, এসসিপি। এসময় গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয়ে জনগণকে সম্পৃক্ততার কথা বলেন তরুণ রাজনীতিকরা।
এক বছর আগে যাদের আহবানে সাড়া দিয়ে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা রাজপথ কাঁপিয়েছিলে, সেই ছাত্র নেতারা এলেন গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে প্রিয় সতীর্থ আবু সাঈদের কাছে। ততক্ষণে ঘুমিয়ে থাকা আবু সাঈদের কবরের পাশে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন বিভিন্ন রাজনৈনিতক দল ও সহযোদ্ধারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির)কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন,বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। আমরা ১৬ জুলাই ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। ঐ সময় শুনতে পাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। তখন গোটা বাংলাদেশ শোকে, দ্রোহে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই সময় আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনে অন্যদিকে মোড় নেয়।হাজারে লাখ তরুণ শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিবাদের বির“দ্ধে রাজপথে নেমে পড়ে। যার ফলশ্রæতিতে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়।
তিনি বলেন, আমরা জুলাই পদযাত্রার ঘোষণা করেছি এবং আজকে থেকে সেই পদযাত্রার শুর“ হয়ে গেছে। এই জুলাই পদযাত্রা দেশ গড়ার পদযাত্রা। আমরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা তার ব্যব¯’ার বিলোপ চেয়েছি। কিš‘ দেশ গঠনে যে উদ্যোম দরকার। সেই উদ্যোম নিয়ে রাষ্ট্র গঠনের জন্য আমাদের কাজ করা দরকার। রাষ্ট্র গঠনের জন্যই মূলত আমাদের জুলাই পদযাত্রা। যার মাধ্যমে সারাদেশে, ৬৪ জেলায় আমরা যাব। মানুষের সঙ্গে কথা বলব। তাদের কথা শুনবো। আবু সাঈদরা যে কারণে জীবন দিল, সেই স্বপ্ন সেই আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরবো। তাই আমরা পদযাত্রা শুরু করেছি রংপুরের পীরগঞ্জ শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।এর আগে সকাল সাড়ে আটটায় কবর জিয়ারত করেন রংপুর জেলা ও স্থানীয় জামায়াত।
গত বছর ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এরপর দেশব্যাপী আন্দোলন বেগবান হয়।একপর্যায়ে সেই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
০১.০৭.২০২৫