
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » মণিপুরে মার্কিন তৈরি অস্ত্র উদ্ধার, মিয়ানমার সংযোগের সন্দেহ
মণিপুরে মার্কিন তৈরি অস্ত্র উদ্ধার, মিয়ানমার সংযোগের সন্দেহ
ইম্ফল, ২৪ জুন ২০২৫: মণিপুরের ইম্ফল পূর্ব জেলায় একটি গোপন অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই অস্ত্রগুলো মিয়ানমার থেকে আসতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অভিযানে জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট (UNLF-P)-এর পাঁচজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন ‘লেফটেন্যান্ট কর্নেল’ পদমর্যাদার সদস্য।
অভিযানটি পরিচালনা করেন ইম্ফল পূর্ব জেলার পুলিশ সুপার রাকেশ বলওয়াল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে নংমেইবুম আয়ানপল্লি এলাকার লানচেনবা নংথোমবাম নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ঘিরে ফেলে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, অস্ত্রগুলো সে সিনাম সোমেন্দ্রো মেইতেই নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে পেয়েছে, যিনি UNLF-P-র সক্রিয় সদস্য এবং ১৯৯৫ সাল থেকে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
পরে সোমেন্দ্রোর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করে:
Smith & Wesson, Sig Sauer, Glock, Browning, Keltec ও Beretta ব্র্যান্ডের আগ্নেয়াস্ত্র
বিপুল পরিমাণ গুলি
তিনটি iPhone 16
একটি Baofeng ওয়্যারলেস হ্যান্ডসেট
পুলিশ জানিয়েছে, এই অস্ত্রগুলো মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বিদ্রোহী গোষ্ঠী যেমন Chin National Defence Force (CNDF), Kachin Independence Army (KIA) এবং Arakan Army-এর মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করতে পারে।
এছাড়াও, আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাদের মধ্যে একজন প্রভাবশালী মেইতেই রাজনীতিকের আত্মীয় বলে জানা গেছে। তদন্তকারীরা এখন এই অস্ত্র পাচার চক্রের রাজনৈতিক সংযোগ এবং মিয়ানমার ভিত্তিক উৎস সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত।
সূত্র: Northeast News প্রতিবেদন
মিয়ানমার-মণিপুর সীমান্ত: অস্ত্র পাচার ও নিরাপত্তা সংকটের গভীর বিশ্লেষণ
ভূগোল ও সীমান্ত বাস্তবতা
ভারতের মণিপুর রাজ্য মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় ৩৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। এই সীমান্ত অঞ্চল পাহাড়ি, বনভূমি ও দুর্গম হওয়ায় এটি বহুদিন ধরেই অস্ত্র, মাদক ও মানবপাচারের জন্য একটি সক্রিয় করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সীমান্তে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত সংযোগ এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও অস্ত্র প্রবাহ
২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী যেমন Chin National Defence Force (CNDF), Kachin Independence Army (KIA), এবং Arakan Army আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীগুলোর হাতে বিপুল পরিমাণ আধুনিক অস্ত্র রয়েছে, যার একটি অংশ পাচার হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করছে।
মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী
মণিপুরে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান জাতিগত উত্তেজনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যেমন UNLF, PLA, PREPAK ইত্যাদি অস্ত্র সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া মার্কিন অস্ত্রগুলো এই গোষ্ঠীগুলোর আন্তর্জাতিক সংযোগের ইঙ্গিত দেয়।
রাজনৈতিক সংযোগ ও দুর্নীতি
এই অস্ত্র পাচার চক্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কিছু অংশের জড়িত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন প্রভাবশালী মেইতেই নেতার আত্মীয় হওয়ায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়া এত বড় অস্ত্র চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকতে পারে না।
ভারতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক পাচার রোধ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। সীমান্তে আরও কড়া নজরদারি, প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।