
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | রাজনীতি » থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে টালমাটাল সময়: পায়েতংতার্নের পদত্যাগ দাবি ও গণআন্দোলনের তাৎপর্য
থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে টালমাটাল সময়: পায়েতংতার্নের পদত্যাগ দাবি ও গণআন্দোলনের তাৎপর্য
শফিকুল ইসলাম কাজলঃ
২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে থাইল্যান্ড আবারও এক রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি। প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে জনরোষ, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং আঞ্চলিক কূটনীতির জটিলতা দেশটির গণতান্ত্রিক কাঠামোকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপ: আস্থার সংকটের সূচনা
ঘটনার সূত্রপাত একটি ফোনালাপ ফাঁসের মাধ্যমে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ বলে সম্বোধন করেন এবং থাই সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এই কথোপকথন শুধু একটি কূটনৈতিক বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেনি, বরং সেনাবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনাস্থার ইঙ্গিত দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তির ভারসাম্যকেই নাড়িয়ে দিয়েছে।
জনতার রাস্তায় নামা: গণতন্ত্রের দাবি না রাজনৈতিক কৌশল?
ব্যাংককের রাজপথে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ প্রমাণ করে, থাইল্যান্ডের জনগণ এখন আর কেবল ভোটের মাধ্যমে নয়, রাজপথেও তাদের মতামত জানাতে প্রস্তুত। “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের শত্রু”-এই স্লোগান শুধু আবেগ নয়, বরং একটি গভীর রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। এটি বোঝায় যে, জনগণ এখন আর কেবল দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বার্থে আপস করা নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও সোচ্চার।
জোট রাজনীতির ভাঙন: অনাস্থার ছায়া
ভূমজাইথাই পার্টির জোট ত্যাগ এবং আসন্ন অনাস্থা ভোট পায়েতংতার্নের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী সবসময়ই একটি ‘নীরব শক্তি’ হিসেবে কাজ করেছে। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতমূলক সম্পর্ক বজায় রেখে কোনো সরকার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না-এটি ইতিহাসই বলে।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট: হুন সেনের ছায়া ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন
কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তার প্রভাবকে কেন্দ্র করে থাই রাজনীতিতে একটি নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, পায়েতংতার্ন ও তার পিতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা হুন সেনের রাজনৈতিক ছায়ায় পরিচালিত হচ্ছেন, যা থাইল্যান্ডের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সামনে কী?
থাইল্যান্ড এখন একটি মোড়ের মুখে দাঁড়িয়ে। পায়েতংতার্নের পদত্যাগ না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে। আবার সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংলাপ, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভারসাম্য রক্ষা পাবে।