
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ » আসামের মুখ্যমন্ত্রীrসংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে”ধর্মনিরপেক্ষতা” ও “সমাজতন্ত্র” শব্দদুটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান
আসামের মুখ্যমন্ত্রীrসংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে”ধর্মনিরপেক্ষতা” ও “সমাজতন্ত্র” শব্দদুটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান
আসামের মুখ্যমন্ত্রীrসংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে”ধর্মনিরপেক্ষতা” ও “সমাজতন্ত্র” শব্দদুটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান
অনলাইন ডেস্কঃ
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, যেখানে তিনি ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে “ধর্মনিরপেক্ষতা” ও “সমাজতন্ত্র” শব্দদুটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, এই শব্দদুটি “পশ্চিমা ধারণা” এবং এগুলি ভারতের সভ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, এই শব্দদুটি ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল এবং এগুলি ভারতের মৌলিক দর্শনের অংশ নয়2।
শর্মা বলেন, “আমি একজন কঠোর হিন্দু, একজন মুসলিমও তাঁর ধর্মে কঠোর। তাহলে আমরা কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারি?” তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা মানে “সর্বধর্ম সমভাব”, যেখানে সব ধর্মকে সমানভাবে সম্মান করা হয়, কিন্তু পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণাটি ধর্ম ও রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা বোঝায়, যা ভারতের প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য নয়3।
সমাজতন্ত্র সম্পর্কেও তিনি বলেন, এটি ভারতের অর্থনৈতিক দর্শনের অংশ ছিল না। ভারতের মূলনীতি ছিল “সর্বোदय” ও “অন্ত্যোদয়”-অর্থাৎ সবার উন্নয়ন এবং সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণ।
এই বক্তব্যটি এসেছে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে-The Emergency Diaries: Years That Forged a Leader-যেখানে ১৯৭৫-৭৭ সালের জরুরি অবস্থার সময়কার ঘটনাবলি এবং তৎকালীন তরুণ আরএসএস প্রচারক নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দ মুছে ফেলার প্রস্তাব: এক বিপজ্জনক প্রবণতা
সম্প্রতি আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে “ধর্মনিরপেক্ষতা” ও “সমাজতন্ত্র” শব্দদুটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এই শব্দদুটি ভারতের প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এগুলি পশ্চিমা ধারণা। এই বক্তব্য শুধু বিতর্কিত নয়, বরং ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করে।
প্রথমত, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের আত্মার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি কেবল রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ নয়, বরং সমস্ত ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার প্রতীক। ভারতের মতো বহুধর্মীয় দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল একটি নীতিগত অবস্থান নয়, বরং সামাজিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি।
দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র শব্দটি ভারতের অর্থনৈতিক দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যদিও এটি ১৯৭৬ সালে সংবিধানে যুক্ত হয়, তবুও স্বাধীনতার পর থেকে ভারত রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা, সম্পদের ন্যায্য বণ্টন এবং দরিদ্রের কল্যাণে যে নীতি গ্রহণ করেছে, তা সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধেরই প্রতিফলন।
এই শব্দদুটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব আসলে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ, যেখানে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করা হচ্ছে। এটি কেবল একটি শব্দচয়নের প্রশ্ন নয়-এটি ভারতের গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ধারণাকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা।
আমরা যদি এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই, তবে ভবিষ্যতে সংবিধানের আরও মৌলিক দিকগুলি প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। তাই এখনই সময়, নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং তরুণ প্রজন্মকে একত্রিত হয়ে এই ধরনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।
ছাত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে (সংক্ষিপ্ত): ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র শব্দ দুটি আমাদের সংবিধানের মূল চেতনার অংশ। এগুলি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব শুধু ইতিহাসকে অস্বীকার করা নয়, আমাদের ভবিষ্যৎকেও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া। একজন ছাত্র হিসেবে আমি মনে করি, এই মূল্যবোধগুলো আমাদের জাতীয় ঐক্য ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি।
সংবিধান বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিকোণ থেকে (সংক্ষিপ্ত): ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র শব্দ দুটি ৪২তম সংশোধনের মাধ্যমে যুক্ত হলেও, এগুলোর মূল দর্শন সংবিধানের শুরু থেকেই বিদ্যমান। এগুলি বাদ দেওয়া মানে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে হস্তক্ষেপ, যা সুপ্রিম কোর্টের মতে অসাংবিধানিক।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে (সংক্ষিপ্ত): এই প্রস্তাব আসলে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ, যেখানে ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্রকে ধ্বংস করে একমাত্রিক পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দিলে, সংবিধান আর জনগণের নয়-শাসকের হয়ে দাঁড়াবে।