
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » ‘৩৫০০ গুমের অভিযোগ’—বস্তুত এক চাতুর্যময় রাজনীতি ও প্রকৃত বিচারকে আড়াল করার অপচেষ্টা
‘৩৫০০ গুমের অভিযোগ’—বস্তুত এক চাতুর্যময় রাজনীতি ও প্রকৃত বিচারকে আড়াল করার অপচেষ্টা
ম্পাদকীয়: ‘৩৫০০ গুমের অভিযোগ’—বস্তুত এক চাতুর্যময় রাজনীতি ও প্রকৃত বিচারকে আড়াল করার অপচেষ্টা
বর্তমানে যে ‘৩৫০০ গুমের’ অভিযোগ রাষ্ট্র ও সমাজে বারবার আলোচিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এখন সময়ের দাবি। এই অভিযোগটি যতটা না মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক অপব্যবহার, বিভ্রান্তি ও প্রকৃত ঘটনার বিচার আড়াল করার ষড়যন্ত্র।
গুম একটি ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, এটি নিয়ে প্রতিটি নাগরিকের উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই উদ্বেগকে পুঁজি করে যখন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা হয়, তখন মানবাধিকারের প্রকৃত গুরুত্বটাই সংকটে পড়ে। শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম ইস্যু নিয়ে যেসব অভিযোগ ছিল, তার বেশিরভাগই অনুসন্ধানযোগ্য তথ্যসূত্রে প্রকাশিত হয়েছে। অনেক গুমের ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন, সাংবাদিকরা তদন্ত করেছেন। এসব ঘটনার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও বাস্তবতা ছিল।
কিন্তু বর্তমান কিংবা সম্ভাব্য শাসকদের ঘিরে যে ৩৫০০ জন গুম হওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তা নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতিতে ভুগছে। কোথাও নেই পূর্ণাঙ্গ তালিকা, নেই যাচাইযোগ্য সূত্র, নেই স্বচ্ছ কোনো তদন্তপ্রক্রিয়া—এরপরও এটি বারবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রকে বিব্রত করা হচ্ছে।
আরও গভীরতর আশঙ্কার বিষয় হলো, এই মিথ্যা গুমের গল্প তৈরি করে সত্যিকারের গুম হওয়া ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারকে আড়াল করা হচ্ছে। যাদের সন্তান, স্বামী বা ভাই সত্যিই নিখোঁজ, তারা আর গুরুত্ব পাচ্ছেন না। এই নাটকীয় ও ফাঁপা অভিযোগ দিয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে, দমন করা হচ্ছে সত্য।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো—‘গুম কমিশন’ বা ‘গুম তদন্ত কমিটি’ নামধারী কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন যারা একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এই ইস্যুতে সক্রিয়, অথচ তাদের কাজকর্ম বা তথ্য-উপাত্ত কোনোভাবেই স্বচ্ছ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের চোখে ধুলো দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে ব্যস্ত।
অতএব, জনগণের এখনই বোঝা দরকার, এই ৩৫০০ গুমের অভিযোগ একটি সুপরিকল্পিত কৌশল—যার মাধ্যমে একদিকে বর্তমান রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বা আগামীতে ক্ষমতা গ্রহণের সম্ভাবনায় থাকা গোষ্ঠী নিজেদের দায়মুক্ত রাখতে চাইছে; অন্যদিকে প্রকৃত গুমের বিচারকে আড়াল করছে, যেন রাষ্ট্র যন্ত্রের অপপ্রয়োগ তারা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারে।
গুম-সংক্রান্ত সকল অভিযোগের পূর্ণ তদন্ত হোক, কিন্তু সেটা হোক স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, এবং মানবাধিকারকে শ্রদ্ধা করে। গুম নিয়ে ব্যবসা কিংবা চাতুর্যের রাজনীতি নয়—আমরা চাই সত্য, ন্যায়বিচার, এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মর্যাদা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো অপরাধ ঢেকে রাখা নয়—বরং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা। সেটিই হোক আজকের মানবিক রাষ্ট্রের অঙ্গীকার।