
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » মধ্যপ্রাচ্যে ঘনীভূত যুদ্ধের মেঘ: ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে ঘনীভূত যুদ্ধের মেঘ: ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
শফিকুল ইসলাম কাজল তারিখ: জুন ২২, ২০২৫ আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আগুনের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে বিশ্ব মধ্যপ্রাচ্য আবারো আগুনের দরজায় দাঁড়িয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি মূল পারমাণবিক স্থাপনায় একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় ইরান পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে এবং পারস্য উপসাগরের প্রাণভোমরা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
একের পর এক নাটকীয় রাজনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপের মধ্যে রাশিয়া, ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ও জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলি ক্রমেই নিজ নিজ অবস্থান স্পষ্ট করছে।
মার্কিন হামলা: আক্রমণ নাকি আত্মরক্ষা?
ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে তারা ইরানের ফোর্দো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় “বাঙ্কার-বাস্টার” ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সফল হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এটি ছিল “আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বজায় রাখার” অংশ-কিন্তু তেহরান বলছে, এটি একটি “ঘোষিত যুদ্ধের সূচনা।”
এই হামলা কেবল একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়; এটি আন্তর্জাতিক আইন, আঞ্চলিক ভারসাম্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রিভেন্টিভ স্ট্রাইক ডকট্রিন’কে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ইরান-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা: নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাশিয়া হামলার কড়া নিন্দা করে জানায়, তারা ইরানকে “কৌশলগত মিত্র” হিসেবে দেখে এবং পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়াবে। এই মুহূর্তে রাশিয়ার ভূ-কৌশলগত অবস্থান হচ্ছে-যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ইরানকে সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে আশ্বাস দেওয়া, এবং নিজেদের নিষ্ক্রিয় দর্শক হিসেবে উপস্থাপন না করে জোটের নেতৃত্বে থাকা।
ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ: দীর্ঘদিনের শত্রুতা যেন চূড়ান্ত পর্যায়েইসরায়েল বহুদিন ধরেই ইরানকে নিজেদের অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মাঝে চলা ছায়াযুদ্ধ যেন এবার সরাসরি সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে।
ইরান বলেছে-কূটনীতির সময় শেষ, এখন শুধুই আত্মরক্ষা। ইসরায়েল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা “কোনো অবস্থান থেকে পিছু হটবে না।”
হরমুজ প্রণালী: বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্বাসনালী
ইরানের সংসদ হরমুজ প্রণালী বন্ধে ভোট দিয়েছে-যা কার্যকর হলে বিশাল প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাজারে। এই প্রণালী দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০% জ্বালানি সরবরাহ হয়-এই পথ বন্ধ মানে তেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়া, জাহাজ চলাচল ব্যাহত হওয়া, এবং সরবরাহ চেইনে বিপর্যয়। ইরানের এই সিদ্ধান্ত কেবল সামরিক নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক অস্ত্র। এবং বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া বার্তা: ‘Make Iran Great Again’সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বলেন”Regime Change is an option.” তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের বর্তমান নেতৃত্ব দেশটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, এবং নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে একে ‘পুনরুজ্জীবিত’ করা দরকার।
এই মন্তব্য কূটনৈতিক ভদ্রতার পরিপন্থী-এবং অনেকেই এটিকে ইরানে সরকার পরিবর্তনের ডাক বলে দেখছেন। ট্রাম্পের এই বার্তা মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ঝড় তুলেছে।
সবশেষে পথ কোনদিকে? যুদ্ধ না শান্তি?এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য এক সরু রশিতে দাঁড়িয়ে আছে-যার একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে অনিশ্চিত শান্তি।
জাতিসংঘ মধ্যস্থতায় ব্যস্ত, কিন্তু পক্ষগুলোর মনোভাব যুদ্ধ-অনুরাগী।অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও মানবিক সংকট-তিনটি একই সঙ্গে বাড়ছে।বিশ্ব এখন প্রশ্ন করছে-‘কে থামাবে এই আগুন?’
সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, হরমুজ প্রণালীর হুমকি ও বৈশ্বিক ভূরাজনীতিক বিশ্লেষণ