
বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | জেলার খবর » গোপালগঞ্জে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের অভিযান: অনিয়মের সত্যতা মিলেছে
গোপালগঞ্জে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের অভিযান: অনিয়মের সত্যতা মিলেছে
এম ডি এন মাইকেলঃ
গোপালগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে দুদক। বুধবার (৭ মে) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান। এ সময় সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায়, কর্মকর্তা সোহেলসহ দুদকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা অংশ নেন।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান জানান, সারাদেশের ৩৬টি জেলায় একযোগে পরিচালিত অভিযানের অংশ হিসেবেই গোপালগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান পরিচালিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “প্রথমে সাদা পোশাকে আমরা অফিসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করি। অভিযানে ঘুষ গ্রহণ, গ্রাহকদের সঠিক তথ্য না দেওয়া, তাদের দিনের পর দিন ভোগান্তিতে ফেলা, একই কর্মচারীর দীর্ঘদিন একই অফিসে অবস্থান, অবৈধ সম্পদ অর্জন, এবং দালাল চক্রের সক্রিয়তা—এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।”
দুদকের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে মোট ২,৮৮৪টি লাইসেন্স আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ৬৭টি আবেদন এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় এবং ৪৭টি আবেদন বাতিল করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাতিল ও অপেক্ষমাণ আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাছাড়া, অফিসের পত্র ইস্যু রেজিস্ট্রারে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে—অনেক নম্বর ফাঁকা রেখে দেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে দুর্নীতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে।
দুদক জানায়, অফিস সহকারী লিখন শেখ ২০২৩ সাল থেকে এখানে কর্মরত। তার বাড়ি নড়াইলে হলেও তিনি পরিবারসহ খুলনায় থাকেন এবং প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করেন। দুদকের তথ্যমতে, তার নামে খুলনায় বাড়ি, গাড়ি এবং নড়াইলে জমিজমা রয়েছে, যা তার আয় অনুযায়ী সন্দেহজনক। এছাড়া অফিস সহায়ক ইয়াছিন শেখের বিরুদ্ধেও আগের বছর দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ উঠেছিল। সেসময় বদলির সুপারিশ করা হলেও এখনো তিনি বহাল আছেন।
বিআরটিএ গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পদে বরগুনা জেলার এক কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্বে রাখা হয়েছে, যিনি সপ্তাহে মাত্র একদিন অফিস করেন। এতে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং কর্মচারীদের একাংশ দালালদের সঙ্গে মিলে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।
উপপরিচালক মশিউর রহমান জানান, অভিযানে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে সহকারী পরিচালকের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে এবং দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিআরটিএ’র কেন্দ্রীয় অফিসে এসব সুপারিশ পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, এই অফিস দালালমুক্ত হোক এবং জনসাধারণ যেন দুর্ভোগ ছাড়াই সরকারি সেবা পায়। অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে।