
শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের গণতন্ত্রে আগ্রহী, নাকি কৌশলগত স্বার্থে?
যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের গণতন্ত্রে আগ্রহী, নাকি কৌশলগত স্বার্থে?
মতামত | বিশেষ বিশ্লেষক শফিকুল ইসলাম কাজল
বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ছে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ সেই আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ। তবে প্রশ্ন উঠছে-যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন, নাকি তাদের কৌশলগত স্বার্থই এই আগ্রহের মূল চালিকাশক্তি?
নির্বাচন না স্বার্থ?
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি ও সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এই বক্তব্যের বাইরেও রয়েছে এক গভীর বাস্তবতা।
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ শুধু নির্বাচন আয়োজনের সময়সূচি বা কমিশনের গঠন নয়-তারা জানতে চায়, এই নির্বাচনের মাধ্যমে কী ধরনের সরকার আসবে, সেই সরকার কতটা গণতান্ত্রিক হবে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ-সেই সরকার কতটা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থবান্ধব হবে।
ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা
বাংলাদেশ এখন আর শুধু একটি দক্ষিণ এশীয় উন্নয়নশীল দেশ নয়-এটি এখন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু। চীন এখানে অবকাঠামো বিনিয়োগে সক্রিয় ,রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে জড়িত
ভারত চায় আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখতে আর যুক্তরাষ্ট্র চায় ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশকে পাশে পেতে
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের “গণতন্ত্র” চাওয়া আসলে একটি কৌশলগত অবস্থান নিশ্চিত করার হাতিয়ার কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সংস্কার না পুনর্গঠন? যুক্তরাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানালেও, তারা আসলে চায় একটি নতুন রাজনৈতিক ভারসাম্য-যেখানে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, কিন্তু সেই অংশগ্রহণ যেন এমন কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় না আনে যারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারে।
তাদের দৃষ্টিতে “সংস্কার” মানে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নীতির পুনর্গঠন-যা মানবাধিকার, শ্রমনীতি, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
সম্পর্ক না প্রভাব?
ফোনালাপে রোহিঙ্গা সংকট, বাণিজ্য ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথাও এসেছে। কিন্তু এসব আলোচনার পেছনে রয়েছে একটি সুস্পষ্ট বার্তা-যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে এমন একটি সরকার, যাকে তারা “সহযোগী” হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তাদের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন তা তাদের কৌশলগত কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমাদের জনগনের চাওয়া
বাংলাদেশের জনগণ চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর দৃষ্টিতে এই নির্বাচন একটি কৌশলগত বিনিয়োগ-যার মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতের সরকারকে প্রভাবিত করতে চায়।
তাই প্রশ্নটা এখন আর শুধু নির্বাচন আয়োজনের নয়-প্রশ্নটা হলো, এই নির্বাচনের মাধ্যমে কারা জিতবে-বাংলাদেশের জনগণ, না আন্তর্জাতিক স্বার্থের খেলোয়াড়রা? চলতে থাকুক সময়ের কাটা আমরাও দেখতে থাকি ।হাতি ধরা ফাদে কে কে আটকিয়ে যায়।