
শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | রাজনীতি » যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পরিস্থিতি জানতে চেয়েছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পরিস্থিতি জানতে চেয়েছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃযুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করে বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম এবং অন্যান্য পারস্পরিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ফোনালাপটি ছিল খুবই উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছে নির্বাচনের অগ্রগতি কতটুকু। তখন আমরা তাদের জানিয়েছি, যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে এবং সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।’ আলোচনায় সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়টিও উঠে আসে বলে জানান তিনি। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে টালবাহানার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো টালবাহানা নেই। বিষয়টি আমরা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি।’ এছাড়া, জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, তিন বছরের জন্য একটি প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। দুই পক্ষ একমত হলে তা বাস্তবায়ন হবে এবং ভবিষ্যতে পরবর্তী সরকার চাইলে মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব হবে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কো রুবিওর সঙ্গে প্রায় ১৫ মিনিটের ফোনালাপে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, সংস্কার প্রক্রিয়া, আসন্ন নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ফোনালাপটি দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্কের প্রতিফলন বলেও উল্লেখ করা হয়।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়-যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি জানতে চায়নি, বরং তারা নির্বাচনের সময়সূচি, সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এবং নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ-সবকিছু নিয়েই গভীরভাবে আগ্রহী। নিচে বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্র কী জানতে চেয়েছে?
১. নির্বাচনের সময়সূচি ও অগ্রগতি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে ১৫ মিনিটের ফোনালাপে নির্বাচন নিয়ে সরাসরি আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছে, নির্বাচন কবে হবে, কীভাবে হবে এবং সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের অগ্রগতি কতদূর2।
২. সংস্কার প্রক্রিয়া ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানিয়েছে এবং বলেছে, তারা চায় এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনমূলক রাজনৈতিক সংস্কার সম্পন্ন করুক4।
তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের বিষয়গুলোতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও কৌশলগত লক্ষ্য
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার, রেমিট্যান্স উৎস, এবং ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা কৌশলের অংশ5।
তারা চায়, বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার থাকুক, যাতে তারা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা চালিয়ে যেতে পারে।
তাহলে আসল সত্য কী?
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন যা বলেছেন, তা আংশিক সত্য। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পরিস্থিতি জানতে চেয়েছে এবং সংস্কারে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো:
যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন, সংস্কার এবং তাদের কৌশলগত স্বার্থ-এই তিনটি বিষয়কে একসূত্রে রেখে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
তাদের মূল লক্ষ্য হলো:
বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করাগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করাবং চীন ও রাশিয়ার প্রভাব প্রতিহত করে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা
মুল বিষয়
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ শুধুই নির্বাচন বা সংস্কার নয়-তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো, অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক অবস্থান-সবকিছুতে ই গভীরভাবে জড়িত। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে: তারা কি গণতন্ত্র রক্ষায় আগ্রহী, নাকি নিজেদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায়?