
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | বিনোদন » শিল্পের গলায় শিকল, ন্যায়বিচার কি এখনো চরিত্রভিত্তিক নির্বাচিত হয়?
শিল্পের গলায় শিকল, ন্যায়বিচার কি এখনো চরিত্রভিত্তিক নির্বাচিত হয়?
পক্ষকাল সংবাদ :
বাংলাদেশ আজ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে শিল্পচর্চা আর মতপ্রকাশ যেন ক্রমেই অপরাধে রূপ নিচ্ছে—তবে তা নির্ভর করছে শিল্পীর নাম, পরিচয় এবং সংশ্লিষ্টতার ওপর। একদিকে, গ্রাম বাংলার বাউল, সুফি, লোকশিল্পীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন; অন্যদিকে টেলিভিশন ও মঞ্চের বহু শিল্পী হয়রানি ও হয়রানিমূলক মামলায় জর্জরিত হচ্ছেন। অথচ একই সাংস্কৃতিক জগতের আরেকাংশে অদ্ভুত এক ‘নিরবতা’ ও ‘রক্ষা-কবচ’ কাজ করছে—এ প্রশ্ন আজ শুধু সাধারণ নাগরিকের নয়, ন্যায়বিচার প্রত্যাশী প্রতিটি সচেতন মানুষের।
সম্প্রতি একাধিক নাট্যব্যক্তিত্ব, গায়ক ও অভিনেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা, অতিরঞ্জিত, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার অভিযোগ উঠেছে। বাউলদের মাজারে হামলা হয়েছে, পুঁথি-পাঠকে বলা হয়েছে ‘ধর্মবিরোধী’, সংস্কৃতিচর্চাকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘বিকৃত বুদ্ধিজীবীদের কর্ম’। অথচ বেগম ফজিলাতুন্নেছার মতো ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয়ের দায়ে যারা গর্ব ভরে মিডিয়ায় প্রচার করেন, তারা যখন স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের উপদেষ্টার সহধর্মিণী হন, তখন কি আইন নিজেই চোখ বেঁধে ফেলে?
প্রশ্ন জাগে, আইনের চোখ কি আজও অন্ধ? নাকি তা এখন পরিচয়, পদের ভিত্তিতে বেছে দেখে? বিচার কি আর ন্যায়বিচার থাকে, যখন একাংশকে বেছে বেছে হয়রানির শিকার হতে হয় এবং অপরাংশকে বরাদ্দ থাকে সুবিধা ও প্রশ্রয়?
আমরা কোনও নির্দিষ্ট শিল্পী বা ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছি না। বরং প্রশ্ন তুলছি—শিল্প কি আজও স্বাধীন? নাকি সেটা এখন দলীয় পরিচয়ের ছাতার নিচে বসে সুর বাঁধে, দৃশ্য নির্মাণ করে, আর সেই অনুযায়ী বিচার নির্ধারিত হয়?
যদি রাষ্ট্র আজ শিল্পের গলা টিপে ধরতে চায়, তবে সেই রাষ্ট্রকে আর ‘গণতান্ত্রিক’ বলা যায় না। যদি একজন শিল্পী রাজনৈতিক যোগসূত্রের কারণে অপরাধী না হয়ে যান, অথচ অন্য আরেকজন শুধুমাত্র ভিন্নমতের কারণে অপরাধী হয়ে পড়েন—তবে তা নিছক অন্যায় নয়, বরং তা একটি গভীর রাষ্ট্রীয় নীতিগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
আমরা চাই—
সকল শিল্পীর জন্য সমান আইনি সুরক্ষা,
ভিন্নমতাবলম্বী সংস্কৃতিকর্মীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার অবসান,
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পক্ষপাতহীনতা।
এখন সময় এসেছে প্রশ্ন করার: রাষ্ট্র কি আইন দিয়ে দেশ চালাবে, না ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রভাব-প্রতিপত্তির ছায়ায় আইন চলবে?