
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » যুদ্ধের ছায়ায় উপমহাদেশ কাশ্মীর হামলার পর আমরা কোন পথে ?
যুদ্ধের ছায়ায় উপমহাদেশ কাশ্মীর হামলার পর আমরা কোন পথে ?
লন্ডন থেকে
শফিকুল ইসলাম কাজল : ২৫শে এপ্রিল ২০২৫ লন্ডন ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার রক্তাক্ত দৃশ্য কেবল সীমান্তে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার বুকে। হতাহত নিরীহ মানুষের কান্না, আতঙ্কিত শিশুর চিৎকার, আর আশাহত পরিবারের মুখ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়-সহিংসতার রাজনীতি কাকে কতটা ভাঙচুর করে দিতে পারে। পহেলগামের পর্যটন অঞ্চলে হওয়া সাম্প্রতিক হামলা শুধু নিরাপত্তা ব্যর্থতারই নয়, বরং বৃহৎ ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার গভীর প্রতিচ্ছবি।
এই ঘটনার পর ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়া ‘দুটি লাল ফাইল’ নিয়ে এখন জল্পনা তুঙ্গে। অনেকে মনে করছেন, সেই ফাইলগুলোর একটি হতে পারে যুদ্ধ শুরুর অনুমতির অনুরোধ। যদি সত্যিই তা হয়, তাহলে আমাদের প্রশ্ন-আরও কত কান্না, আরও কত রক্ত, আরও কত অনাথ শিশু জন্ম নেবে এই ‘অবশ্যকীয় প্রতিক্রিয়া’র নামে?
যুদ্ধ কি সমাধান?
সন্ত্রাস নিঃসন্দেহে জঘন্য ও নিন্দনীয়। নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি কোনো ধর্ম, জাতি বা যুক্তির ভাষায় গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো-এর জবাব কি যুদ্ধই হতে পারে? কাশ্মীরে রক্ত ঝরার জবাব যদি সীমান্তে আরও রক্ত ঝরিয়ে দিতে হয়, তাহলে সেই চক্র কোথায় থামবে?
ভারতের সুপরিচিত সুফি পরিষদও বলেছে-এ ধরনের সন্ত্রাস ইসলামের শিক্ষা নয়। কিন্তু সমস্যা হলো, সামরিক প্রতিক্রিয়া চালালে নির্দিষ্ট কিছু নয়, বরং বহু নিরীহ মানুষও ঝুঁকির মুখে পড়ে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
এই উত্তেজনার আগুন বাংলাদেশের দরজায়ও কড়া নাড়ছে। যুদ্ধ মানেই সীমান্তে অস্থিরতা, আশ্রয়প্রার্থীর ঢল, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং কূটনৈতিক চাপ। দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট অথচ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে, বাংলাদেশকে চরম সতর্কতার সঙ্গে পরবর্তী কূটনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে।
আমরা যদি যুদ্ধ দেখতেই থাকি, তবে কীভাবে বলবো-শান্তিই আমাদের মূল পথ? কাশ্মীরের মানুষের দুঃখ যদি ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধ ডেকে আনে, তবে পুরো উপমহাদেশই তার মাশুল দেবে-রক্ত, অর্থনীতি, এবং মানবিকতার দিক থেকে।
এখন প্রয়োজন ঐক্য, প্রতিশোধ নয়
রাষ্ট্রপতির কাছে লাল ফাইল পৌঁছেছে। তার মানে, সিদ্ধান্ত নেয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ভারত সরকার। এই সময়ে প্রয়োজন *দূরদর্শী নেতৃত্ব*, যারা প্রতিশোধ নয়-বরং ন্যায়, নীতি ও মানবিকতার ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত নেবে।
আমরা চাই-কাশ্মীরের মানুষের পাশে দাঁড়াক বিশ্ব। কিন্তু সেই সহমর্মিতা যেন নতুন কোনো অগ্নিগর্ভ বাস্তবতা তৈরি না করে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের উচিত, সন্ত্রাস দমনের নামে যুদ্ধ নয়-আন্তর্জাতিক মঞ্চে শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
যুদ্ধ নয়, শান্তির পথে ফিরে আসুন
আজ যখন প্রযুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে মানবতা এগিয়ে চলেছে, তখন যুদ্ধ নতুন করে আমাদের পেছনে টানবে কেন? রাষ্ট্রপতির অনুমতির অপেক্ষায় থাকা সিদ্ধান্ত যেন শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে। যেন আর কোনো মা সন্তান হারিয়ে পাথর না হয়, যেন কোনো শিশু বোমার শব্দে ঘুম না ভাঙে।
আমরা যুদ্ধ চাই না।
আমরা শান্তি চাই-স্থায়ী, সম্মানজনক, এবং মানবিকতা-ভিত্তিক শান্তি