পাক-ভারত সংঘাত কি অনিবার্য??
পক্ষকাল ডেস্ক:—o
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জন পর্যটকের। ভারতের তরফে দাবি করা হয়েছে হামলা চালানো জঙ্গিদের পাক যোগ রয়েছে। এমনকী নয়াদিল্লি, এই হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকেই দায়ী করছে। সেই কারণে ইসলামাবাদের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে চুক্তি বাতিল করেছে নয়াদিল্লি। তারপরেই ত্রাহি ত্রাহি রব পড়ে গিয়েছে পাকিস্তানে। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরেই জরুরি বৈঠকে বসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তারপরেই ইসলামাবাদের তরফেও একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিন বিকেলে পাকিস্তানের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, ভারতের কোনও বিমান এবার থেকে আর ইসলামাবাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণাও করেছে পাকিস্তান। যার মধ্যে পাকিস্তানের উপর দিয়ে অন্য কোনও দেশে পণ্য পাঠাতে পারবে না।।
ইতিমধ্যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সিমলাচুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ছিল দ্বন্দ্ব নিরসন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও কাশ্মীর ইস্যুতে আলোচনার ভিত্তি স্থাপন। সিমলা চুক্তিতে বলা হয়েছিল-কাশ্মীরসহ সব দ্বিপাক্ষিক বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হবে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে সেনাবাহিনী যে অবস্থানে ছিল, সেই সীমারেখাকে LoC হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।।দুই দেশ একে অন্যের ভূমি থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নেবে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুন:স্থাপন করবে।
পাকিস্তান সিমলা চুক্তি বাতিলের ফলে পাকিস্তানের কাছে LOC এর গ্রহণযোগ্যতা আর থাকছে না। অর্থাৎ ধরে নিতে পারেন এটা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে দিল। সিমলা চুক্তি বাতিল ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামীল। এখন পাকিস্তান চাইলে জম্মু কাশ্মীরে অভিযান চালাতে পারবে। এতে কোন আর বাধা নাই।অর্থাৎ, আগামী ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বড় কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা দাবি করে ওই ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কঠোর বার্তা দিয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ‘শক্ত ও স্পষ্ট জবাবে’র কথা বলেছেন। অপর দিকে পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে শক্ত জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বড় সংঘাতের শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে অল্প পরিচিত সংগঠন রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, পাকিস্তান বরাবরই সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে। তবে তারা বলে আসছে, সার্বভৌম কাশ্মীরকে সমর্থন করে তারা। পেহেলগাম হামলার ঘটনাটি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা অনেকটাই বাড়িয়েছে, যারা এরই মধ্যে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ ঘোষণা ও উপত্যকার মানুষকে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই বন্ধ না করতে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের আহ্বানের এক সপ্তাহ পর এ হামলা ঘটল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতিনির্ধারক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘অঞ্চলটির জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী একে অপরকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে।’
হামলার ঘটনায় প্রথম প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ভারত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত-বাণিজ্য কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। ভারত অতীতে একাধিকবার পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত জড়ালেও কখনও এ চুক্তি স্থগিত করেনি।