
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » সম্পাদক বলছি » গণতন্ত্রের মুখোশে বন্দী একটি জাতি: ২০২৫ সালের বাংলাদেশ
গণতন্ত্রের মুখোশে বন্দী একটি জাতি: ২০২৫ সালের বাংলাদেশ
বিক্ষিপ্ত সম্পাদকীয় :
২০২৫ সাল। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ গবেষণা কিংবা টেকনোলজির নতুন দিগন্ত
নামমাত্র ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার খবর তবে বাস্তবে তা কতটুকু স্বচ্ছ? ক্ষমতা বদলের নামে কি শুধুই পোশাক বদলানো হবে ?
গণতন্ত্রের অন্তর্বাসে স্বৈরতন্ত্রের শরীর
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা হয়েছিল, এই সরকার হবে নিরপেক্ষ, নাগরিকদের বিশ্বাসযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গণতান্ত্রিক। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, জনগণের সেই বিশ্বাস ততই চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে। কারণ:
গুম ও ক্রসফায়ার এর বিচার নেই
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দায় স্বীকার নেই
সাংবাদিক নির্যাতনের দায়ভার কেউ নেয় না
নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা
গুম হওয়া সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিচার আজও ঝুলে আছে। এই বিচার না হওয়ার দায় কার? রাষ্ট্রের, সরকারের না কি সেই ব্যবস্থার, যা মানুষকে নয়-ক্ষমতাকে রক্ষা করে?
আন্তর্জাতিক চোখে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ এখন শুধু নিজের জনগণের কাছেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একাধিকবার মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সরকারের প্রতিক্রিয়া-নীরবতা আর কূটনৈতিক ভাষায় আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা।
একদিকে রাখাইনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি, অন্যদিকে ভারতের সীমান্ত রাজনীতি ও চীনের কৌশলী আগ্রাসন-সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এক নাজুক কূটনৈতিক ভারসাম্যে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্থনীতির হালচাল
অর্থনীতির মাঠেও আশার আলো কম। বৈদেশিক ঋণ, আমদানি নির্ভরতা, মূল্যস্ফীতি, ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। মধ্যবিত্ত আজ নি:স্ব, তরুণরা কর্মহীন।
জাতির ভিত্তি যখন কাঁপছে, তখন শুধুমাত্র প্রোপাগান্ডা দিয়ে ‘সমৃদ্ধি’ দেখানো যায়-বাস্তবতা বদলানো যায় না।
আমরা কি করব?
বাংলাদেশের জনগণের সামনে এখন দুটি পথ:
নিঃশব্দে এই পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়া
ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সত্যের জন্য সংগঠিত হওয়া
সাংবাদিকতা, নাগরিক আন্দোলন, প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তা এবং সংগঠিত প্রতিবাদ-এই চারটি অস্ত্রই পারে সত্যকে ফিরিয়ে আনতে।
বাংলাদেশ এখন একটি মোড় ঘোরানোর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখানে শুধুমাত্র নেতৃত্ব বদল নয়, চিন্তার, দৃষ্টিভঙ্গির, এবং রাষ্ট্র কাঠামোর নৈতিক পরিবর্তন দরকার।
এই পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। কিন্তু একটি ন্যায়ভিত্তিক, সাহসী ও জনগণের পাশে দাঁড়ানো নাগরিক আন্দোলনই পারে সেই সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে।
“ক্ষমতা চিরকাল থাকে না-সত্যই চিরকাল বেঁচে থাকে।”
আজ নয়তো কাল, ইতিহাস বিচার করবে কে সত্যের পক্ষে ছিল-আর কে ক্ষমতার মুখোশ পরে ইতিহাসকে প্রতারণা করেছে।