শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

Daily Pokkhokal
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ » দিনমজুর থেকে যেভাবে কোটিপতি নাসির
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ » দিনমজুর থেকে যেভাবে কোটিপতি নাসির
৪৩২ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দিনমজুর থেকে যেভাবে কোটিপতি নাসির

---
আমিনুল ইসলাম লিটন: নাসির চৌধুরী। পিতার অভাবের সংসারের হাল ধরতে শিশু বয়সেই দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। এরপর কালীগঞ্জ উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের স্থানীয় বাজারে ডাব বিক্রিসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি করতেন। একপর্যায়ে গ্রাম ছেড়ে কালীগঞ্জে এসে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে টি-বয় হিসেবে দিন-হাজিরার চাকরি নেন। পরবর্তীতে ৮ম শ্রেণী পাস একটি ভুয়া সনদ জোগাড় করে দলিল লেখক হিসেবে নাম লেখান। তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার আলতাফ হোসেনের বাড়িতে কাজ করার সুবাদে দলিল লেখকের লাইসেন্সও পেয়ে যান। এরপরই আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দ্রুত বদলে যায় তার ভাগ্য।
গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। নাম লেখান আওয়ামী লীগে। স্থানীয় এমপির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। পেয়ে যান কালিগঞ্জ উপজেলার সিমলা রকনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নৌকার টিকিট। নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ইতিমধ্যে নাসির চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে। দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ৩রা নভেম্বর সাক্ষীদের তলব করা হয়। তবে নাসির চৌধুরী হাজিরা দিতে যাবেন আগামী ৫ই নভেম্বর। গত ২৮শে অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে পাঠানো বর্ণিত ০০.০১.৪৪০০.৭৩৩.০১.০১৯.১৯.২৯১৪ নং স্মারকের এই চিঠিতে অনুসন্ধানী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল আসলাম মোড়লের অফিসে সকাল ১০টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। দুদকের নোটিশ মোতাবেক সাক্ষী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রসুল রোববার যশোর দুদক অফিসে গিয়ে সাক্ষী দিয়ে এসেছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, নাসির চৌধুরী দলিল লেখক ও ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে ওই এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ যে কোন সরকারি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদাররা কাজ করতে গেলে তাকে চাঁদা না দিয়ে কেউ আসতে পারে না। যদি তাকে টাকা না দেয় তাহলে সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সেই সাইডের ইট, বালি রড, সিমেন্ট জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যান। বর্তমানে পুকুরিয়া তার নিজের গ্রামের বাড়ির পাশে হাইস্কুলের কনস্ট্রাশনের কাজ চলছে। কাজটি পেয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের ছোট ভাই। নাসিরের সন্ত্রাসী বাহিনী ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবি করে। ঠিকাদার চাঁদা না দেয়ার কারণে সাইড থেকে প্রায় ৬০/৭০ মণ রড জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তার পারিবারিক গোরস্থানের মধ্যে রেখে দিয়েছেন। চাঁদার টাকা না দিলে ওই রড আর ফেরত দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে। এভাবে তার ইউনিয়ন এলাকায় সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করে অবৈধপথে অর্থ উপার্জন করে একের পর এক আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি, শহরে ও মাঠে জমি এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে তিনি গড়ে তোলেন টাকার পাহাড়। একজন দলিল লেখক হয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, দুনীতি ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। দুদকের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, নাসির চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী খোদেজা বেগমের নামে যশোরের আল আরাফা ব্যাংকে রয়েছে ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট। যার ব্যাংক একাউন্ট নং ০৩০১৬২০০০১০২৫। ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক স্টেটমেন্টে এই টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। নাসির চৌধুরীর শ্যালিকা মাহফুজা খাতুনের নামেও রাখা আছে ৫০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ১৪ই মে যশোরের আল আরাফা ব্যাংকে ০৩০১৬২০০০১২৪৮নং হিসাব খোলা হয়। নাসির চৌধুরীর ব্র্যাক ব্যাংক যশোর শাখায় ৮টি হিসাব নাম্বারে লাখ লাখ টাকার তথ্য পেয়েছে অনুসন্ধানী দল। ব্র্যাক ব্যাংকের ২৪০১৩০২১১২৫৯৯০০২ নং হিসাবে ২০১৯ সালের ২৭শে মার্চ পর্যন্ত জমা ছিল ২০ লাখ টাকা। একই ব্যাংকের ২৪০১৩০২১১২৫৯৯০০৩ নং হিসাবে জমা ছিল ২১ লাখ ৫০ হাজার, ২৪০১৩০২১১২৫৯৯০০১ নং একাউন্টে ৩০ লাখ ৫০ হাজার, ২৪০১৩০২১১২৫৯৯০০৮ একাউন্টে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯২০ টাকা, ২৪০১৩০২১১২৫৯৯০০৪ একাউন্টে ২ লাখ ১৬ হাজার ৬৩৪ টাকা, ২৪০১৩০২১১২৫৯৯০০৭ নং একাউন্টে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫১ টাকা, ২৪০১৩০২১১২৫৯৯০০১ নং একাউন্টে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৪২ টাকা ও ২৪০১৩০২১১২৫৯৯০০৬ নং একাউন্টে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া এবি ব্যাংকে মাহফুজা ও তার শ্যালক জিয়া কবীরের নামেও কোটি কোটি টাকা থাকতে পারে এমন গুজব রয়েছে এলাকায় মানুষের মুখে মুখে। তার কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়ায় ৩টি আলীশান বাড়ি, নদীপাড়ায় একটি ও কুল্লোপাড়ায় একটি বাগান বাড়ি রয়েছে। দলিল লেখক নাসির চৌধুরীর কত জমি আছে তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। দুদকের সর্বশেষ তথ্য মতে, নাসিরের নামে ৫৯.২৭ বিঘা জমির সন্ধান মিলেছে। কালীগঞ্জের বাবরা, পুকুরিয়া, তিল্লা, ডাকাতিয়া, এ্যাড়েখাল, মনোহরপুর, সিমলাসহ বিভিন্ন মাঠে এই জমি রয়েছে। গ্রামে কোন জমি বিক্রি হলে তার কারণে অন্য কেউ তার থেকে বেশি উচ্চ মূল্যে জমি কিনতে পারে না। তার কাছে জমি বিক্রি না করলে সেই ব্যাক্তিকে বিভিন্ন রকম ঝামেলাই ফেলে ও তার বাড়িতে সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা করে থাকেন। তার গ্রামের কোন মেয়ে বাপের বাড়ির ফারাজী জমি বিক্রি করতে চাইলে জমির বাজার দামের অর্ধেক দাম দিয়ে সেই জমি কিনে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক দখল করে নেন নাসির। পিতার কাছ থেকে পাওয়া মাত্র ৪ শতক জমি থেকে নাসির চৌধুরী দুর্নীতি, চাঁদাবাজি করে কয়েক বছরে তিনি এখন কোটি কোটি টাকার জমির মালিক হয়েছেন।
এছাড়াও ২০১৫ সালে কালিগঞ্জ উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের হাই স্কুলের পাশেই জেলা পরিষদের রাস্তার কাজ করাতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম নামের এক ঠিকাদারের কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চান নাসির চৌধুরী। চাঁদা না দেয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় তার সন্ত্রাসী বাহিনী। পরে চাঁদা দিয়ে পার পান ওই ঠিকাদার। অভিযোগের বিষয়ে সিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কালীগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির চৌধুরী বলেন, মাঠে আমার খুব বেশি জমি নেই। কালীগঞ্জের এসিল্যান্ড তদন্ত করে আমার মাত্র ১০ বিঘা জমির অস্তিত্ব পেয়েছে। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে যে টাকা ব্যাংকে আছে সেটা আমার শ্বশুর যশোর চুড়ামনকাঠি বাজারে তার নিজের নামীয় সম্পত্তি বিক্রি করে তার মেয়েদের নামে রেখে দিয়েছেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হিসাবে ভাতা পাই, আমার আখ চাষ ও আখের ব্যবসা আছে। এছাড়াও আমি একজন দলিল লেখক। সব মিলিয়ে বিভিন্ন খাত থেকে বছরে অনেক টাকাই আয় হয়। আমি কোন দুর্নীতি করি না, কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মিনি নামে এক ভাইপো আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। সেই টাকা চাওয়ার কারণে সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিচ্ছে বিভিন্ন্‌ জায়গায়। এর আগে এক অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। আগামী ৫ই নভেম্বর তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে হাজিরা দিতে যাবেন বলে স্বীকার করেছেন। চেয়ারম্যান ও দলিল লেখক নাসির চৌধুরী তার ভাইপো মিনির কাছে যে ৬০ লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করছেন সে ব্যাপারে তার কছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মিনির নিকট ৬০ লাখ টাকাই পাবো। কিন্তু মিনি আমার টাকা দিচ্ছে না। এই টাকার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রচণ্ড রেগে বলেন, আমিতো চুরি ডাকাতি করে বেড়াই। ফেনসিডিল, মদ এসব বেচে বেড়াই। এছাড়া আপনার যা যা মনে চায় লিখে দেন সেটা আপনার ইচ্ছা তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। সূত্র: মানবজমিন।



এ পাতার আরও খবর

বাংলাদেশে গুম ও সহিংসতার অভিযোগে ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাংলাদেশে গুম ও সহিংসতার অভিযোগে ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
গুম, খুন ও মব সহিংসতার ছায়ায় বাংলাদেশ: মানবাধিকার রক্ষার নামে ক্ষমতা আকড়িয়ে থাকার কৌশল? গুম, খুন ও মব সহিংসতার ছায়ায় বাংলাদেশ: মানবাধিকার রক্ষার নামে ক্ষমতা আকড়িয়ে থাকার কৌশল?
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তির রক্ষা-জিএমআরবি হুমকির প্রেক্ষাপট প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তির রক্ষা-জিএমআরবি হুমকির প্রেক্ষাপট
সারজিস আলমের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসা থেকে ৩ বস্তা টাকা উদ্ধার: রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সারজিস আলমের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসা থেকে ৩ বস্তা টাকা উদ্ধার: রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়
একজন গুমের শিকার সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা একজন গুমের শিকার সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা
বাংলাদেশে মবের শাসন: যখন রাষ্ট্র নীরব, তখন জনতা হয়ে ওঠে জল্লাদ বাংলাদেশে মবের শাসন: যখন রাষ্ট্র নীরব, তখন জনতা হয়ে ওঠে জল্লাদ
গণপিটুনি: ধর্ষণ আইনহীনতার ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি ইউনুসের শাসনকাল গণপিটুনি: ধর্ষণ আইনহীনতার ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি ইউনুসের শাসনকাল
ভিআইপি রুম না পেয়ে যুবদল নেতার অনুসারীদের বার ভাঙচুর, নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ ভিআইপি রুম না পেয়ে যুবদল নেতার অনুসারীদের বার ভাঙচুর, নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ
কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান সফল, নিহত ‘মেজর’সহ উদ্ধার বিপুল অস্ত্র কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান সফল, নিহত ‘মেজর’সহ উদ্ধার বিপুল অস্ত্র
সদ্য অবসরে যাওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার বিপুল সম্পদের মালিকানা নিয়ে রহস্য সদ্য অবসরে যাওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার বিপুল সম্পদের মালিকানা নিয়ে রহস্য

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)