শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

Daily Pokkhokal
মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » শহীদ শেখ রাসেল এর জীবনবৃত্তান্ত
প্রথম পাতা » রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » শহীদ শেখ রাসেল এর জীবনবৃত্তান্ত
৫৬০ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

শহীদ শেখ রাসেল এর জীবনবৃত্তান্ত

  • তখন হেমন্তকাল, সময়টা ১৮ই অক্টোবর ১৯৬৪। নবান্নের নতুন ফসলের উৎসবে আগমন নতুন অতিথির। এ যেন বাঙালীর আনন্দ, বাংলার আনন্দ। ধানমন্ডির সেই ঐতিহাসিক ও ভয়ানক ৩২ নম্বর রোডের বাসায় শেখ হাসিনার রুমেই রাতে দেড়টায় জন্ম হয় রাসেলের। রাসেলের আগমনে পুরো বাড়ি জুড়ে বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার। একটু বড়সড়ই হয়েছিলো শিশু রাসেল। জন্মের কিছুক্ষন পরেই সকলকে জানানো হয়। পরে বোন হাসিনা এসে তার ওড়না দিয়ে ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন।

  • নামকরণ

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত। তাঁর অনেক বই তিনি পড়েছেন। বার্ট্রান্ড রাসেল কেবলমাত্র একজন দার্শনিকই ছিলেন না বিজ্ঞানীও ছিলেন। ছিলেন পারমাণবিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের বিশ্ব নেতাও। বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্যে বার্ট্রান্ড রাসেল গঠন করেছিলেন—”কমিটি অব হানড্রেড”। রাসেলের জন্মের দু’বছর পূর্বে ১৯৬২ সালে কিউবাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেফ-এর মধ্যে স্নায়ু ও কূটনৈতিক যুদ্ধ চলছিল। যেটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই বিশ্বমানবতার প্রতীক হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল। আর তাঁরই আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম করন করেন রাসেল।

  • বেড়ে ওঠা

    শিশু রাসেল ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। রাসেলের জন্মের পর থেকেই বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে নানান কারনে জেলবাস করতেন। তাই শিশু রাসেলের বাবার সান্নিধ্য পাবার সুযোগ খুব কমই হয়েছে। রাসেলের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী ছিলো তার হাসুপা (শেখ হাসিনা)। তার সমস্থ সময়ই জুড়েই ছিলো হাসুপা। রাসেল হাসুপা’র চুলের বেনী ধরে খেলতে পছন্দ করতো। সে চুল ধরে নাড়াতো আর ফিক ফিক করে হাসতো। রাসেলের হাটা শুরুও হাসুপা’র হাত ধরেই তাও আবার একদিনেই। এটি একটি বিরল ঘটনা। আসলে রাসেলের সবকিছুই একটু ব্যতিক্রম ছিলো, আর থাকবে নাই বা কেন? সে যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর কনিষ্ঠ পুত্র। তার শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরাতেই ছিলো ব্যতিক্রমতা।

  • টমি এবং ঘেউ ঘেউ

    বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটি পোষা কুকুর ছিলো টমি নামে। সবার সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব ছিল। ছোট্ট রাসেলও টমিকে নিয়ে খেলতো। একদিন খেলতে খেলতে হঠাৎ টমি ঘেউ ঘেউ করে ডেকে ওঠে, রাসেল ভয় পেয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে রেহানার কাছে এসে বলে, টমি বকা দিয়েছে। তার কথা শুনে বাসার সবাই তো হেসেই খুন। টমি আবার কিভাবে বকা দিল। কিন্তু রাসেল বিয়য়টা খুব গম্ভিরভাবই নিয়েছিলো। টমি তাকে বকা দিয়েছে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, কারণ টমিকে সে খুব ভালোবাসতো। হাতে করে খাবার দিত। নিজের পছন্দমতো খাবারগুলো টমিকে ভাগ দেবেই, কাজেই সেই টমি বকা দিলে দুঃখ তো পাবেই।

  • ৭ বছর বয়সে

    রাসেলের তার বাবাকে পাবার সুযোগ খুব কমই হয়েছে, তাই বাবাকে যখনই কাছে পেত সারাক্ষন তার পাশে ঘোরাঘুরি করত। খেলার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে এক পলকের জন্য হলেও দেখে আসতো। এরই মাঝে জন্ম হয় শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের। জয়কে পেয়ে তো রাসেল মহা খুশি। সে তার খেলার নতুন এক সঙ্গী পেয়ছে। সারাটা সময়জুড়েই জয়ের সাথে মেতে থাকতো রাসেল। এরই মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু রাসেলের তার নিজেকে নিয়ে চিন্তা নেই, তার সমস্ত চিন্তা জয়কে নিয়ে। কারন তাদের বাসার ছাদে বাংকারের মেশিন বসানো ছিলো। ফলে দিনরাত গোলাগুলিতে প্রচন্ড আওয়াজ হতো আর তাতে শিশু জয় বারবার কেঁপে কেঁপে ওঠতো। আর এ ব্যাপারে রাসেল খুবই সচেতন ছিলো। যখনই সাইরেন বাজত বা আকাশে মেঘের মতো আওয়াজ হতো,রাসেল তুলা নিয়ে এসে জয়ের কানে গুঁজে দিত। সব সময় পকেটে তুলা রাখত। রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল, কিন্তু সে মাছ ধরে আবার তা পুকুরেই ছেড়ে দিত। এতেই সে মজা পেত। আসলে এটাই তার খেলা।

  • রবীন্দ্র উপসর্গ; স্কুলে যাবার ব্যাপারে আপত্তি

    রাসেলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তার স্কুলে যাবার ব্যাপারে ছিলো আপত্তি। মাঝে মাঝেই সে স্কুলে যেতে চাইতো না। পরে তাকে পড়ানোর জন্য একজন ভদ্র মহিলাকে নিযুক্ত করা হয়। রাসেল তার কাছেই পড়া শিখতো। আর রাসেলও তার শিক্ষিকার সুবিধা অসুবিধার খেয়াল রাখতো।

  • জেনারেল রাসেল এবং তার বাহিনী

    রাসেলের ছিলো নেতৃত্বসুলভ আচরন। ঢাকায় তার খেলার সাথী তেমন একটা ছিলো না কিন্তু যখন তারা টঙ্গিপাড়ায় বেড়াতে যেত, সেখানে তার খেলার সাথি ছিলো অনেক। সেই বাচ্চাদের জড়ো করতো এক জায়গায়, তাদের জন্য খেলনা বন্দুক বানাতো আর সেই বন্দুক হাতেই তাদের প্যারেড করাতো। আসলে রাসেলের পরিবেশটাই ছিলো এমন। রাসেলের খুদে বাহিনীর জন্য জামা-কাপড় ঢাকা থেকেই কিনে দিতে হতো। প্যারেড শেষে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা থাকতো। তখন যদি রাসেলকে কেউ জিজ্ঞেস করতো বড় হয়ে তুমি কি হবে? রাসেল বলতো ‘আর্মি অফিসার হবো’।

  • পছন্দের প্রিন্স স্যুট

    রাসেল পোষাকের ব্যপারে আগ্রহী ছিলো। নতুন পোষাক খুব পছন্দ করতো। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু যে পোষাক পরতো রাসেলও তা পছন্দ করতো বলতে গেলে অনুসরন করতো। বিভিন্ন সময়েই রাসেল তার বাবার সাথে নানান প্রোগ্রামে যেত তাই তার মা রাসেলকে একটা প্রিন্স স্যুট বানিয়ে দেন যাতে বাবার সাথে তাকে খুব সুন্দর মানায়।

  • জাপান সফর

    মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপান বাংলাদেশকে নানানভাবে সাহায্য করে, তাই যুদ্ধ শেষে সেই জাপান বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকেই জাপানে আমন্ত্রন জানায়, বিশেষ করে রাসেলের কথা উল্যেখ করে। সেই সফরে রাসেল ও তার বোন রেহানা জাপান যায়। সেখানে রাসেলের জন্য বিশেষ কর্মসূচিরও আয়োজন করা হয়। সেই সফরে রাসেল অনেক আনন্দ করেছিলো। সারাটা সময় রাসেল সেখানে খুব ব্যস্ত সময়ই পার করে কিন্তু রাতে তার মায়ের কথা খুব মনে পরতো, ফলে তার মন খারাপ হয়ে যেত।

  • মপেট মটরসাইকেল এক্সিডেন্ট

    একবার রাসেলের বড় একটি এক্সিডেন্ট হয়। তখন রাসেলের ছোট একটি সাইকেল ও একটি ছোট মপেট মটরসাইকেল ছিলো। সেটি নিয়ে সে কখনও বাসায় কখনও রাস্তায় ঘোরাঘুরি করত। পাশের বাসার দুটো ছেলে আদিল ও ইমরান দুইভাই রাসেলের সঙ্গে খেলতো। একদিন মপেট মটরসাইকেল চালানোর সময় রাসেল পরে যায় আর তার পা সাইকেলের সঙ্গে আটকে যায় সাইকেলের পাইপের সাথে। তখন হাসুপা রাসেলের কান্নার আওয়াজ পেয়ে চিৎকার করে সাবাইকে ডাকে। সেই ক্ষতটা অনেক গভীর ছিলো, অনেকদিন পর্যন্ত সে ঘা শুকায়নি। পরে বঙ্গবন্ধুর অসুস্থতার কারনে তাকে রাশিয়া যেতে হয় চিকিৎসার কারনে তখন রাসেলের পায়ের চিকিৎসাও করানো হয়।

  • ইস, সেদিন যদি হাসুপা’র সাথে জার্মানী যেত ….

    সময়টা ১৯৭৫, আগষ্টের কিছুদিন আগে। হাসুপা তার স্বামীর কাছে জার্মানী চলে যাবেন। সাথে বোন রেহানাও যাবে। অবশ্য হাসুপা তার সঙ্গে রাসেলকেও নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তখন রাসেলের শরীরের অবস্থা খুব ভালো ছিলো না, তার জন্ডিস ধরা পরেছিলো। তাই সেদিন আর রাসেলের তার হাসুপা’র সাথে যাওয়া হয়নি। আর এটাই হয়তোবা শিশু রাসেলের জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো। ঐদিন শিশু রাসেল যদি হাসুপা’র সাথে জার্মানী যেত তাহলে হয়তো তাকে অমানবিকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন দিতে হতো না।



এ পাতার আরও খবর

নানা আয়োজনে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি নানা আয়োজনে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি
রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত
পুতিনের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক প্রতিরোধকে জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুনাক পুতিনের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক প্রতিরোধকে জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুনাক
মস্কোর কনসার্ট হলে হামলায় আদালতে  তিনজন সন্দেহভাজন দোষী সাব্যস্ত মস্কোর কনসার্ট হলে হামলায় আদালতে তিনজন সন্দেহভাজন দোষী সাব্যস্ত
কনসার্ট হল গণহত্যার সন্দেহভাজনদের আদালতে হাজির, মৃতের সংখ্যা বাড়ছে কনসার্ট হল গণহত্যার সন্দেহভাজনদের আদালতে হাজির, মৃতের সংখ্যা বাড়ছে
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ‘চীনা হস্তক্ষেপ “নিয়ে নিষেধাজ্ঞার দিকে নজর দেবে যুক্তরাজ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ‘চীনা হস্তক্ষেপ “নিয়ে নিষেধাজ্ঞার দিকে নজর দেবে যুক্তরাজ্য
মস্কো হামলার পর ইসলামিক স্টেট নিয়ে যুক্তরাজ্যের ‘একেবারে’ উদ্বিগ্ন হওয়া উচিতঃ হান্ট মস্কো হামলার পর ইসলামিক স্টেট নিয়ে যুক্তরাজ্যের ‘একেবারে’ উদ্বিগ্ন হওয়া উচিতঃ হান্ট
ন্যাটোর মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে ‘সরাসরি যুদ্ধ’ বাধাগ্রস্ত করার জন্য মর্মান্তিক সতর্কতা জারি করেছে ন্যাটোর মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে ‘সরাসরি যুদ্ধ’ বাধাগ্রস্ত করার জন্য মর্মান্তিক সতর্কতা জারি করেছে
চীনের  গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোমবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ব্রিটেন চীনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোমবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ব্রিটেন
রমজানে হামলা সহিংসতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে রমজানে হামলা সহিংসতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)