শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

Daily Pokkhokal
শুক্রবার, ১৯ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » বিনোদন » সাহসের অন্য নাম জহির রায়হান
প্রথম পাতা » বিনোদন » সাহসের অন্য নাম জহির রায়হান
২৩২ বার পঠিত
শুক্রবার, ১৯ আগস্ট ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সাহসের অন্য নাম জহির রায়হান

---

পক্ষকাল ডেস্কঃ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক জহির রায়হান জন্মেছিলেন ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট, ফেনীতে। আগামীকাল তাঁর ৮১তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা…

জহির রায়হানএকটি দেশ/একটি সংসার/একটি চাবির গোছা/একটি আন্দোলন/একটি চলচ্চিত্র…
এই স্লোগান নিয়ে ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানে মুক্তি পেল একটি ছবি-জীবন থেকে নেয়া। বাংলাদেশ তখনো পূর্ব পাকিস্তান। ছবির নির্মাতা জহির রায়হান।
এই ছবিতে জহির রায়হান পুরো পাকিস্তানকে একটি ঘরে এনে দেখালেন। আইয়ুব খান ও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শোষণকে একটি সংসারের ভেতর প্রতীকায়িত করলেন তিনি। দেখালেন, ছবির সাজানো সংসার যেমন একনায়ক গৃহকর্ত্রীর কর্তৃত্বে টিকল না, তেমনি পাকিস্তানও টেকার নয়। এই ছবিতে ভাষা আন্দোলনের কথা ছিল, ছিল রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান। মাত্র এক বছর পরে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধে এসবই ছিল বাঙালির প্রেরণা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ছবিতে ব্যবহৃত ‘আমার সোনার বাংলা’ হয় আমাদের জাতীয় সংগীত।

জীবন থেকে নেয়া মুক্তির আগে জহির রায়হানকে বন্ড দিতে হয়েছিল, যদি এই ছবি মুক্তির পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, তার সব দায়ভার জহির রায়হান নেবেন। ঋত্বিক ঘটক সে সময় এমন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সাহস দেখিয়েছিলেন বলে জহির রায়হানের প্রশংসা করেছিলেন পরবর্তী সময়ে।

জীবন থেকে নেয়াই জহির রায়হানের একমাত্র কীর্তি নয়। ১৯৬৪ সালে তাঁর নির্মিত উর্দু ছবি সঙ্গম ছিল সমগ্র পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি। ১৯৬৫ সালে নির্মিত তাঁর ছবি বাহানা পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র। ‘মনসামঙ্গল’ পুরাণ থেকে নির্মিত বেহুলা চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বরে। আগস্টে মুক্তি পাওয়া সালাউদ্দিন নির্মিত রূপবান-এর পথ ধরে বেহুলাও প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়। এ দুটি ছবিই ছিল বাংলার লোকজ কাহিনি থেকে নির্মিত। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ভিত গড়ে দিয়েছিল ছবিগুলো। এ ছবি দুটি দিয়েই ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় হতে শুরু করে বাংলাদেশের ছবি। জহির রায়হান নির্মিত অন্য চলচ্চিত্রগুলো হলো কখনো আসেনি, সোনার কাজল, কাচের দেয়াল, আনোয়ারা। এ ছাড়া প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবেও তিনি কয়েকটি ছবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

লেট দেয়ার বি লাইট নামে একটি ইংরেজি চলচ্চিত্রের নির্মাণও শুরু করেছিলেন জহির রায়হান। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় এটি আর শেষ করতে পারেননি তিনি। একজন নির্মাতা হিসেবে ক্যামেরা হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। কলকাতায় গিয়ে শুরু করেন স্টপ জেনোসাইড-এর শুটিং। এ চলচ্চিত্র সারা বিশ্বকে স্তম্ভিত করেছিল। ছবিটি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা ও ভারতে বাংলাদেশি শরণার্থীদের মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরেছিল।

জহির রায়হান অন্যান্য ভূমিকাতেও সমুজ্জ্বল। প্রথম জীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দশ জনের খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়েছিল। প্রথম দশজনের মধ্যে ছিলেন জহির। সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সাহিত্যিক হিসেবেও যথেষ্ট নাম কুড়িয়েছিলেন জহির রায়হান। তাঁর লেখা কয়েকটি উপন্যাস হলো শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কতদিন, কয়েকটি মৃত্যু, তৃষ্ণা। এ ছাড়া অনেকগুলো ছোটগল্প লিখেছেন তিনি।

জহির রায়হান সাংবাদিকতাও করেছেন। যুক্ত ছিলেন সমকাল, চিত্রালী, সচিত্র সন্ধানী, সিনেমা, যুগের দাবী পত্রিকাগুলোর সঙ্গে।

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে জহির রায়হান ১৯৭১-এর ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ফিরে আসেন। বড় ভাই সাহিত্যিক-সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার ১৪ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ। জহির তাঁর বড় ভাইকে খুঁজতে লাগলেন। এমন সময় খবর পেলেন, শহীদুল্লা কায়সার মিরপুরে আটক আছেন। জহির রায়হান মিরপুরে যান। ১৯৭২-এর ৩০ জানুয়ারির পর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)