পক্ষকাল প্রতিবেদক
শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০০২৫
নববর্ষের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পাল্টে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।
আকস্মিকভাবে নামের এ পরিবর্তনকে মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে বর্ণনা করে বিষয়টিকে ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর’ কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘আত্মসমর্পণ’ বলছে সংগঠনগুলো। কর্তৃপক্ষকে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পরিবর্তনের প্রসঙ্গ ওঠার পর থেকেই নানা আলোচনা চলছিল। নতুন বছর শুরুর তিন দিন আগে শুক্রবার ওই শোভাযাত্রার নাম ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করার সিদ্ধান্ত জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম।
নাম পরিবর্তনের এ সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, “সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালনের কাছে নতজানু হয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন দেশের মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য অশনি সংকেত। স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে দ্রোহের মশাল জ্বেলে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রায় ক্রমেই আপামর জনতা ‘একাত্ম হয়েছিল’। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি এই মঙ্গল শোভাযাত্রা যেখানে সকল ধর্ম-বর্ণ-জাতির নির্বিশেষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
“তার বিপরীতে বারবার বিভিন্ন মৌলবাদী শক্তির আস্ফালন ও শাসকশ্রেণির কূটকৌশল, নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে এর গণচরিত্রে চিড় ধরানোর অপচেষ্টার নজিরও আমরা দেখেছি। বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের আমলেও আমরা দেখেছি এই শোভাযাত্রার প্রতিবাদী চরিত্রকে হরণ করা হয়েছিল।”
এবার অভ্যুত্থান পরবর্তীতে বর্ষবরণ অন্য সময়ের তুলনায় আরও প্রাণবন্ত হওয়ার ‘প্রত্যাশার’ কথা তুলে ধরে ছাত্র ফ্রন্টের বার্তায় বলা হয়, “কিন্তু শুরু থেকেই আমরা দেখেছি চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী-শিক্ষকের স্বতন্ত্র এই আয়োজনে সরকার নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, যা ইতিপূর্বে কখনও ঘটেনি। সবশেষ নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তও সেই হস্তক্ষেপের অংশ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির প্রতিফলন।”
শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রত্যাখান করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ঐতিহ্যবাহী বাংলা নববর্ষ বরণের শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন ‘ফ্যাসিস্ট সাম্প্রদায়িক মবের কাছে’ অন্তবর্তীকালীন সরকারের ‘অসহায় আত্মসমর্পণ’। ঐতিহাসিকভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের বিশাল কর্মযজ্ঞ শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রয়াসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলেও এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় চারুকলার শিক্ষকদের মধ্যে।
“সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ন্যূনতম সুযোগটুকু তারা রাখেননি। মোটিফ তৈরি বিষয়ক নানাবিধ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত তারা শিক্ষার্থীদের মতের বিপরীতে গিয়ে গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে গণরোষের মুখে পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।”
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি যে এবারের আয়োজনে থাকবে না, তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগেই। শুক্রবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম ঘোষণা করেন, শোভাযাত্রার নতুন নাম হল ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
আয়োজন সংশ্লিষ্টরা অবশ্য নাম বদল না বলে, এটাকে ‘পুনরুদ্ধার’ বলছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আজহারুল বলেন, “আগেও পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রাটি হত, তার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। সেটি পরে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়েছিল। আমরা আবার ‘আনন্দ শোভাযাত্রায়’ ফিরে গেলাম। এটাকে পুনরুদ্ধার বলা যেতে পারে।”