শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

Daily Pokkhokal
মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » সম্পাদক বলছি » বিষন্নতা এমন একটি রোগ
প্রথম পাতা » সম্পাদক বলছি » বিষন্নতা এমন একটি রোগ
৪৬৬ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিষন্নতা এমন একটি রোগ

 ---

মনির হোসেন সাভার বিষন্নতা এমন একটি রোগ, যে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আবেগ-অনুভূতি এবং চিন্তা-চেতনার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। সব সময় তারা পৃথিবীকে অশান্তিময় মনে করেন এবং দীর্ঘমেয়াদি মন খারাপ ভাব বিদ্যমান থাকে। বিষণ্নতা মানসিক রোগগুলোর মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ এবং ধ্বংসাত্মক একটি রোগ। কারণ এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি জীবন চলার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে এবং কোনো কোনো রোগী অবলীলায় আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তি পেতে চেষ্টা করে এবং কখনো কখনো সফল হয়। তাই আর কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো বিষণ্নতা রোগটি পৃথিবীতে এক নম্বর ‘কিলার ডিজিজ’ হিসেবে পরিচিতি পাবে। যেকোনো লোক যেকোনো সময়ে বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শতকরা ১০০ ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যেতে পারে। এ রোগটির স্থায়িত্বকাল স্বল্প সময় থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হতে পারে। মাত্রায় এর আবার রকমফের হয়, যা কম মাত্রা থেকে দীর্ঘ মাত্রায় হতে পারে।
মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, ভালো লাগা, মন্দ লাগা প্রভৃতি নিয়েই গঠিত। যারা সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তি তারা তাদের প্রতিদিনের এই সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা প্রভৃতি বিষয়গুলো খুব সহজেই ম্যানেজ করে চলতে পারেন। কিন্তু যারা বিষণ্নতা রোগে ভোগেন তারা এগুলো সহজে ম্যানেজ করে চলতে পারেন না। কারণ বিষণ্নতা রোগটি ব্যাপকভাবে তাদের মন এবং মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে। ফলে তারা চিন্তা-চেতনা, আনন্দ-বেদনা, আবেগ-অনুভূতি প্রভৃতির স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলে। দেখা যায়, কোনো আনন্দদায়ক কাজে এরা আনন্দ পাচ্ছে না। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। উল্লেখ্য, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মনোযোগ বা কাজকর্মের দক্ষতা আগের চেয়ে অনেক কমে যায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন ক্রমান্বয়ে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। বিষণ্নতা রোগে যিনি ভুগছেন তিনিই জানেন কী অবর্ণনীয় কষ্ট তার মন, মস্তিষ্ক তথা সমস্ত শরীরে হয়। এটি ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো সম্ভব নয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এসব রোগীর জীবন আরো বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। মানসিক রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা, সচেতনতার অভাব, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও কুসংস্কার এর জন্য দায়ী। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এসব রোগীকে ঝাড়-ফুঁক ও পানি পড়া দিয়ে যারা (ওঝা, ফকির, কবিরাজ, দরবেশ) চিকিৎসা করে থাকেন তাদের শরণাপন্ন হতো। এতে রোগীর কোনো কাজ তো হয়-ই না বরং সময় নষ্ট হয় এবং বিভিন্ন অপচিকিৎসায় রোগীর কষ্ট আরো অনেক বেড়ে যায়। একজন মনোচিকিৎসক বা মানসিক রোগবিশেষজ্ঞই পারেন বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীকে আবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে।
বিষন্নতা রোগের কারণ
অনেক কারণেই বিষণ্নতা রোগটি হতে পারে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে­ পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত, পারিপার্শ্বিকতার চাপ, বংশগত, অত্যধিক মানসিক চাপ, বেকারত্ব, প্রেম সংক্রান্ত জটিলতা, যৌন সমস্যা, আর্থিক সমস্যা প্রভৃতি। অনেক শারীরিক রোগের কারণেও এ রোগ হতে পারে।
বিষন্নতা রোগের উপসর্গ
দীর্ঘমেয়াদি অশান্তিবোধ, দুর্বিষহ জীবন, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের অভাব, চিন্তা করতে না পারা, মনোযোগ দিতে না পারা, খিটখিটে মেজাজ, অরুচি বা রুচি বেড়ে যাওয়া, হজমের গণ্ডগোল, যৌনতা সম্পর্কে উৎসাহ কমে যাওয়া, মাথাব্যথা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও স্বাস্থ্যহীনতা, সব কিছু হারানোর ভয়, নিজেকে অপরাধী ভাবা, সারাদিন বিষণ্ন অনুভূতি, কাজ-কর্মের ধীরগতি, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, অস্থিরতা বা স্থবিরতা, মৃত্যু চিন্তা আসা, সব সময় মনে হয় এই মৃত্যু হবে, আত্মহত্যার চিন্তা করা বা আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো প্রভৃতি।
বিষন্নতা রোগের চিকিৎসা
বিষন্নতা রোগটির বর্তমানে অনেক নতুন ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সহজ হয়েছে ও রোগ নিরাময় দ্রুততর হয়েছে। মনোচিকিৎসকরা নিশ্চিত করেই বলেছেন, বিষন্নতা রোগে আক্রান্ত রোগীর শতকরা ১০০ ভাগই ভালো হয়ে যায়। মনোচিকিৎসকরা প্রথমেই বিষন্নতাবিরোধী ওষুধ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে খাওয়ার পরামর্শ দেন। সাধারণত এই জাতীয় ওষুধ খাওয়ার ২১ দিনের মাথায় উন্নতি পাওয়া যায়। মনোচিকিৎসকরা রোগীর উন্নতি পর্যবেক্ষণ করে ওষুধের ডোজ ধীরে ধীরে কমিয়ে পরে তা বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি, আলো থেরাপি, ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপি প্রভৃতি অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। তাই বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীকে মনোচিকিৎসকের পরামর্শক্রমে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করতে হবে



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)