“এনসিপি: এক বিপজ্জনক রাজনৈতিক বিভ্রম”
সম্পাদকীয় পাতায় মতামত
“এনসিপি: এক বিপজ্জনক রাজনৈতিক বিভ্রম”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে উদিত তথাকথিত ছাত্রভিত্তিক রাজনৈতিক দল এনসিপি (ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন পার্টি) নিজেরাই নিজেদের ভ্রান্তির বলয়ে নিপতিত হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী গণআন্দোলনের নামে শুরু হওয়া এ উদ্যমটি শুরুতেই কিছু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও আজ সেটি পরিণত হয়েছে এক বিভ্রান্তিকর, আত্মবিরোধী ও বিপথগামী চক্রে।
একটি রাজনৈতিক দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আদর্শগত স্বচ্ছতা ও নৈতিক নেতৃত্ব। কিন্তু এনসিপি গঠনের শুরুতেই এর পেছনে থাকা পরিকল্পনা, নেতৃত্ব এবং সম্পর্কের যে তথ্য উঠে এসেছে-তা জনগণকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
শুরুতেই দলটির ড. ইউনুসের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ পরামর্শে গঠিত হওয়ার গুজব গণমানুষের মধ্যে একধরনের অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কিত এমন একজন ব্যক্তির ছায়া যখন একটি ছাত্র দল গঠনের পেছনে দেখা যায়, তখন সেটি জনস্বার্থে সন্দেহের উর্ধ্বে থাকে না।
জামায়াত ও চরমোনাই ঘরানার সঙ্গে এনসিপি শীর্ষ নেতাদের দহরম-মহরম, সাইদীর স্মরণসভায় অংশগ্রহণ, এবং শাহাবাগের মঞ্চে গোলাম আজমের নামে শ্লোগান-এসব শুধুই ঘটনাবহুল নয়, এগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রাজনৈতিক চেতনার পরিপন্থী। এদের মাধ্যমে প্রজন্মের রাজনৈতিক বোধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
দলের ভেতরে নারী সহকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ, চাঁদাবাজি, মন্ত্রণালয়ে ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, দলীয় ভেতরে অনৈক্য ও কনসিসটেন্সির অভাব, এসব এনসিপিকে একটি ‘কিংস পার্টি’ সুলভ সুবিধাবাদী প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে।
এমনকি মাঠপর্যায়ে এনসিপির নাম জড়িয়েছে মব জাস্টিসের সংস্কৃতি, গোপালগঞ্জ মার্চের মতো উস্কানিমূলক কর্মসূচি এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরির সঙ্গে। এই দলটির কর্মকাণ্ড রাজনীতি নয়-এটা এক ধরনের নব্য ফ্যাসিস্ট দখলদারিত্বের অপচেষ্টা।
আজ এনসিপির মূল প্রশ্ন হচ্ছে: তাদের আদর্শ কী? তারা কার পক্ষ? জনগণের নাকি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর? দুঃখজনকভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অনুপস্থিত। বরং তারা নিজেদের এমন এক রাজনৈতিক সত্তায় দাঁড় করিয়েছে, যেখানে গোঁড়ামি, প্রতারণা, সহিংসতা ও স্ববিরোধিতা মিলেমিশে এক ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে।
আমরা দৈনিক পক্ষকাল মনে করি-
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির এই পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির মতো বিভ্রান্তিকর ও হঠকারী দল সমাজে আরও বিভাজন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। এদের রাজনৈতিক বিভ্রমকে এখনই প্রতিহত করতে হবে।
জনগণকে আহ্বান জানাই-
এই সুবিধাবাদী, বিভ্রান্তিকর, প্রতারক রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন।
রাজনীতিকে শুদ্ধ করতে হলে, ছদ্মবেশী রাজনীতিকদের মুখোশ উন্মোচন করুন।
রাজনীতির নামে প্রতারণা নয়-আমরা চাই আদর্শ, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব।
দৈনিক পক্ষকাল সম্পাদকমণ্ডলী
তারিখ: ২৮ জুলাই ২০২৫
বিভাগ: মতামত
“দৈনিক পক্ষকাল”-সাহসী সাংবাদিকতার নির্ভেজাল দুঃসাহসী প্রতিক।