
রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » নাহিদুল ইসলাম: বাংলাদেশের জুলাই গণআন্দোলনের নীরব প্রতিরোধের প্রতীক
নাহিদুল ইসলাম: বাংলাদেশের জুলাই গণআন্দোলনের নীরব প্রতিরোধের প্রতীক
লামিয়া ইসলাম, ঢাকা ২৭ জুলাই ২০২৫
২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক গণজাগরণ গড়ে ওঠে—এক নাগরিক উদ্দীপনা, যা অটল কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনকে নতুন মাত্রা দেয়। সেই উত্তাল অভিযানের মাঝেই তোলা হয় একটি ছবি: এক পুলিশ সদস্য তরুণের ঠোঁট চেপে ধরেছে, কিন্তু সে নিরব প্রতিবাদ হাতে ছেড়ে দেয়নি। সেই তরুণ হলেন নাহিদুল ইসলাম।
নাহিদুল তখন একজন সাধারণ ছাত্র। আর তার নিঃশব্দ প্রতিবাদ—রাষ্ট্রের হিংসার মুখে দৃঢ় অচলতার প্রতিচ্ছবি—মহাসড়কের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠে। ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও স্থান পায়।
অনেকে ভেবেছিল নাহিদুল তার এই জনপ্রিয়তাকে আদায় করবে—রাজনৈতিক পদ, মিডিয়ায় সুযোগ, সামাজিক মর্যাদার উচ্চতা। কিন্তু নাহিদুল সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অনাস্থিত আলো থেকে সরে দাঁড়ান।
তার নিরবতা paradoxically গম্ভীর বার্তা পাঠায়। যখন অধিকাংশ মানুষ লাইমলাইটের পেছনেই ছুটে ফিরে, তখন নাহিদুলের একাকিত্বই অবিচল প্রতিবাদের সর্বোচ্চ প্রকাশ। সে ব্যক্তিগত সুবিধায় নয়, ন্যায়বোধে দাঁড়িয়েছিল।
এক বছর পেরোনোর পরও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবুও একটি সত্য স্পষ্ট: প্রতিরোধ শুধুমাত্র সড়কে তৈরি হয় না—এটি গড়ে ওঠে চরিত্রে। আর নাহিদুল সেই চরিত্রের নিঃসন্দেহ প্রতিনিধিত্ব।
যুবসমাজ স্বীকৃতি খোঁজে, জনপ্রিয়তা চাই—তবুও restraint হতে পারে সবচেয়ে বিপ্লবী অঙ্গীকার। নাহিদুলের চুপচাপ প্রত্যাখ্যানই তার সেরা জয়গাথা।
ঢাকা ব্যুরো
নীরব প্রতিরোধের গৌরব
২০২৪ সালের জুলাইতে বাংলাদেশের মহানাগরিক আন্দোলন ইতিহাসে স্থান করে নিল। সেই আন্দোলনের মুখর ভূমধ্যরেখার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল একটি নিঃশব্দ প্রতিবাদের প্রতীক—নাহিদুল ইসলাম। তার ঠোঁট চেপে ধরা ছবিটি শুধুই ভ্যাকুয়ামের মধ্যে আটকে থাকা একটি মুহূর্ত নয়; এটি ছিল রাবণের অশ্বাশপীড়ের মতো রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের সামনে অচঞ্চল থাকা এক তরুণের সংকল্পের প্রতীক।
নীরব প্রতিরোধের শক্তি কি শুধুমাত্র শব্দহীনতা? নাহিদুলের চুপ থাকা মানে ছিল ভয় কিংবা অনীহা নয়। বরং নিজ দর্শন ও ন্যায়বোধের প্রতি অবিচল থাকার প্রত্যয়। দিনের আলো থেকে সরে গিয়ে, লাইমলাইটের লোভ এড়িয়ে, সে দেখালো—কখনো কখনো মুখের শব্দের চেয়ে কাজের নীরবতা বেশি শক্তিশালী বার্তা বহন করে।
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক তরুণ নেতৃত্ব খোঁজে সামাজিক মর্যাদা, মিডিয়ার স্বীকৃতি বা ক্ষমতার ছায়া। কিন্তু নাহিদুল তার স্বাধীনতা রক্ষা করলেন খ্যাতির ফাঁদে আটকে না পড়ে। তার এই সংকল্প শেখায়: চরিত্র ও নৈতিকতা কখনো বিক্রয়যোগ্য নয়। ব্যক্তি যখন স্বার্থের বদলে আদর্শকে প্রাধান্য দেয়, তখন সেই আদর্শই বিস্মৃত বিপ্লবকে যুগান্তকারী করে তোলে।
আমাদের দায়িত্ব হলো এই নিঃশব্দ প্রতিবাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা। মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের উচিত নাহিদুলের মতো নীরব প্রতিরোধের গল্পকেই সামনে তুলে ধরা, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কলঙ্কমুক্ত পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। রাজনীতি ও নীতি-নীতিমালায় যখন অনিশ্চয়তা বাড়ে, তখন নীরবতা থেকে শিক্ষা নেয়াই হতে পারে সবচেয়ে শক্ত ভিত্তি।
জুলাইয়ের আন্দোলন শুধু রাস্তায় সরবতা সৃষ্টি করেনি, চরিত্রের জোরেও গণমানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। সেই চরিত্রের অন্যতম প্রতিনিধির নাম নাহিদুল ইসলাম। তার নীরবতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—সত্য, ন্যায় ও অধিকার কখনো বিক্রয় করা যায় না। এই বছরপেরোনোর পরও যদি একটি প্রশ্ন থেকে যায়, তা হলো: আমরা কি সেই নীরবতার মতোই দৃঢ় থেকে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অটল থাকতে পারি?