মতামত: ‘জুলাই সনদ’—বাস্তব ষড়যন্ত্র
‘জুলাই সনদ’ নিয়ে তোলপাড় অনেক: কেউ এটিকে গণতন্ত্রের এক নতুন রূপ রূপকল্প হিসেবে দেখেন, কেউ আবার এটিকে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ভাঙতে ‘বিদেশি এজেন্ট’র মঞ্চ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যখন জনগণের জানার অধিকার রুদ্ধ হয়, তখন জন্ম নেয় গোপন স্বার্থের মশগুল ষড়যন্ত্র। এ অজ্ঞাততার ফাঁদে চোখ বুঁজে পড়ার আগে আমাদের উত্তরিকর্তব্য হল—সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো।
‘আজ দেশ বিরোধিতা করছে’—এই ধরনের অভিযোজিত মনগড়া তথ্য সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করে। শিয়ালের দলে মুরগির মতো নাম ভাঙিয়ে দেশী–বিদেশী স্বার্থসিদ্ধি বাহিনী মাঠে নামিয়ে দেয়া হলে তার নিষ্কচন ঘটাতে পারবে শুধুমাত্র জনভিত্তিক সরব তত্ত্বাবধান।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা না, গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা চাই
- একটি সশক্ত, সংসদীয় কমিটি করে ‘জুলাই সনদ’ সংশ্লিষ্ট আর্থ-রাজনৈতিক লবিস্টিং, বিদেশি তহবিলের হিসাব নিকাশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ জেনেশোনা তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে।
- নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিতে হবে, যাতে তারা তথ্য-সূত্র ও প্রমাণ ছাপিয়ে ‘কোন্ এজেন্ট’ বা ‘মোড়ল’ কারা ফুৎকার চলছে তা জনসমক্ষে আনতে পারে।
গণমানুষের অংশগ্রহণ ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা
আমরা অবশ্যই স্বীকার করবো, রাষ্ট্র পরিচালনার আভ্যন্তরীণ আলোচনাগুলো যতটা দরকার, জনগণের স্বার্থের সুরক্ষাও তার তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ। মামলার হাকিম বা তদন্তকারী যতই নিরপেক্ষ হোক, জনমত ছাড়া অসম্পূর্ণ থাকে। তাই:
- প্রতিটি পর্যায়ের প্রতিবেদন অনলাইনে পূণরায় প্রকাশ করতে হবে।
- নাগরিক সমাজ, শ্রেণি–সংগঠন, শিক্ষক–ছাত্র এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে মতামত প্রেরণের আহ্বান জানাতে হবে।
সুপারিশসমূহ
- তফসিলবদ্ধ প্রকাশনা: সকল নথিপত্রের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ সরকারি ওয়ার্কিং পেপার হিসেবে প্রকাশ করতে হবে।
- আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক: অনধিকার প্রবেশ–সংশ্লিষ্ট তথ্য যাচাইয়ের জন্য ইউএন–এর বিশেষজ্ঞ দলের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
- আইনি পরিবীক্ষণ: হ্যাকিং, প্রচারণা ফান্ডিং বা তথ্য বিকৃতির অভিযোগ থাকলে দ্রুত সাইবার ও আইন বিভাগ তদন্ত করবে।
দেশের মানুষের জানার অধিকার কখনো আপস থেকে পারে না। ‘জুলাই সনদ’ যদি সত্যিই কোনও ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হয়ে থাকে, তাহলে সেটি অপসারণের একমাত্র পথ—জনসচেতনতা, স্বচ্ছতা ও সকল প্রমাণের আলোয় বিচার। আমরা মৌলিকভাবে আস্থা করি, যখন জনগণ অবাধে তথ্য পাবে, তখনই এ জাতীয় ষড়যন্ত্রের মর্মতত্ত্ব উন্মুক্ত হবে, আর গণতন্ত্রের সমৃদ্ধিতে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।