বগুড়ায় উদিচীর জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা
বগুড়া প্রতিনিধিঃ
শাহবাগে জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদকে ঘিরে বগুড়ায় উদিচী শিল্পগোষ্ঠী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে হামলা, হট্টগোল হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে উদিচী শিল্প গোষ্ঠীর সাতজন ও বগুড়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের ৩ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে শহরের শহীদ খোকন পার্কে এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, উদিচী শিল্পীগোষ্ঠী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের নেতারা জানান, ঢাকার শাহবাগে জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় বগুড়ার শহরের সাতমাথায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। একই স্থানে পাঁচটার দিকে ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের বগুড়ার কয়েকজন।
এই পরিস্থিতিতে এই কর্মর্সচি শুরু করতে গেলে সাতমাথায় উদিচীকে বাধা দেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের লোকজন। এখানে বাধা পেয়ে উদিচীর নেতাকর্মীসহ অন্যরা শহীদ খোকন পার্কে (শহীদ মিনার এলাকায়) সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত শুরু করেন। এর মধ্যেই সেখানেও বিভিন্ন রকমের স্লোগান দিতে থাকেন ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ। এটি এক পর্যায়ে হট্টগোলের রূপ নেয়। সেখানে ধাক্কাধাক্কি থেকে মারধরের ঘটনা ঘটে।
সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে থাকা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন, আমাদের কর্মসূচি মুক্তমঞ্চে হবে বলে তারা সেখানে প্রথমে দখল নিল। তখন আমরা চলে গেছি শহীদ মিনারে। ওখানে গিয়ে ওরা স্লোগান দিচ্ছিল। আমরা জাতীয় সংগীত গাওয়া শুরু করলে সেখানেই আমাদের ওপর হামলা করা হয়। আমাদের ওপর হামলা করেছে। এতে আমাদের নেতা জিন্নাহ, ছাত্রনেতা শাওন, সাদ্দাম, প্রান্ত, জিলানসহ সাতজত আহত হয়েছেন। মব তৈরি করে আমাদের এক নেতার একজনের মোবাইলও ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তারা।
কিন্তু এরপর সাতমাথায় এসে আমাদের পার্টি অফিস তারা ভাঙচুর করতেছে। এ সময় পুলিশের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে দাবি করেন আমিনুল ফরিদ।
তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়ার যুগ্ম সদস্য সচিব নূর মোহাম্মাদ যোবায়ের বলেন, ‘উদিচী ফ্যাসিবাদী সংগঠন। আমাদের প্রতিবাদ তাদের বিরুদ্ধে, জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে নয়। এখানে জাতীয় সংগীত টেনে আনার কোনো কারণ নেই। কিন্তু উদিচী এটার সুযোগ নিয়ে নিউজ করার পায়তারা করতেছে। আজকে তারাই আমাদের উপর হামলা করেছে। মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে। আমাদের তিন থেকে চারজন আহতও হয়েছেন।’
ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের আরেক নেতা মাহমুদউল্লাহ জানান, এখানে বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন ছিল। তারা ব্যক্তি আগ্রহে এসেছে, কোনো দলের হয়ে নয়। আর খোকন পার্কে উদিচির ওরাই আগে আমাদের ধাক্কা দিয়েছে।
এই ঘটনা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি বগুড়ার পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টির বগুড়া জেলা সমন্বয়ক আহম্মেদ সাব্বির বলেন, ‘আজ বিকেলে বগুড়া সাতমাথায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চের ডাকে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশের সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে, তাদের দাওয়াতে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের দুএকজন নেতাকর্মী হয়তো সেখানে সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে থাকতে পারে। সুতরাং এনসিপিকে জড়িয়ে কোন সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈন উদ্দিন বলেন, ‘উদিচীর অনুষ্ঠানে মব তৈরির করার চেষ্টা হয়েছিল। তবে আমাদের কারণে পারেনি। আমরা এখনো উদিচীর কার্যালয়ের সামনে আছি।