শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি »
বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মীর কাশেমের টর্চার সেল ‘ডালিম হোটেল’পক্ষকাল সংবাদ ঃ---জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন খারিজ ও মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। তার এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের টর্চার সেল ‘ডালিম হোটেল’র তৎকালীন বন্দিরারা। একাত্তরের ঘাতক মীর কাসেমের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। মীর কাসেম প্রসঙ্গে ফাঁসি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ডালিম হোটেলে ভয়াবহ নির্যাতনের কথাও জানিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লায় টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের পেছনেই ডালিম হোটেলের অবস্থান। একাত্তরে হিন্দু পরিবারের মালিকানাধীন এই ভবনের নাম ছিল ‘মহামায়া ডালিম ভবন’। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওই পরিবার পালিয়ে গেলে মীর কাশেমের নেতৃত্বে আলবদররা বাড়িটি দখল করে নাম দেয় ডালিম হোটেল।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় ডালিম হোটেলে নির্যাতনের শিকার চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ কমান্ডার সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান। সাক্ষ্য দেওয়ার আগে মীর কাসেমের লোকজনের কাছ থেকে প্রাণনাশের প্রচ্ছন্ন হুমকি ও প্রলোভনও পেয়েছেন তিনি। একাত্তরে আলবদর বাহিনী পরিচালিত টর্চার সেল ডালিম হোটেলে নভেম্বরের ৩০ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দি ছিলেন তিনি।

সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘একাত্তরে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়তাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলাম। ৩০ নভেম্বর ভোরে মীর কাসেম ও তার লোকেরা আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। আমাকে ও আমার বড় ভাইকে ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। প্রায় দেড়শ’ মুক্তিযোদ্ধা সেখানে বন্দি ছিলেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ ডিসেম্বর এসে সবাইকে মুক্ত করে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ডালিম হোটেলে অবর্ণনীয় নির্যাতন চলতো। বন্দি অবস্থায় বেশির ভাগ সময়ই চোখ বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছিল আমাকে। লাঠি ও বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পেটানো হতো। চট্টগ্রাম শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানার জন্য এই নির্যাতন চলতো। মীর কাসেম নিজেই ডালিম হোটেলের টর্চার ক্যাম্পটি পরিচালনা করতো। সে আমাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘মীর কাসেম একজন কিলার, শত শত লোককে মেরেছে। পরে সে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি হিসেবে চিহ্নিত হলে তার লোকজন সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের প্রচ্ছন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি ও আর্থিক প্রলোভন দেখিয়েছে।’

চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক নাসির উদ্দিন চৌধুরীও বন্দি ছিলেন ডালিম হোটেলে। তিনি বলেন, ‘আমাকে আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় নভেম্বরের ৩০ তারিখে (১৯৭১ সালে)। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানতে আমাকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ইলেকট্রিক শক, মাথা নিচে পা ওপরে দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা, লোহার রড দিয়ে পেটানোসহ বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন করা হতো। জলন্ত সিগারেট দিয়ে ছ্যাকা দিতো।’ মীর কাসেমের ফাঁসির রায় বহালে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।

জয় বাংলা বাহিনীর উপপ্রধান জাহাঙ্গীর চৌধুরী সাক্ষ্য দিয়েছেন মীর কাসেমের বিরুদ্ধে। তিনি বাংলা বলেন, ‘মীর কাসেমের ছেলে সাক্ষ্য না দিতে নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়েছে। সব প্রলোভন ও হুমকি উপেক্ষা করে সাক্ষ্য দেই। ২৬ দিন ডালিম হোটেলে বন্দি ছিলাম। সেখানে ছোট জায়গার অনেক বন্দি রাখা হয়েছিল, কোনও শৌচাগার ছিল না। বন্দিদের খাবার বা পানি দিতো না। মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল থাকায় আমি সন্তুষ্ট।’

চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. ইরশাদ কামাল খান জানান, তিনিও একাত্তরে ডালিম হোটেলে বন্দি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বন্দি থাকার দিনক্ষণের হিসাব মনে নেই। আমাদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে রাখা হতো। দিনে একবার খাবার দেওয়া হতো। আশপাশের অন্য রুম থেকে বন্দিদের চিৎকার শুনতে পেতাম।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বেশ কিছু বইয়ের লেখক ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমি এই ডালিম হোটেলের ভিকটিমদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। যেসব আলবদর এই টর্চার সেল পাহারা দিতো মীর কাসেমকে তারা কমান্ডার হিসেবে সম্বোধন করতো। সেসময় আলবদর বাহিনীর আরও টর্চার সেল ছিল চট্টগ্রামে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পাঁচলাইশ এলাকার সালমা মঞ্জিল, চামড়ার গুদাম এলাকার দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিং, দেওয়ানহাট এলাকার দেওয়ান হোটেল, নন্দনকানন এলাকার ইসলামিয়া হোটেল।

আলবদর বাহিনীর ও মীর কাসেম আলীর কাজ ছিল টার্গেট কিলিং। চট্টগ্রামে তারা ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিল। হেন কুকর্ম নেই তারা করেনি। পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় তারা এসব চালায়। বুদ্ধিজীবীরা তাদের টার্গেট ছিল। কিন্তু আলবদররা তাদের পায়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।’

চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক শরিফ চৌহান বলেন, ‘আমরা ঘাতকের ফাঁসির অপেক্ষা করছি।’ ডালিম হোটেলকে একাত্তরে নির্যাতনের স্মারক হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।



এ পাতার আরও খবর

কাশ্মীরে হামলার ১০ মিনিটের মাথায় মামলা! উঠছে ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’-এর অভিযোগ কাশ্মীরে হামলার ১০ মিনিটের মাথায় মামলা! উঠছে ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’-এর অভিযোগ
নারী সংস্কার কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি নারী সংস্কার কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি
পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত, আহত ৪ পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত, আহত ৪
ধর্মবিরোধী’ অভিযোগ তুলে পাঠাগার থেকে নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের বই নিয়ে গেলেন একদল যুবক ধর্মবিরোধী’ অভিযোগ তুলে পাঠাগার থেকে নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের বই নিয়ে গেলেন একদল যুবক
একই অঙ্গে বহুরূপ ছাগল চোর যুবলীগ নেতা হৃদয় কি আইনের উর্ধ্বে একই অঙ্গে বহুরূপ ছাগল চোর যুবলীগ নেতা হৃদয় কি আইনের উর্ধ্বে
বান্দরবানে বিএনপি নেতার অবৈধ কাঠবোঝাই ট্রাকসহ চালক আটক বান্দরবানে বিএনপি নেতার অবৈধ কাঠবোঝাই ট্রাকসহ চালক আটক
লাল্মনিরহাটের টোল প্লাজায় যুবদলের হামলায় আহত পাঁচ, ১৪ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ লাল্মনিরহাটের টোল প্লাজায় যুবদলের হামলায় আহত পাঁচ, ১৪ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ
মেহেরপুরে শি’শু ব’লাৎকারের অভিযোগে একজনকে গণধোলাই মেহেরপুরে শি’শু ব’লাৎকারের অভিযোগে একজনকে গণধোলাই
গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় : আইন উপদেষ্ গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় : আইন উপদেষ্
শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)