একজন গুমের শিকার সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা
সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গুমের ভিক্টিমঃ
নেতৃত্বের দাবি, কিন্তু মানবিকতা কোথায়? বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের নাম উচ্চারিত হয় “গণতন্ত্রের প্রতীক” হিসেবে। তিনি বলেন, দেশে গুম, খুন, নিপীড়ন চলছে। তিনি বলেন, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু একজন সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গুমের ভিক্টিম হিসেবে আমি আজ প্রশ্ন করছি-এই কথাগুলো কি কেবল রাজনৈতিক কৌশল, নাকি সত্যিকারের দায়বদ্ধতা?
আমি তারেক রহমানের জন্য অদৃশ্য-কেন?
আমরা দুজনেই লন্ডনে থাকি। আমি একজন সাংবাদিক, আমি গুমের শিকার, আমি কথা বলি। তার আশপাশের লোকজন জানেন আমি কে। তবুও, একটি ইমেইল, একটি বার্তা, একটি সহানুভূতির ইঙ্গিতও আসেনি। এটা কি কেবল ব্যস্ততা? না, এটা ক্ষমতার ঔদ্ধত্য। এটা সেই মানসিকতা, যেখানে মানুষকে মানুষ হিসেবে নয়, রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে দেখা হয়।
তারেক রহমানের বক্তব্য বনাম বাস্তবতা
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই”, “গুম-খুন বন্ধ করতে হবে”, “মানবাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে”। কিন্তু বাস্তবে, যখন একজন ভিক্টিম তার পাশেই থাকে, তখন তিনি নীরব। এই নীরবতা শুধু অমানবিক নয়, এটি রাজনৈতিক দ্বিচারিতা।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান: বিতর্কিত অতীত, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমানকে জীবনদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যদিও ২০২৪ সালে তিনি খালাসপ্রাপ্ত হন।
যুক্তরাজ্যে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন, কিন্তু মানবাধিকার রক্ষার দাবিদার হয়েও ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ান না।
FBI-এর সাবেক কর্মকর্তা Debra LaPrevotte ২০১১ সালে ঢাকায় সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, তারেক ও তার সহযোগী ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ছায়া সরকার চালাতেন।
একইসঙ্গে, তার বিরুদ্ধে থাকা অনেক অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও দাবি করা হয়।
❓ প্রশ্ন উঠবেই-এই নেতৃত্ব কি বিশ্বাসযোগ্য?
আপনি গুম-খুনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, কিন্তু ভিক্টিমদের পাশে দাঁড়ান না কেন?
আপনি গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু ভিন্নমতকে স্বীকার করেন না কেন?
আপনি ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হতে চান, কিন্তু আজকের নিপীড়িতদের প্রতি আপনার দায় কোথায়?
নেতৃত্ব মানে শুধু বক্তৃতা নয়, দায়িত্বও বটে
নেতৃত্ব মানে-ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো, নির্যাতিতদের কণ্ঠস্বর শোনা, এবং ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্য বলার সাহস রাখা। যদি আপনি সত্যিই পরিবর্তনের প্রতীক হতে চান, তাহলে আপনাকে এই নীরবতা ভাঙতে হবে।
এই লেখা করুণা চায় না-এই লেখা চায় জবাবদিহি
আমি সাংবাদিক। আমি প্রশ্ন করি। আমি ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করি। এই লেখা কোনো আবেগের ভিক্ষা নয়-এটি একটি রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্ন। যারা গুম-খুনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তারা কেন ভিক্টিমদের পাশে থাকেন না? এই প্রশ্ন শুধু তারেক রহমানের জন্য নয়-যে কেউ নেতৃত্বের দাবি করবেন, তার জন্যও প্রযোজ্য।
চলবে—
গুম-খুনের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের অবস্থান—কথার চেয়ে বাস্তবতা ভিন্ন
আমি একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গুমের ভিক্টিম এবং একইসঙ্গে একজন সাংবাদিক। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তারেক রহমানের গুম-খুনের বিরুদ্ধে উচ্চারিত বক্তব্যগুলো শুধু কথার কথা, বাস্তবতার সঙ্গে যার মেল নেই।
তিনি নিজে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কিন্তু একজন ভিক্টিম হিসেবে আমি তার কাছে গুরুত্বহীন। তিনি কখনোই আমার মতো ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি, এমনকি একটি সহানুভূতির বাক্যও উচ্চারণ করেননি।
আমরা দুজনেই লন্ডনে বসবাস করি, কিন্তু তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং ক্ষমতার বলয়ে থাকা সত্ত্বেও একটি ন্যূনতম মানবিক সংযোগের সুযোগও তৈরি হয়নি। এতে স্পষ্ট হয়, তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করার যোগ্যতা রাখেন না।
যিনি নিজেকে দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করেন, তার উচিত ছিল ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের কণ্ঠ শোনা, এবং অন্তত একটি সহানুভূতির হাত বাড়ানো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তার আশপাশের আজ্ঞাবহরা জনগণের কষ্টকে তুচ্ছ করে, আর তিনি নিজেও সেই নির্বিকার নীরবতার অংশ।
আমি নিজেই জ্বলন্ত উদাহরণ—একজন গুমের শিকার, একজন সাংবাদিক, একজন নাগরিক—যার অস্তিত্বই তার কাছে অদৃশ্য।
এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি, তারেক রহমানের নেতৃত্বে মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয় না। গুম-খুনের বিরুদ্ধে কথা বলা যদি শুধু রাজনৈতিক কৌশল হয়, তবে তা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর বার্তা।