
রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » গুম, খুন ও মব সহিংসতার ছায়ায় বাংলাদেশ: মানবাধিকার রক্ষার নামে ক্ষমতা আকড়িয়ে থাকার কৌশল?
গুম, খুন ও মব সহিংসতার ছায়ায় বাংলাদেশ: মানবাধিকার রক্ষার নামে ক্ষমতা আকড়িয়ে থাকার কৌশল?
বিশেষ প্রতিনিধি ঢাকা, ৬ জুলাই ২০২৫ |
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, গুম-খুন এবং মব সহিংসতার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বর্তমান ইউনুস সরকার একদিকে মানবাধিকারের কথা বলছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় মব ব্যবহার করে বিরোধী কণ্ঠ দমন করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “মানবাধিকার” শব্দটি এখন ক্ষমতায় থাকার একটি কৌশলগত ঢাল হয়ে উঠেছে। সরকার আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের গণতান্ত্রিক ও মানবিক হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেও বাস্তবে সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের গুম, নির্যাতন ও প্রকাশ্য হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে।
মব সহিংসতা: পরিকল্পিত নাকি নিয়ন্ত্রণহীন?
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশে মব সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে ঢাকায় প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়, পুলিশ পাশে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএসএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত মব সহিংসতার ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা: রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়?
জাতীয় গুম কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বহু মানুষকে গোপন স্থানে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেককে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, যাতে মরদেহ শনাক্ত করা না যায়।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে র্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। জাতিসংঘও বাংলাদেশকে জোরপূর্বক গুমবিরোধী কনভেনশনে সই করার আহ্বান জানিয়েছে।
সরকারের অবস্থান ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সরকার বলছে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেন, “আমরা প্রমাণ করতে চাই বাংলাদেশে কোনো গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যা হয় না।” তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এসব তদন্ত কার্যত লোক দেখানো এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি বজায় রাখার কৌশল।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া প্রধান মিনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, “বাংলাদেশ সরকার কখনোই স্বীকার করে না যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের সামনেও তারা মিথ্যা ব্যাখ্যা দেয়।”
মানবাধিকার না ক্ষমতার কৌশল?
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এখন এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে। একদিকে সরকার আন্তর্জাতিক মহলে মানবিক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চায়, অন্যদিকে দেশের ভেতরে বিরোধী কণ্ঠ, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের দমন করতে রাষ্ট্রীয় শক্তি ও মব সহিংসতা ব্যবহার করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ-সবই প্রশ্নের মুখে পড়বে।