শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Daily Pokkhokal
রবিবার, ২০ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » খেলাধুলা » তাসকিন-সানি নিষিদ্ধ : বিস্মিত বাংলাদেশ
প্রথম পাতা » খেলাধুলা » তাসকিন-সানি নিষিদ্ধ : বিস্মিত বাংলাদেশ
২৫৬ বার পঠিত
রবিবার, ২০ মার্চ ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

তাসকিন-সানি নিষিদ্ধ : বিস্মিত বাংলাদেশ

তাসকিন-সানি নিষিদ্ধ : বিস্মিত বাংলাদেশ

২০১৬ মার্চ ১৯ ২২:৪০:৫৩

তাসকিন-সানি নিষিদ্ধ : বিস্মিত বাংলাদেশ

খাদেমুল ইসলাম ও জুবায়ের আহমেদ, দ্য রিপোর্ট : দিনভর ছিল নানা গুঞ্জন। বিভ্রান্তির শেষ ছিল না গণমাধ্যমেও। বোলিং অ্যাকশনের কারণে স্পিনার আরাফাত সানি যে নিষিদ্ধ হচ্ছেন, তা শনিবার দিনের প্রথম ভাগেই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে পেসার তাসকিন আহমেদও একই কারণে নিষিদ্ধ হচ্ছেন সংবাদটা যেন সাইক্লোনের মতোই সমগ্র দেশকে আঘাত করেছে সন্ধায়। কোনো কোনো গণমাধ্যমে এর আগে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন বৈধ বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল তাসকিনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। টি২০ বিশ্বকাপ চলাকালে একত্রে দুই বোলার নিষেধাজ্ঞার সংবাদে বাংলাদেশের সমর্থকরা মুষড়ে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। শুধু সমর্থক নয়, একসঙ্গে দুই বোলারের নিষিদ্ধ হওয়ার সংবাদ বিস্মিত করেছে দেশের সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটারদেরও। বিস্মিত গোটা বাংলাদেশই।

তাসকিনের নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ আবার ধের্য্য ধরতে বলছেন। যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অ্যাকশন ঠিক করে তারা আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারেন। দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে এমন অভিমতই তুলে ধরেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ও ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল।

ভারতে চলমান টি২০ বিশ্বকাপে গত ৯ মার্চ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। সেই ম্যাচেই দুই অনফিল্ড আম্পায়ার তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আইসিসির কাছে রিপোর্ট পেশ করে। এর পর গত ১৪ মার্চ চেন্নাইতে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন এই দুই বোলার। এর মধ্যেই সুপার টেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচও খেলেছে বাংলাদেশ দল। আগামী সোমবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রয়েছে দ্বিতীয় ম্যাচ। সেই ম্যাচের দুদিন আগেই দুই বোলারের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আসল। ইতোমধ্যে আরাফাত সানির পরিবর্তে সাকলাইন সজীব ও তাসকিনের পরিবর্তে শুভাগত হোমকে নেওয়া হয়েছে দলে।

তবে হঠাৎ করেই দুই বোলারের নিষেধাজ্ঞা দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম বলেন, ‘সত্যি বলতে, এটা বাংলাদেশের জন্যে একটা বড় ব্যাপার। কারণ বাংলাদেশ যেভাবে বর্তমানে ক্রিকেট খেলছে, এটা বাংলাদেশের জন্যে একটা বড় দুঃসংবাদ। ভারত আর নিউজিল্যান্ড স্পিন বান্ধব, তারপর সানিও একজন প্রতিষ্ঠিত স্পিনার। আর তাসকিনের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ যদি বাদ দেই, তবে সে ধারাবাহিক পারফরমার। টুর্নামেন্ট চলাকালীন এভাবে তাদের ছিটকে পড়াটা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্যে একটা বড় দুঃসংবাদ।’

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আশরাফুল ও দেবব্রত পালের অভিমতও একইরকম। আশরাফুল বলেন, ‘অবশ্যই এটা একটা খারাপ সংবাদ আমাদের জন্যে। কারণ এশিয়া কাপটা যদি দেখেন, চমৎকার বল করছে তাসকিন। তারপর তিনটা ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সাথেও তাসকিন অসাধারণ বল করছে। এটা তো একটা বড় ধাক্কাই আমি মনে করি। আর আরাফাত সানিকে তো আমি বলবো আনলাকি। ও যতদিন ধরে খেলছে, যেই ম্যাচই খেলছে, বাংলাদেশকে বড় সার্ভিস দিছে আমি বলবো। এটা তো একটা ভালো টিম ছিল; এক-দেড় বছর ধরে। ওই টিম থেকে এখন দুইটা প্রধান বোলার খেলতে পারবে না। মূল টুর্নামেন্টে (সুপার টেন পর্বে) মাত্র একটা ম্যাচ হয়েছে, আরো তিনটা ম্যাচ বাকি। এ অবস্থায় এটা অবশ্যই একটা বড় ধাক্কা।’

দেবব্রত পালের মতে, ‘একটা চিন্তা করেই এই দুই বোলারকে দলে নেওয়া হয়েছিল। এরকম একটা টুর্নামেন্টের মাঝখানে দুজনকে হারানোয় অবশ্যই দলের ভারসাম্য নষ্ট হল। যখন সবাই একসঙ্গে খেলবে, তখন এর মধ্যে একজন বা দুজনের এমন সংবাদ আসলে অন্যরাও তো ঠিকভাবে খেলতে পারবে না। চিন্তার ক্ষেত্রে যে একটা সমন্বয় থাকে ওই জায়গায় ভারসাম্য নষ্ট হয়। নির্বাচকরা ১৫ জনের স্কোয়াড বাছাই করলে একটা সার্বিক বিষয় চিন্তা করেই করে। তাসকিন-সানির নিষেধাজ্ঞা খুব শকিং একটা ব্যাপার।’

এই তিনজই মনে করেন হঠাৎ করে দুজন বোলারের অনুপস্থিতি দলের জন্য বড় একটা ক্ষতির কারণই হয়ে দাঁড়াল। যেখান থেকে রিকভার করাটা বাংলাদেশ দলের জন্য এখন অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হয়েই দাঁড়িয়েছে। যার প্রভাব দলের উপর পড়বে বলেও মনে করেন এই তিন ক্রিকেটার।

জাভেদ ওমর বলেন, ‘অবশ্যই দলের উপর প্রভাব পড়বে। কারণ যদি স্প্রিন ট্র্যাক হয়, তাহলে সানিকে দল পাচ্ছে না। আর যদি ভাল ফাস্ট বোলিং ট্র্যাক হয় তাহলে তাসকিনকে পাচ্ছে না। ফলে টিম তো একটু আফসেট হবেই। বিশ্বকাপের সময় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমাদের আল-আমিনকে যখন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই সময় তো টিম একটু হলেও আপসেট হয়েছিল।’

আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে এর আগে ঘরোয়া পর্যায়ে কিছুটা গুঞ্জন ছিল বলে স্বীকার করছেন সাবেক ক্রিকেটাররা। তবে বোলিংয়ের সময় তাসকিনের কনুই ১৫ ডিগ্রি বেঁকে যায়, এমনটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই সব সাবেক ক্রিকেটারদেরও।

হঠাৎ করেই ম্যাচের মাঝে এভাবে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলা ও নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না দেবব্রত পাল। আর ষড়যন্ত্রের কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও এতো বড় একটা টুর্নামেন্টের মাঝে এভাবে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিস্মিত জাভেদ ওমর। আর আশরাফুল বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ।

জাভেদ ওমর বলেন, ‘আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, এত বড় বড় টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা করা কিংবা কোনো বোলারকে নিষিদ্ধ করার বিষয়গুলো করা উচিত। টুর্নামেন্ট চলাকালীন তারা বোলারদের সন্দেহ করবে, এটা ঠিক না। এশিয়া কাপের সময় বা এর আগে ম্যাচগুলোতে এদের ভিডিও তো দেখা হয়েছে। এই আম্পায়ারও তখন ছিল। তবে প্রফেশনাল দৃষ্টিতে এটাকে আমি ষড়যন্ত্র মনে করি না। কারণ, এটা তো এমন না যে পাড়াভিত্তিক ক্রিকেট; ষড়যন্ত্র করবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ এটা করে, তবে সত্যি খুবই দুঃখজনক। একটা টুর্নামেন্ট চলাকালীন একজনকে পরীক্ষা দিতে হবে, আবার পরীক্ষা দিয়ে আসবে, আবার খেলবে। দুইটা ম্যাচ খেলার পর তাকে বলবে অ্যাকশন অবৈধ!’

এ ব্যাপারে আশরাফুল বলেন, ‘তাসকিনের বোলিং দেখে তো খালি চোখে কখনোই মনে হয় না ১৫ ডিগ্রির বেশি হবে। এটা একটা অবাক করার মতোই ব্যাপার। আরাফাত সানির হয়তো একটু আগে থেকেই সমস্যা ছিল। যখন থেকে ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতো তখন থেকেই একটু প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল ওর অ্যাকশনে। কিন্তু তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনে আসলে কখনো মনে হয়নি ১৫ ড্রিগ্রির বেশি হবে!’

আর দেবব্রত পাল বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের বিষয়টা আমি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিসিবিকে আমরা বলব, যেসব ভিডিও দেখে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন আইসিসি নিষিদ্ধ করেছে সেগুলো আইসিসির কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া উচিত। পরে সেগুলো নিয়ে নিজেদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে দেখতে হবে; আইসিসির সিদ্ধান্ত কতটা যথার্থ হয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।’

হঠাৎই এমন চাপ সামলে পেশাদার টিমের মতো বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশা জাভেদ ওমর ও আশরাফুলের‌। জাভেদ ওমর বলেন, ‘আমার পরামর্শ হচ্ছে, তাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। ইনজুরির মতো এটাকে একটা সমস্যা মনে করতে হবে। আমি মনে করি এই সমস্যা থেকে উঠে আসা সম্ভব। অনেকে অনেক কিছু বলবে, তাতে ভেঙে পড়লে চলবে না।’

আশরাফুল আশা করছেন তাসকিন-সানির রিপ্লেসমেন্টে হিসেবে যারা ভারতে যাচ্ছে তারা নিজেদের সেরাটা দিয়ে এই ক্ষতি পুষাতে পারবে। তিনি বলেন, ‘তারপরও আশা করবো যারা আছে, ওরা ভালো করার চেষ্টা করবে। আর যারা নতুন যাচ্ছে তাদের জন্যে শুভ কামনা রইল। ওরা যেন ওদের সেরাটা দিতে পারে।’

বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হওয়া এই দুই ক্রিকেটারকে দেশে ফিরে দ্রুত এ ব্যাপারে কাজ করার পরামর্শ এই ক্রিকেটারদের। বিসিবিও যাতে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখে তাই পরামর্শ তাদের। দ্রুতই নতুন পরীক্ষার মাধ্যমে তাসকিন-সানি ফিরে আসবে জাতীয় দলে; এমন প্রত্যাশাই এই তিন ক্রিকেটারের। একই প্রত্যাশায় সমগ্র বাংলাদেশ।

- See more at: http://bangla.thereport24.com/article/149982/%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-:-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6#sthash.snjDucV4.dpuতাসকিন-সানি নিষিদ্ধ : বিস্মিত বাংলাদেশ

---

ডেস্কঃ সংবাদ : দিনভর ছিল নানা গুঞ্জন। বিভ্রান্তির শেষ ছিল না গণমাধ্যমেও। বোলিং অ্যাকশনের কারণে স্পিনার আরাফাত সানি যে নিষিদ্ধ হচ্ছেন, তা শনিবার দিনের প্রথম ভাগেই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে পেসার তাসকিন আহমেদও একই কারণে নিষিদ্ধ হচ্ছেন সংবাদটা যেন সাইক্লোনের মতোই সমগ্র দেশকে আঘাত করেছে সন্ধায়। কোনো কোনো গণমাধ্যমে এর আগে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন বৈধ বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল তাসকিনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। টি২০ বিশ্বকাপ চলাকালে একত্রে দুই বোলার নিষেধাজ্ঞার সংবাদে বাংলাদেশের সমর্থকরা মুষড়ে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। শুধু সমর্থক নয়, একসঙ্গে দুই বোলারের নিষিদ্ধ হওয়ার সংবাদ বিস্মিত করেছে দেশের সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটারদেরও। বিস্মিত গোটা বাংলাদেশই।

তাসকিনের নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ আবার ধের্য্য ধরতে বলছেন। যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অ্যাকশন ঠিক করে তারা আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারেন। দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে এমন অভিমতই তুলে ধরেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ও ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল।

ভারতে চলমান টি২০ বিশ্বকাপে গত ৯ মার্চ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। সেই ম্যাচেই দুই অনফিল্ড আম্পায়ার তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আইসিসির কাছে রিপোর্ট পেশ করে। এর পর গত ১৪ মার্চ চেন্নাইতে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন এই দুই বোলার। এর মধ্যেই সুপার টেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচও খেলেছে বাংলাদেশ দল। আগামী সোমবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রয়েছে দ্বিতীয় ম্যাচ। সেই ম্যাচের দুদিন আগেই দুই বোলারের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আসল। ইতোমধ্যে আরাফাত সানির পরিবর্তে সাকলাইন সজীব ও তাসকিনের পরিবর্তে শুভাগত হোমকে নেওয়া হয়েছে দলে।

তবে হঠাৎ করেই দুই বোলারের নিষেধাজ্ঞা দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম বলেন, ‘সত্যি বলতে, এটা বাংলাদেশের জন্যে একটা বড় ব্যাপার। কারণ বাংলাদেশ যেভাবে বর্তমানে ক্রিকেট খেলছে, এটা বাংলাদেশের জন্যে একটা বড় দুঃসংবাদ। ভারত আর নিউজিল্যান্ড স্পিন বান্ধব, তারপর সানিও একজন প্রতিষ্ঠিত স্পিনার। আর তাসকিনের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ যদি বাদ দেই, তবে সে ধারাবাহিক পারফরমার। টুর্নামেন্ট চলাকালীন এভাবে তাদের ছিটকে পড়াটা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্যে একটা বড় দুঃসংবাদ।’

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আশরাফুল ও দেবব্রত পালের অভিমতও একইরকম। আশরাফুল বলেন, ‘অবশ্যই এটা একটা খারাপ সংবাদ আমাদের জন্যে। কারণ এশিয়া কাপটা যদি দেখেন, চমৎকার বল করছে তাসকিন। তারপর তিনটা ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সাথেও তাসকিন অসাধারণ বল করছে। এটা তো একটা বড় ধাক্কাই আমি মনে করি। আর আরাফাত সানিকে তো আমি বলবো আনলাকি। ও যতদিন ধরে খেলছে, যেই ম্যাচই খেলছে, বাংলাদেশকে বড় সার্ভিস দিছে আমি বলবো। এটা তো একটা ভালো টিম ছিল; এক-দেড় বছর ধরে। ওই টিম থেকে এখন দুইটা প্রধান বোলার খেলতে পারবে না। মূল টুর্নামেন্টে (সুপার টেন পর্বে) মাত্র একটা ম্যাচ হয়েছে, আরো তিনটা ম্যাচ বাকি। এ অবস্থায় এটা অবশ্যই একটা বড় ধাক্কা।’

দেবব্রত পালের মতে, ‘একটা চিন্তা করেই এই দুই বোলারকে দলে নেওয়া হয়েছিল। এরকম একটা টুর্নামেন্টের মাঝখানে দুজনকে হারানোয় অবশ্যই দলের ভারসাম্য নষ্ট হল। যখন সবাই একসঙ্গে খেলবে, তখন এর মধ্যে একজন বা দুজনের এমন সংবাদ আসলে অন্যরাও তো ঠিকভাবে খেলতে পারবে না। চিন্তার ক্ষেত্রে যে একটা সমন্বয় থাকে ওই জায়গায় ভারসাম্য নষ্ট হয়। নির্বাচকরা ১৫ জনের স্কোয়াড বাছাই করলে একটা সার্বিক বিষয় চিন্তা করেই করে। তাসকিন-সানির নিষেধাজ্ঞা খুব শকিং একটা ব্যাপার।’

এই তিনজই মনে করেন হঠাৎ করে দুজন বোলারের অনুপস্থিতি দলের জন্য বড় একটা ক্ষতির কারণই হয়ে দাঁড়াল। যেখান থেকে রিকভার করাটা বাংলাদেশ দলের জন্য এখন অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হয়েই দাঁড়িয়েছে। যার প্রভাব দলের উপর পড়বে বলেও মনে করেন এই তিন ক্রিকেটার।

জাভেদ ওমর বলেন, ‘অবশ্যই দলের উপর প্রভাব পড়বে। কারণ যদি স্প্রিন ট্র্যাক হয়, তাহলে সানিকে দল পাচ্ছে না। আর যদি ভাল ফাস্ট বোলিং ট্র্যাক হয় তাহলে তাসকিনকে পাচ্ছে না। ফলে টিম তো একটু আফসেট হবেই। বিশ্বকাপের সময় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমাদের আল-আমিনকে যখন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই সময় তো টিম একটু হলেও আপসেট হয়েছিল।’

আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে এর আগে ঘরোয়া পর্যায়ে কিছুটা গুঞ্জন ছিল বলে স্বীকার করছেন সাবেক ক্রিকেটাররা। তবে বোলিংয়ের সময় তাসকিনের কনুই ১৫ ডিগ্রি বেঁকে যায়, এমনটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই সব সাবেক ক্রিকেটারদেরও।

হঠাৎ করেই ম্যাচের মাঝে এভাবে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলা ও নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না দেবব্রত পাল। আর ষড়যন্ত্রের কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও এতো বড় একটা টুর্নামেন্টের মাঝে এভাবে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিস্মিত জাভেদ ওমর। আর আশরাফুল বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ।

জাভেদ ওমর বলেন, ‘আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, এত বড় বড় টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা করা কিংবা কোনো বোলারকে নিষিদ্ধ করার বিষয়গুলো করা উচিত। টুর্নামেন্ট চলাকালীন তারা বোলারদের সন্দেহ করবে, এটা ঠিক না। এশিয়া কাপের সময় বা এর আগে ম্যাচগুলোতে এদের ভিডিও তো দেখা হয়েছে। এই আম্পায়ারও তখন ছিল। তবে প্রফেশনাল দৃষ্টিতে এটাকে আমি ষড়যন্ত্র মনে করি না। কারণ, এটা তো এমন না যে পাড়াভিত্তিক ক্রিকেট; ষড়যন্ত্র করবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ এটা করে, তবে সত্যি খুবই দুঃখজনক। একটা টুর্নামেন্ট চলাকালীন একজনকে পরীক্ষা দিতে হবে, আবার পরীক্ষা দিয়ে আসবে, আবার খেলবে। দুইটা ম্যাচ খেলার পর তাকে বলবে অ্যাকশন অবৈধ!’

এ ব্যাপারে আশরাফুল বলেন, ‘তাসকিনের বোলিং দেখে তো খালি চোখে কখনোই মনে হয় না ১৫ ডিগ্রির বেশি হবে। এটা একটা অবাক করার মতোই ব্যাপার। আরাফাত সানির হয়তো একটু আগে থেকেই সমস্যা ছিল। যখন থেকে ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতো তখন থেকেই একটু প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল ওর অ্যাকশনে। কিন্তু তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনে আসলে কখনো মনে হয়নি ১৫ ড্রিগ্রির বেশি হবে!’

আর দেবব্রত পাল বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের বিষয়টা আমি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিসিবিকে আমরা বলব, যেসব ভিডিও দেখে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন আইসিসি নিষিদ্ধ করেছে সেগুলো আইসিসির কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া উচিত। পরে সেগুলো নিয়ে নিজেদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে দেখতে হবে; আইসিসির সিদ্ধান্ত কতটা যথার্থ হয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।’

হঠাৎই এমন চাপ সামলে পেশাদার টিমের মতো বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশা জাভেদ ওমর ও আশরাফুলের‌। জাভেদ ওমর বলেন, ‘আমার পরামর্শ হচ্ছে, তাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। ইনজুরির মতো এটাকে একটা সমস্যা মনে করতে হবে। আমি মনে করি এই সমস্যা থেকে উঠে আসা সম্ভব। অনেকে অনেক কিছু বলবে, তাতে ভেঙে পড়লে চলবে না।’

আশরাফুল আশা করছেন তাসকিন-সানির রিপ্লেসমেন্টে হিসেবে যারা ভারতে যাচ্ছে তারা নিজেদের সেরাটা দিয়ে এই ক্ষতি পুষাতে পারবে। তিনি বলেন, ‘তারপরও আশা করবো যারা আছে, ওরা ভালো করার চেষ্টা করবে। আর যারা নতুন যাচ্ছে তাদের জন্যে শুভ কামনা রইল। ওরা যেন ওদের সেরাটা দিতে পারে।’

বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হওয়া এই দুই ক্রিকেটারকে দেশে ফিরে দ্রুত এ ব্যাপারে কাজ করার পরামর্শ এই ক্রিকেটারদের। বিসিবিও যাতে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখে তাই পরামর্শ তাদের। দ্রুতই নতুন পরীক্ষার মাধ্যমে তাসকিন-সানি ফিরে আসবে জাতীয় দলে; এমন প্রত্যাশাই এই তিন ক্রিকেটারের। একই প্রত্যাশায় সমগ্র বাংলাদেশ।



এ পাতার আরও খবর

চরম নাটকীয়তার পর ‘যৌথ চ্যাম্পিয়ন’ বাংলাদেশ-ভারত চরম নাটকীয়তার পর ‘যৌথ চ্যাম্পিয়ন’ বাংলাদেশ-ভারত
ইউনিভার্সাল  রেকর্ড ফর্মে প্রথম বাংলাদেশ হিসেবে ইউনিভার্সাল বুকেনাম। অন্তর্ভুক্ত করলেন সুইজারল্যান্ড প্রবাসী গ্র্যান্ডমাস্টার কারাতে ডক্টর মোহা : গোলাম জাকারিয়া ইউনিভার্সাল রেকর্ড ফর্মে প্রথম বাংলাদেশ হিসেবে ইউনিভার্সাল বুকেনাম। অন্তর্ভুক্ত করলেন সুইজারল্যান্ড প্রবাসী গ্র্যান্ডমাস্টার কারাতে ডক্টর মোহা : গোলাম জাকারিয়া
প্রেমজিত সেন ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশন থেকে  বহিষ্কারের পর ও বাংলাদেশের সেমিনারে আসলেন প্রেমজিত সেন ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশন থেকে বহিষ্কারের পর ও বাংলাদেশের সেমিনারে আসলেন
বিশ্বকাপের টিকিট পেতে মাঠে নামছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের টিকিট পেতে মাঠে নামছে ব্রাজিল
চোখের জলে মেসির বিদায় চোখের জলে মেসির বিদায়
অলিম্পিকসে ফুটবলের মুকুট ধরে রাখল ব্রাজিল অলিম্পিকসে ফুটবলের মুকুট ধরে রাখল ব্রাজিল
পর্দা নামল টোকিও অলিম্পিকসের, অপেক্ষা প্যারিসের পর্দা নামল টোকিও অলিম্পিকসের, অপেক্ষা প্যারিসের
করোনা আক্রান্ত শচীন করোনা আক্রান্ত শচীন
কিউই পেসারে আসা-যাওয়ার মিছিলে টাইগাররা কিউই পেসারে আসা-যাওয়ার মিছিলে টাইগাররা
আজকে নতুনত্ব অধিনায়ক ঘোষণা হবে বাংলাদেশের আজকে নতুনত্ব অধিনায়ক ঘোষণা হবে বাংলাদেশের

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)