শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
শনিবার, ১৩ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » » ওয়াসার পানি ‘পানের জন্য নয়’
প্রথম পাতা » » ওয়াসার পানি ‘পানের জন্য নয়’
৩২৭ বার পঠিত
শনিবার, ১৩ জুন ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ওয়াসার পানি ‘পানের জন্য নয়’

পক্ষ---কাল প্রতিবেদকঃ
পাশের দেশ ভারত বা শ্রীলঙ্কায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ করা পানি সরাসরি কল থেকে পান করা গেলেও ঢাকাবাসীর জন্য তা যেন কল্পনাতীত। এমনকি ঢাকা ওয়াসাও তাদের পানি ‘সুপেয়’ বলে দাবি করে না।

রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন ২৩০ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও এর বিপরীতে ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ কোটি লিটারের মতো। এর ৭৮ শতাংশ তোলা হয় গভীর নলকূপ দিয়ে, বাকিটা নদীর পানি।

সরকারিভাবে রাজধানীবাসীর জন্য ‘বিশুদ্ধ পানি’ সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র কর্তৃপক্ষ ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু ময়লা, দুর্গন্ধ এবং রোগজীবাণুর শঙ্কায় ওয়াসার পানি সরাসরি কল থেকে পান করার চল উঠে গেছে অনেক আগেই।এর বদলে বাসাবাড়িতে জ্বালানি পুড়িয়ে পানি ফুটিয়ে ও ফিল্টার করে এবং অফিস আদালতে বোতলজাত পানি কিনে ঢাকাবাসীর জীবন চলছে। আর ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান বলছেন, পাইলট প্রকল্প ধরে ‘বিশুদ্ধ পানি’ দেওয়ার বিষয়টি তাদের মাথায় আছে।”অথচ কলম্বোর মত শহরে দিনে তিনবার সরকারিভাবে পানি পরীক্ষা করে দেখা হয়, আমি নিজে গিয়ে দেখেছি। ঢাকা শহরের এই কর্তৃপক্ষের সে তৎপরতা কি আছে”, ক্ষোভের সঙ্গে বলেন নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “পানির মত এতো জরুরি একটা বিষয়ে যে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, তা এখানে দেখা যায় না। ওয়াসার সরবরাহ করা পানির পানযোগ্যতা নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা নেই।”বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “আমরা এখন মেনেই নিয়েছি যে, কলের পানি দিয়ে গোসল করা যায়, কাপড় কাচা যায়, কিন্তু সরাসরি পান করা যায় না।”

বিষয়টি মেনে নিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারাও। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ কেমিস্ট মো. আব্দুস সাত্তার মিয়াহ নিজেই নগরবাসীকে ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পানি পানের পরামর্শ দিচ্ছেন।”আমার নিজের বাসায়ও ট্যাপের পানি সরাসরি খাই না। ফুটিয়ে তারপর ফিল্টার করে খেতে হয়। অন্য সবাইকেও আমি একইভাবে পানি বিশুদ্ধ করার পরামর্শ দেই।”

আর ওয়াসা বলছে, শোধনাগারে পানি দূষণমুক্ত করার ‘সবোর্চ্চ প্রক্রিয়া’ চালানোর পরও ঢাকায় সরবরাহ করা পানিকে ‘বিশুদ্ধ’ বলা কঠিন।

উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, “পৃথিবীর বহু শহরে ‘পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার’ লেখা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা করা তো অনেক কঠিন একটা কাজ। যে এলাকায় করা হবে, সেখানকার মানুষের ক্ষমতা যাচাই করতে হবে আগে।”

অবশ্য বিষয়টি ‘কঠিন হয়ে ওঠার’ জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন ড. আইনুন নিশাত।”আমরা আসলে জ্ঞানপাপী। আমরা জানি কী করতে হবে, ওয়াসাও জানে। ওয়াসার এমডির কাছ থেকে অনেক বড় বড় মহাপরিকল্পনার কথা শোনা যায়। কিন্তু সেগুলো বাস্তবে কাজে আসে না।”তিনি বলেন, শোধনাগারে বিশুদ্ধ করার পর কল থেকে সুপেয় পানি পাওয়ার জন্যে দুটি বিষয় জরুরি। প্রথমত পুরো ঢাকার পাইপলাইনের সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে, দ্বিতীয়ত পাইপলাইনে উচ্চচাপ বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

“যেসব পাইপ ৫০ বছর আগে বসানো হয়েছে, সেখানে বাইরের ময়লা পানি ঢুকে যাচ্ছে সহজেই। সায়েদাবাদ শোধনাগার থেকে হয়তো ভালো পানি গিয়েছিল, কিন্তু মাঝখানে পাইপলাইনে উচ্চচাপ না থাকায় বিষাক্ত হয়ে উঠতে পরে। বাসায় যে পানি যাবে তা নিরাপদ হবে না।”

আইনুন নিশাত বলেন, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ার কারণে ঢাকা ওয়াসার পাইপলাইনে পানির চাপ সবসময় থাকে না।

“বাইরের দেশে ট্যাপ ছাড়লে সবসময়ে একই ফ্লোতে পানি পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এখানে একেক সময় একেক ফ্লোতে পানি পরে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার পানির যে ৭৮ শতাংশ গভীর নলকূপ থেকে তোলা হয়, তার মান ‘যথেষ্ট ভাল’। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার ‘ভয়ঙ্কর দূষিত’ পানি পরিশোধন করে সরবরাহের বাকিটা দেয় ওয়াসা।

ওই পর্যন্ত পানির মান যত ভালোই হোক না কেন, গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর পথে পাইপ লাইনে তা আর পানযোগ্য থাকে না। এছাড়া আবাসিক ভবনগুলোর রিজার্ভ বা ওভারহেড ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়।

ওয়াসার আতাউর রহমান বলছেন, দীর্ঘ পথ পার হয়ে তাদের পানি গ্রাহকের কাছে যায়। এর কোনো ক্ষেত্রে পানি দূষিত ‘হতেই পারে’। আর রিজার্ভ ট্যাংক পরিষ্কার না হলে, ট্যাপের লাইনে সমস্যা থাকলে তা গ্রাহককেই দেখতে হবে।

কিন্তু আরবান রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান ড. নজরুল ইসলাম বলছেন, ঢাকার কোন এলাকার পানি কতটা বিশুদ্ধ তা নিয়মিত পরীক্ষা করার দায়িত্ব ওয়াসার। বিভিন্ন কারণে পানির মান নষ্ট হতে পারে, কিন্তু সে বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোও ওয়াসার দায়িত্ব, যা তারা পালন করে না।

“আর ঢাকার অধিকাংশ বাড়ির মালিকও রিজার্ভ ট্যাংক বা পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে যত্নশীল নন। যে সময়বিরতিতে এগুলো পরিষ্কার করা উচিৎ, তা তারা করেন না।”

প্রতি বছরই গরম আর বর্ষার শুরুতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই পানি ব্যবহারে দেখা যায় চোখ জ্বলা, গা চুলকানোসহ নানা উপসর্গ। কলেরা হাসপাতালেও বেড়ে যায় রোগীদের ভিড়।

আদাবরের বাসিন্দা হিসাম খান কিংবা আজিমপুরের গৃহিনী দিলরুবা জামানের মতো মধ্যবিত্ত আর উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণি পানি ফুটিয়ে তারপর ফিল্টার করে পান করতে পারে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম রাসেলের মতো অনেকেই ট্যাপের পানি সরাসরি পান করার কথা ভাবতেও পারেন না।

কিন্তু আগারগাঁও বস্তির রিকশা চালক সেলিম ও তার পরিবারকে রাস্তার কলের পানিই খেতে হয়।

“এইখানে ছয়টা পরিবারের লাইগ্যা দুইটা গ্যাসের চুলা। রান্ধনের সুযোগ পাইতেই কষ্ট হয়। পানি ফুটাইয়া খামু কেমনে?”

সেলিমের মতো যাদের পরিবার নিয়ে বস্তি বা কোনো টিনশেড কলোনিতে থাকতে হয়, মাসে যাদের আয় দশ থেকে ১৫ হাজার টাকা, বোতলের পানি বা ওয়াটার পিউরিফায়ার তাদের জন্য নয়।

“পানির ময়লা কাপড় দিয়া ছাঁকন ছাড়া আমাগো আর কিছু করার নাই”, বলেন সেলিম।

শোধনের পর গ্রাহকের কল পর্যন্ত সুপেয় পানি পৌঁছে দিতে এবং ‘সিস্টেম লস’ কমাতে এডিবির সহায়তায় গত ৫ বছর ধরে ঢাকায় ওয়াসার পাইপ লাইন সংস্কারের কাজ চলছে।

“ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সেক্টর ডেভেলপমেন্ট” নামের এ প্রকল্পের আওতায় দেড় হাজার কোটি টাকায় মোট তিন হাজার কিলোমিটার পাইপ পর্যায়ক্রমে সংস্কার করার কথা রয়েছে।

এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলে নগরবাসী সরাসরি “ট্যাপ থেকে” পানি পান করতে পারবে বলে সম্প্রতি আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ. খান।



এ পাতার আরও খবর

ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে ছাত্র নেতৃত্বের সম্মিলিত অবস্থান: অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে ছাত্র নেতৃত্বের সম্মিলিত অবস্থান: অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা
“আমি শফিকুল ইসলাম কাজল-এই বাংলাদেশ আমি চাইনি” “আমি শফিকুল ইসলাম কাজল-এই বাংলাদেশ আমি চাইনি”
বিচার না, প্রহসন: বাংলাদেশে রাজসাক্ষ্য, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি বিচার না, প্রহসন: বাংলাদেশে রাজসাক্ষ্য, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি
বিচার না, প্রহসন: বাংলাদেশে রাজসাক্ষ্য, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি বিচার না, প্রহসন: বাংলাদেশে রাজসাক্ষ্য, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি
“ঐকমত্যের পথে বাংলাদেশ: কমিশন উদ্যোগ ও রাজনৈতিক জবাবদিহির সমীকরণ” “ঐকমত্যের পথে বাংলাদেশ: কমিশন উদ্যোগ ও রাজনৈতিক জবাবদিহির সমীকরণ”
ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত পাঠানো হবে আগামীকাল: ড. আলী রীয়াজ ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত পাঠানো হবে আগামীকাল: ড. আলী রীয়াজ
এনসিপি’র বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপরাধের অভিযোগ: রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণের দাবি উঠছে এনসিপি’র বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপরাধের অভিযোগ: রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণের দাবি উঠছে
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা
সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত: এনসিপিকে সব ধরনের প্রোটোকল বাতিল, গোপালগঞ্জ হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতির দায়ভারেই কঠোর অবস্থান সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত: এনসিপিকে সব ধরনের প্রোটোকল বাতিল, গোপালগঞ্জ হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতির দায়ভারেই কঠোর অবস্থান
জাতিসংঘে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’: দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনে বিশ্বজোট, গাজায় যুদ্ধবিরতির জোরালো আহ্বান জাতিসংঘে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’: দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনে বিশ্বজোট, গাজায় যুদ্ধবিরতির জোরালো আহ্বান

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)