শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বুধবার, ১০ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » চাটমোহরে তালপাখার গ্রাম মহেশপুর
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » চাটমোহরে তালপাখার গ্রাম মহেশপুর
২৮৯ বার পঠিত
বুধবার, ১০ জুন ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

চাটমোহরে তালপাখার গ্রাম মহেশপুর

------

জাহাঙ্গীর আলম, চাটমোহর
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রাম। এখানকার ১৫০টির বেশি দরিদ্র পরিবার জীবিকার তাগিতে তালপাখা তৈরি পেশায় জড়িয়ে রয়েছে। প্রায়  ৪১ বছর ধরে পরম মমতায় ধরে রেখেছে এ শিল্প। চরম গরমে প্রশান্তির জন্য মহেশপুরের তালপাখার জুড়ি মেলাভার। তাই এখন অনেকে বলেন, ‘কুল-কুল, ঠান্ড-ঠান্ডা’ মহেশপুরের তালপাখা।
গরমকালে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার পাখা তৈরি হয় গ্রামটিতে। আর এই পাখা শিল্পকে ঘিরে মহেশপুরে উঠেছে একটি দাদনচক্রও। গরিব পাখার কারিগরা দাদনের অর্থের ওপর নির্ভর করেই কুঠির শিল্পটি আঁকড়ে ধরে আছেন। এলাকাবাসীর কাছে গ্রামটি তালপাখার গ্রাম হিসাবেই সমধিক পরিচিত।
চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রামটির পাশ দিয়েই চলে গেছে চাটমোহর-পাবনা সড়ক। সেই সড়ক থেকে নেমে মেঠোপথে একটু এগুলেই মহেশপুর গ্রাম। গ্রাম প্রধান আমজাদ হোসেনের বাড়ির পরই পাখা বানানোর আয়োজন চোখে পড়ে। বাড়ির আঙ্গিনা-ঘর-বারান্দাময় শুধু পাখা আর পাখা। পরিবারের সকলে মিলে পাখা বানানোয় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে এখন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুতো দিয়ে পাকা সেলাই করছেন বৃদ্ধ। নাতনি পাশে বসে তালপাতা কাটছে। বাঁশ কাটছে বাড়ির নতুন বউটি। পাখায় রং দিচ্ছে কোনো বাড়ির ছেলে-বউ। শিশু ছাড়া একজন মানুষও বসে নেই।
গ্রামটির মানুষদের এই যে অবিশ্রান্ত শ্রম-সাধনা, তা কিন্তু শুধুই দু’বেলা বেঁচে থাকার প্রানান্ত চেষ্টা। কারণ ৪১ বছরেও এই পাখার কারিগরদের ভাগ্যে চোখে পড়বার মতো কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আলাপকালে সে সব দুঃখের কথাই জানালেন গ্রামের আছের আলী। তিনি বললেন, ‘মধ্যস্বত্তভোগী দাদনদার ব্যবসায়ীরা চড়া সুদের কথা বলে নাম মূল্যে এ পাখা নিয়ে নেয়। লাভের গুড় তারাই চেটে খায়।’
কাদের আলী জানান, আমারা শুধু পারিশ্রমিকটাই পাই। আব্দুস সোবাহান (৫৭) বলেন, ‘আমাগারে পুঁজি নাই। তাই বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছে দাদন লেই। তারা অভাবের সুযোগ লিয়ে আমাগারে পাখার ন্যায্য দাম থ্যাকে বঞ্চিত করে।’
গ্রামটির স্বচ্ছল কৃষক আলহাজ্ব আকাতুল্লাহ তারা মিয়া বলেন, গ্রামে ১৬০ ঘর মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ১৫০ পরিবার এই পাখা বানিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এদের মধ্যে আবার ৮০টি পরিবারই ভূমিহীন। অনেকের বসতভিটা নেই। বাস করেন অন্যের জায়গায় বাড়ি করে।
আবুল হোসেন চাটমোহর রেল স্টেশনে করেন কুলির কাজ। পরিবারে অন্যরা সবাই করেন পাখা তৈরি। তিনি জানান, গ্রামের মেয়েরাই পাখা বানানোর কাজটি করেন। পুরুষেরা অধিকাংশ পাবনা শহরে গিয়ে সারাদিন রিকসা চালান। রাতে বাড়ি ফিরে স্ত্রীদের সাহায্য করেন।
পাখা কারিগর আইয়ুব আলী বলেন, ‘ইটভাটার জন্যি তালগাছ সাবার হয়ে যাচ্ছে। পাতা সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়িছে এখন। বহুদূরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে তালপাতা কিনে আনা লাগে। একটা গাছের ১৫ থেকে ২০টা ড্যাগে হয়। তাতে ১৫০ থেকে ২০০ টা পাখা হয়।
মজিরন ও সুফিয়া খাতুন বলেন, পাখা বানাতে তালপাতা ছাড়াও লাগে জাওয়া বাঁশ, সুঁতা, গুনা ও রং। পাখা বানানোর উপকরণ সমন্ধে চায়না খাতুন বলেন, ‘তালপাতা ভালো কোরো রোদি শুকায়ে ঠান্ডায় নরম কোরে লেওয়া লাগে। বাঁকাকাঠি সুন্দর ডিজাইন কোরে তার মুদিন তালপাতা ডুকায়ে গুনে (তার) দিয়ে বাঁধে সুতা দিয়ে সেলাই করা লাগে। তারপর শেষে করা লাগে রং।’ এক রঙে-ঢঙে রেনু খাতুন বললেন, ‘পাখার ওপর তালের পাখা গ্রাণের সখা, গরম আসলি কোরে দেখা- এ কথাও লেখা লাগে।
কুরমান আলী জানান, এখানে দুই রকম পাখা বানাই আমরা। পকেট পাখা আর ডাটি পাখা। তিনি জানান, ১০০ ডাটি পাখা বানাতে এখন খরচ হয় ৩০০ টাকা। মহাজনের কাছে বিক্রি করি ৪২৫ টাকা। মহাজনরা সেই পাখা ঢাকা-খুলনা-যশোর নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
ফজলুর রহমান ও আঃ রহিম বলেন, সিজনের আগেই দাদনদাররা আগাম টেকা দিয়ে কম দামে পাখা বানায়ে লেয়। স্থানীয় দাদনদার আলমাস, আনিস, বরকত, ওয়াহেদসহ কয়েক জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা দাদনের কথা স্বীকার করে বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর তারা এই পাখার ব্যবসা করছেন তারা। পুঁজি খাটাচ্ছেন এই তালপাখার গ্রামে। বাইরের মহাজনরাও পাখার সিজনে এখানে এসে টাকা খাটায়। টেকার তো সুদ আছে। আমার সেই হিসেবে পাখার দাম ধরি। তাছাড়া আমরা তো বাইরে বিক্রি করি। ঢাকাসহ সারাদেশে। সিডার খরচ আছে অনেক। তাই কেনা কম দামে হলেও খরচের কারণে আমাগারেও খুব একটা লাভ হয় না।
জহুরা খাতুন বলেন, বাবারে সাংবাদিকরা অ্যাসে খালি ছবি লিয়ে চলে যায়, কেউ আমাগারে খোঁজ-খবর লেয় না। আগে এই গিরামে কত মানুষ পাখা বানাতো। এখন অনেক মানুষই এ কাজ ছেড়ে দিচ্চে পুঁজির অভাবে। সরকার আমাগারে যদি লোন দিলোনে তালি আমরা আরো পাখা পাখা বানানের কামডা ধরে রাকপের প্যারতেম।
মহেশপুর গ্রামের প্রধান আলহাজ্ব মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর থেকে এখানে পাখা তৈরি শুরু হয়। তখন সোবাহান ও আবুল হোসেন নামের মাত্র কয়েক জন শুরু করেছিল। এখন তো তালপাখার গ্রাম হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, গ্রামটির প্রায় সবাই গরিব মানুষ। মাত্র ১০ পরিবার স্বচ্ছল। ওদের পুঁজি নেই। এই সুযোগটা নিচ্ছে দাদনদার মহাজন। তিনি দাবি করেন, সরকার যদি এদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতো, তাহলে এরা এক সময় নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যেত। আর কুঠির শিল্পটাও বেঁচে যেতো।



এ পাতার আরও খবর

বেনজির ও মেয়ের নামে থাকা দুবাই এ একটি ফ্লাট দুটি ব্যাংক হিসাব জব্দ বেনজির ও মেয়ের নামে থাকা দুবাই এ একটি ফ্লাট দুটি ব্যাংক হিসাব জব্দ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট: ইউনুস সরকারের পদক্ষেপ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট: ইউনুস সরকারের পদক্ষেপ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
ইউনুসের নির্দেশ মানি না, পাল্টা তোপ হাসিনার, দলের নির্যাতিতদের বললেন, খুনিদের বিচার করবই ইউনুসের নির্দেশ মানি না, পাল্টা তোপ হাসিনার, দলের নির্যাতিতদের বললেন, খুনিদের বিচার করবই
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায়
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আড়ালে নাটকীয়তা চলছে: মির্জা আব্বাস আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আড়ালে নাটকীয়তা চলছে: মির্জা আব্বাস
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতকে সংগঠনগত বিচারের আওতায় আনা উচিত -বাংলাদেশ জাসদ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতকে সংগঠনগত বিচারের আওতায় আনা উচিত -বাংলাদেশ জাসদ
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন
সাবেক এমপি শিল্পী মমতাজ গ্রেপ্তার সাবেক এমপি শিল্পী মমতাজ গ্রেপ্তার
আমু নানক’র অস্ত্রধারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী মিলন কি আইনের ঊর্ধ্বে আমু নানক’র অস্ত্রধারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী মিলন কি আইনের ঊর্ধ্বে

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)