শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ব্রেকিং নিউজ » ফরিদপুর ডেমড়া গণহত্যা দিবস
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ব্রেকিং নিউজ » ফরিদপুর ডেমড়া গণহত্যা দিবস
৩১৯ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ফরিদপুর ডেমড়া গণহত্যা দিবস

---
জাহাঙ্গীর আলম, চাটমোহর (পাবনা) :

পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমড়া গণহত্যা দিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। এই দিনে ১৯৭১ সালের ১৪ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে গ্রামবাসী যখন গভীর ঘুমে তখন দুই শতাধিক পাকিস্তানী সৈন্য পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমড়া এলাকায় আতর্কিত হামলা চালায়। এদিন পাশাপাশি ৩টি গ্রামে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী প্রায় নয়’শ ব্যক্তিকে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ড ভিয়েতনামের মাইলাম গণহত্যার চেয়েও বড় এবং নির্মম। বেশি মানুষকে এখানে নিরীহ-নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়।
পাশাপাশি গ্রাম তিনটি ঘিরে ফেলে হানাদার সৈন্যরা এবং নির্বিচারে গুলি চালায়। ঘুমন্ত গ্রামবাসীরা গুলির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে উঠে দিক ছুটতে থাকে। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় হানাদার সৈন্যরা। নিহত হয় নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসী।
যুদ্ধ শুরু হলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বড়াল নদীর তীরবর্তী এই গ্রাম ৩টিকে নিরাপদ মনে করে বিভিন্ন এলাকার হিন্দু – মুসলমানরা আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই ছিল বড় ব্যবসায়ী এবং অবস্থাপন্ন গৃহস্থ। হানাদার পাক সৈন্যদের এই এলাকার সন্ধান দেয় কিছু মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর সদস্য। এর অন্যতম ছিল বেড়া বাজারের আসাদ আলী দর্জি (স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ক্ষুব্ধ জনতার গণ পিটুনিতে আসাদের মৃত্যু হয়)।
গ্রাম তিনটির প্রবেশ পথ যখন পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা বন্ধ করে দেয় তখন গ্রামবাসী পার্শ¦বর্তী ফসলের জমি এবং জঙ্গলে লুকিয়ে জীবন রক্ষার চেষ্টা করে। বাউশগাড়ী গ্রামের পশ্চিম দিকের বিশাল বাঁশঝাড়ের গভীর গর্তের অন্ধকারে জীবন রক্ষার্থে লুকিয়ে থাকে প্রায় সাড়ে পাঁচ’শ নারী পুরুষ। হানাদার বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করে। নিহত হয় সকলেই।
এদের মধ্য থেকে অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান খলিলুর রহমান, মুজিবুর রহমান, আব্দুল গফুর ও মোকশেদ আলী। মৃত্যুঞ্জয়ী এসব ব্যক্তিদের বয়স এখন সত্তরের কোঠায়। তারা সেদিনের সেই বিভৎস্য হত্যাকান্ডের বর্ননা দেন। হানাদার বাহিনী রাত আনুমানিক ৪ টায় গ্রামগুলো ঘিরে ফেলে। অস্ত্রের মুখে গ্রামবাসীদের জিম্মি করে যুবতী নারীদের ধর্ষন করে। যুবকদের গুলি ও বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। হিন্দু পুরুষদের কাপড় খুলে পরীক্ষা করা হয় তারা হিন্দু না মুসলমান। মুসলিমদের বিশেষ করে যুবক এবং পৌঢ়দের জিজ্ঞাসা করা হয় তারা মুক্তিযোদ্ধা কি না ? এ ভাবে সকলকে এক জায়গায় জড়ো করে ব্রাশ ফায়ার করে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ডেমড়া পালপাড়া, জেলে পাড়া এবং দাস পাড়ায় হিন্দুদের সকল বাড়ি পুড়িয়ে দেয় হানাদাররা। হানাদারদের পথ প্রদর্শক জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা এ সময় ব্যাপক লুটপাট করে।
ডেমড়া বাজারের পশ্চিম দিকের পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালে নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। ডেমড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সনোতাষ কুমার জানান, তিনি একটি গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থেকে প্রাণে বেঁচে যান। তার পরিবারের তিন জনকে হত্যা করে হানাদাররা।
প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষক বলেন, হানাদার সৈন্যরা নিরীহ-নিরস্ত্র পুরুষদের কাপড় খুলে হিন্দু-মুসলিম সনাক্ত করে এবং লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। বাউশগাড়ির একটি জঙ্গলের মধ্যবর্তী গর্তে লুকিয়ে থাকা প্রায় পাঁচ”শ মানুষকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। সেখানেই লম্বালম্বি বিশাল গর্তে তাদের গণকবর দেয়া হয়।
তিনি জানান বৈশাখের প্রচন্ড গরমে গ্রামবাসী অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থেকে গভীর রাতে ঘুমাতে যায়। যখন তারা গভীর ঘুমে নিমগ্ন তখনই হানাদার সৈন্যরা এলাকাটি ঘিরে ফেলে। গুলির শব্দে গ্রামবাসীরা জেগে উঠে দিগিবদিক ছুটে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা পালাতে ব্যার্থ হয়। হানাদাররা যেহেতু বিরাট এলাকা ঘিরে রেখেছিল। অনেকেই পুকুরে কিংবা গর্তে এবং গাছে উঠে প্রাণরক্ষার চেষ্টা করে তাদের বেশিরভাগই হানাদারদের গুলিতে নিহত হয়।
পাশর্^বর্তী বড়াল নদীতে ঝাপ দিয়ে অনেক নারী-পুরুষ প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করে। যেখানে যে অবস।তায় তারা সাঁতার দিয়ে বা ডুব দিয়েছিল সেখানেই হানাদাররা গুলি চালায় এবং তাদের হত্যা করে।
দিনের আলোতে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চালানো হয় হত্যাকান্ড এবং অগ্নিসংযোগ। দীর্ঘ এই সময় শিশুরা ছিল সবচেয়ে বিপদে। তাদের সামনেই তাদের পিতা-মাতাকে হত্যা করা হয়। না খেয়ে থাকে দুধের শিশু। তাদেরও হত্যা করা হয়। মেয়ের সামনে মা’কে এবং পিতা-মাতার সামনেই মেয়েকে ধর্ষন করে বর্বর হানাদার সৈন্যরা।
পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যরা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে বিকালে ডেমড়া ত্যাগ করে। হত্যা যুদ্ধের পর হানাদার সৈন্যরা ডেমরা বাজারে এবং বাজারের মধ্যবর্তী উচ্চ বিদ্যালয় মঠে জড়ো হয়। সেখানে তারা বাজার থেকে লুট করা খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করে।
এ ছাড়াও গ্রাম থেকে লুট করা খাসি ও গরু জবাই করে রান্না করে ভুরিভোজ করে। দুপুরে দুটি বিমান ডেমড়া গ্রামের উপর দিয়ে কয়েকবার চক্কর চলে যায়। বিকালে হানাদার সৈন্যরা বাজার ত্যাগ করার আগে বাজার এবং বাজারের মধ্যবর্তী কালিমন্দির পুড়িয়ে দেয়।
পার্শ¦বর্তী দিঘুলিয়া, রতনপুর, নাগডেমড়া, ছোট পাথাইলহাট, কালিয়ান, বারোয়ানি গ্রামের মানুষজন বিকালে হত্যাযজ্ঞে নিহতদের (হিন্দু-মুসলিম) মৃতদেহগুলো গণকবর দেয়। গভীর রাত পযন্ত মৃতদেহ কবরস্থ করা হয়।
ডেমড়া বাজারের অদূরে বাঘাবাড়ি-চাটমোহর সড়কে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। যার কাজ এখনো অসমাপ্ত। ডেমড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মলয় কুমার (যার পিতাকেও ওই দিন হানাদাররা হত্যা করেছিল) বলেন, ‘ডেমড়ার হত্যাকান্ড ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়কার মাইলাম হত্যাকন্ডের চেয়েও বড় ঘটনা। একই সময়ে এতো লোককে হত্যা করার দীর্ঘ ৪৪ বছরেও সরকারের স্বীকৃতি মেলেনি। আমরা মনে করি এই দিবসটিকে ডেমড়া গণহত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করা উচিৎ।



এ পাতার আরও খবর

রুকন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ইউকের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত রুকন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ইউকের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বরিশাল সোনালী ব্যাংক: দুর্নীতিতে জর্জরিত, গোপালের পথে হাটছেন জিএম মাহমুদুল হক বরিশাল সোনালী ব্যাংক: দুর্নীতিতে জর্জরিত, গোপালের পথে হাটছেন জিএম মাহমুদুল হক
সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণ করা কোন সংগঠনের কাজ নয়: বরিশাল অনলাইন সাংবাদিক ইউনিয়ন সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণ করা কোন সংগঠনের কাজ নয়: বরিশাল অনলাইন সাংবাদিক ইউনিয়ন
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি
বিএনপি নেতা হাবিবুল্লাহ রানার চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যে অতিষ্ঠ দীঘিনালা উপজেলাবাসী বিএনপি নেতা হাবিবুল্লাহ রানার চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যে অতিষ্ঠ দীঘিনালা উপজেলাবাসী
ওটরা ইউনিয়ন এর জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার অঙ্গীকার আসাদুজ্জামান সুজনের ওটরা ইউনিয়ন এর জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার অঙ্গীকার আসাদুজ্জামান সুজনের
উজিরপুরে ইয়াবা গডফাদার বাবু মুন্সিকে গ্রেফতার দাবি উজিরপুরে ইয়াবা গডফাদার বাবু মুন্সিকে গ্রেফতার দাবি
গণহত্যার বিচার কার্যকর করতে উজিরপুর বাসী কে  ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে - আহম্মেদ শাকিল। গণহত্যার বিচার কার্যকর করতে উজিরপুর বাসী কে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে - আহম্মেদ শাকিল।
আগামী কাল বাংলাদেশ ইনকিলাব পার্টির বিক্ষোভ সমাবেশ আগামী কাল বাংলাদেশ ইনকিলাব পার্টির বিক্ষোভ সমাবেশ
ঝালকাঠি-২ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জীবা আমিনা ঝালকাঠি-২ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জীবা আমিনা

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)