
রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » আলাস্কায় আমন্ত্রণ: পুতিনের একঘরে অবস্থার অবসান, না কি ভূরাজনৈতিক পুনর্বাসন?
আলাস্কায় আমন্ত্রণ: পুতিনের একঘরে অবস্থার অবসান, না কি ভূরাজনৈতিক পুনর্বাসন?
বিশ্লেষণ | ২৪ মতামত বিভাগ | ৯ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে-এই খবরটি শুধু একটি কূটনৈতিক সফরের ঘোষণা নয়, বরং এটি একটি যুগান্তকারী ভূরাজনৈতিক বার্তা। ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে থাকা পুতিনের জন্য এটি এক ধরনের পুনর্বাসনের সুযোগ।
আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে পুনরায় গ্রহণযোগ্যতা?
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর পশ্চিমা বিশ্ব পুতিনকে কার্যত ‘persona non grata’ হিসেবে বিবেচনা করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, এবং বহু দেশ তার সফরকে নিষিদ্ধ করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়, ফলে আইনি বাধা নেই। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনছে-যা একদিকে শান্তি আলোচনার ছদ্মাবরণে, অন্যদিকে রাশিয়াকে পুনরায় বৈশ্বিক রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল।
আলাস্কা: প্রতীকী স্থান, কৌশলগত বার্তা
আলাস্কা একসময় রাশিয়ার অংশ ছিল, যা ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র কিনে নেয়। রুশ জাতীয়তাবাদীদের কাছে এটি একটি ঐতিহাসিক ক্ষত। পুতিনের এই সফর তাই শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং প্রতীকী বিজয়ের বার্তা বহন করে। এটি রুশ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পুতিনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধ: শান্তি না চাপিয়ে দেওয়া সমাধান?
ট্রাম্প দাবি করেছেন, একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার শর্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পুতিনের লক্ষ্য ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং ন্যাটো সম্প্রসারণ রোধ করা। এই আলোচনায় যদি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে এটি হবে একটি চাপিয়ে দেওয়া শান্তি, যা দীর্ঘমেয়াদে আরও অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: দ্বিধা ও উদ্বেগ
আলাস্কা সফরকে ঘিরে মার্কিন রাজনীতিতে দ্বিধা দেখা দিয়েছে। একদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে শান্তির সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে ইউক্রেনপন্থী রাজনীতিকরা এটিকে নৈতিক আপস হিসেবে বিবেচনা করছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ স্পষ্ট।
পুতিনের আলাস্কা সফর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি মোড় ঘোরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এটি যদি সত্যিকারের শান্তির সূচনা হয়, তবে তা স্বাগতযোগ্য। কিন্তু যদি এটি হয় একটি প্রতীকী পুনর্বাসন, যেখানে যুদ্ধাপরাধ ও আগ্রাসনের দায় এড়িয়ে যাওয়া হয়, তাহলে তা হবে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের পরাজয়।