বাংলাদেশ আগামী ইউক্রেন নয় তো?
শফিকুল ইসলাম কাজল রুহানি ঃ
বাংলাদেশের অভ্যুথান পরবর্তি ইউক্রেনের মত আর একটি যুদ্ধের ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে কি ? আগামি দিন কি ঘটতে যাচ্ছে জানতে আর জানাতেই জেগে আছি।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী প্রশ্ন ও তার উত্তর ক্ষুজে দেখার জন্য সত্য আগেই খুজে বের করার খুব দরকার।
বাংলাদেশ আগামী ইউক্রেন নয় তো? রাখাইন, ভারত-চীন উত্তেজনা ও ভূরাজনীতির ঘূর্ণিপাকে দক্ষিণ এশিয়া
২০২৪ সালের শেষদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর, দেশটি নতুন এক অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুনরায় সেনা-জাতিগত সংঘাত, চীনের দক্ষিণ এশিয়ায় আগ্রাসী কূটনীতি, আমেরিকা ও ভারতের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ*-সব মিলিয়ে গোটা বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল এক উত্তপ্ত ভূ-রাজনৈতিক নাট্যভূমি*তে পরিণত হচ্ছে।
প্রশ্ন জাগে-
বাংলাদেশ কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী ‘গ্লোবাল স্পট’ যেখানে বড় শক্তিগুলোর সংঘর্ষ, প্রক্সি যুদ্ধ, আর অর্থনৈতিক লড়াইয়ের ময়দান তৈরি হবে?
ভূ-রাজনীতির প্রধান কড়চা: রাখাইন-চট্টগ্রাম করিডোর:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষ, এবং সেই সীমানা ঘেঁষে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবানে রোহিঙ্গা ও জাতিগোষ্ঠী উত্তেজনা একটি স্পর্শকাতর আগ্নেয়গিরি হয়ে উঠেছে।
চীন ইতোমধ্যেই রাখাইন দিয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর ও তেল-পাইপলাইন স্থাপন করেছে - যেটি চীনের স্ট্র্যাটেজিক করিডোর।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত, বিশেষ করে কুয়াড (QUAD) জোটের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে নিজেদের উপস্থিতি শক্তিশালী করছে।
এই করিডোর “সেফ না থাকলে” চীন, ভারত ও পশ্চিমা বিশ্ব-তিন পক্ষই চাপ সৃষ্টি করবে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা:২০২৪ সালের অভ্যুথান-পরবর্তী সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লড়াইয়ে, অভ্যন্তরীণ বৈধতার প্রশ্নে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ভারসাম্যে অবস্থান করছে।
পশ্চিমা শক্তিগুলো মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ইস্যুতে ‘চাপ’ তৈরি করছে। চীন-রাশিয়া বিপরীতে বলয়ের শক্তি হিসেবে উঠতে চাইছে। ভারত এ অবস্থায় ‘নিজস্ব স্বার্থ সুরক্ষায়’ নীরব চাপ প্রয়োগকারী শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
নুতন যুদ্ধ কি খুব কাছে? যুদ্ধ মানেই কেবল গোলাগুলি নয়। যুদ্ধের নতুন রূপ হলো-
অর্থনৈতিক শৃঙ্খল (ডলার, রেমিটেন্স, ব্যাঙ্কিং সেক্টর)সামাজিক বিভাজন (ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী)সাইবার প্রপাগান্ডা (ভুয়া তথ্য, রাজনৈতিক বিভ্রান্তি) সীমান্ত উত্তেজনা (BSF গুলি, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, চোরাচালান)
এই সব মিলিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে উঠছে পরবর্তী শীতল যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন।
আগামি দিনের দিকচিহ্ন কী?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি আস্থা, স্বচ্ছতা ও বাস্তববাদে জনমত গঠন না করতে পারে-
যদি রাখাইন অঞ্চলের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে কক্সবাজার-পার্বত্য অঞ্চলে-
যদি রাশিয়া-চীন ব্লক এবং পশ্চিমা জোটের কূটনৈতিক চাপ একই সঙ্গে ভারি হয়-
তাহলে বাংলাদেশ “কৌশলগত যুদ্ধক্ষেত্র” হয়ে উঠতে বাধ্য।
করণীয় ও সাবধানবার্তা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবভিত্তিক করতে হবে - একপক্ষ নয়, স্বার্থই হোক পথপ্রদর্শক।
রাখাইন-সীমান্ত নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী নয় সহমতের সরকার গঠন জরুরি।
জাতীয় স্বার্থে তথ্য-প্রতিরক্ষা ও গুজব মোকাবেলায় মিডিয়া সচেতনতা বাড়াতে হবে।
শেষ কথা বাংলাদেশ এখন দাঁড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে।
আমরা চাইলে আগামি যুদ্ধের শিকার নয়, বরং একটি নতুন অঞ্চলের কৌশলগত নেতৃত্বে পরিণত হতে পারি।
প্রশ্ন একটাই-আমরা কি প্রস্তুত?