শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২

Daily Pokkhokal
রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি » ‘রক্তরা ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে’
প্রথম পাতা » রাজনীতি » ‘রক্তরা ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে’
৩২৭ বার পঠিত
রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

‘রক্তরা ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে’

---
পক্ষকাল ডেস্কঃ তখন সময়টা ১৯৮৪ সাল। জলপাই রঙের পোশাক আর কালো বুটের পদপৃষ্টে বাংলাদেশ। কালের চাকাকে উল্টে দিয়ে বিশ্বাসঘাতক মোশতাক চক্র জেনারেল জিয়ার সহায়তায় ক্ষমতা দখল করে। পৌনঃপুনিক সামরিক শাসনের জাঁতাকলে আটকে যায় বাংলাদেশ। বিপন্ন হয় আমাদের স্বাধীনতার চেতনা, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ হয়েছে, কিন্তু তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি। সামরিক শাসনের ধারাবাহিকতায় নানাবিধ ষড়যন্ত্র, হত্যা, ক্যুর মাধ্যমে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন জারি করেন ও নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা করেন ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। সেই দিন থেকেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাঙালি, বাংলাদেশ সামরিক শাসন মানে না। ১৯৮৩’র মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে অপ্রতিরোধ্য ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হন দীপালি সাহা, মোজাম্মেল, কাঞ্চন, আইয়ুবসহ অসংখ্য সাথী। পিচঢালা রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয় সামরিক জান্তার বুলেট ও বেয়নেটে। এরশাদ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের নামে উপজেলা পরিষদের কাঠামো তৈরি করে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ততদিনে দেশের রাজনীতির হাল ধরেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ১৫ দলীয় রাজনৈতিক জোট, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) ও অন্যান্য পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। উপজেলা নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে ১৫ দলীয় রাজনৈতিক জোট হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে। হরতাল সফল করার নিমিত্তে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি গ্রহণ করে। স্কপ শিল্প-কলকারখানায় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করে।

২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সাল। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় মধুর ক্যান্টিন থেকে। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন ডাকসু ভিপি আক্তারুজ্জামান, খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক, মুনির উদ্দীন আহমেদ, ফজলে হোসেন বাদশা, আনোয়ারুল হক, আবদুল মান্নান, শিরীন আখতার, মোস্তাক হোসেন, মুকুল বোস, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ। মিছিলের পেছনে ছিলাম আমরা তৎকালে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা। মিছিল শুরুর প্রাক্কালে কবি মোহন রায়হান আবৃত্তি করেন- ‘আমাদের মৃত্যুর জন্যে আজ কোনো পরিতাপ নেই আমাদের জন্মের জন্যে আজ কোনো ভালোবাসা নেই, আমাদের ধ্বংসের জন্যে আজ কোনো প্রতিকার নেই, আমাদের সবকিছু আজ শুধু ছলনার, শুধু আজ ব্যর্থতার ক্লেদ নিয়ে আসে। আজকে এখানে একজন শিক্ষক জন্মাক, আজকে এখানে একজন বুদ্ধিজীবী থাক, আজ নবজন্ম হোক এদেশের লেখক কবির আর তারা অন্ধকারে ঝলসিত আগ্নেয়াস্ত্রের মতন হোক স্পর্ধিত; স্পর্ধিত হোক আজ তারা স্পর্ধিত হোক’।

মিছিলটি কার্জন হল পেরিয়ে ফুলবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হয়। দাঙ্গা পুলিশ মিছিলের সামনে-পেছনে মিছিলের পেছন দিয়ে খুনি জান্তা এরশাদের নির্দেশে ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা শহিদ ইব্রাহীম সেলিম ও দেলোয়ার হোসেনকে। চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে যায় কয়েকজন। পুলিশি হেফাজতে শহীদদের লাশ তাদের গ্রামের বাড়ি দাফন করা হয়। সে এক মহান আত্মবিসর্জনের অধ্যায়। ঘাতক ট্রাক জন্ম দেয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞের। শহীদ সেলিম-দেলোয়ারের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

স্কপের ধর্মঘটের সমর্থনে দেশের কল-কারখানা, শিল্পাঞ্চলে প্রস্তুতি চলছিল। দেশের সর্ববৃহৎ পাটকল ‘আদমজী’তে ধর্মঘট প্রস্তুতির মিছিলে হামলা চালিয়ে খুনি এরশাদের মদদপুষ্ট ছায়াদুল্লাহ সাদুর গুণ্ডাবাহিনী ছুরিকাহত করে শ্রমিক নেতা বীর কমরেড তাজুল ইসলামকে। ঢামেক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১ মার্চ হরতাল চলাকালে কমরেড তাজুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষাজীবন শেষ করে তাজুল ইসলাম যোগ দিয়েছিলেন আদমজীর শ্রমিক হিসেবে। হতে পারতেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক, বিরাট অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার- অনেক কিছুই। মানুষের জন্য, বাংলাদেশের জন্য এই ব্যক্তিগত ত্যাগের আর ক’টা উদাহরণ আছে? তাজুলের খুনি এরশাদের চেহারা দেখলে মনে হয়, দৌড়ে গিয়ে ওই শয়তানের বুকের ভেতরে ওর হৃৎপিণ্ডে চাপা দিয়ে ৯ বছরের স্বৈরশাসনের পাওনা কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দিই। শহীদ কমরেড তাজুল ইসলাম, বীরের মৃত্যু হয় না। তোমাকে মনে রাখবে যতদিন এদেশ থাকবে, মানুষ থাকবে। কবির ভাষায় বলি- ‘রক্তরা ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে। শুকিয়ে দিয়েছে রোদ। রাস্তায় রক্তের দাগ নেই। বুকের ভেতরে দাগটা রয়ে গেছে। আজো তোমার খুনের বিচার হলো না। আলো ছাড়া চোখ কেবলি মুখের দুটি গর্ত মাত্র- এর বেশিকিছু না, কমও কিছু না।’ স্বৈর শাসনবিরোধী আন্দোলনের বীর শহীদদের আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।

সাবেক ছাত্রনেতা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা (শফী আহমেদ)



এ পাতার আরও খবর

আগামী কাল বাংলাদেশ ইনকিলাব পার্টির বিক্ষোভ সমাবেশ আগামী কাল বাংলাদেশ ইনকিলাব পার্টির বিক্ষোভ সমাবেশ
ঝালকাঠি-২ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জীবা আমিনা ঝালকাঠি-২ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জীবা আমিনা
“ওরা ১১ জন” নয়, বরং ১১টি পৃথক রাজনৈতিক ঘটনা: একটি বিশ্লেষণ “ওরা ১১ জন” নয়, বরং ১১টি পৃথক রাজনৈতিক ঘটনা: একটি বিশ্লেষণ
রাষ্ট্রীয় সংস্কার: জনগণের আকাঙ্ক্ষা না কি পশ্চিমা চাপ? রাষ্ট্রীয় সংস্কার: জনগণের আকাঙ্ক্ষা না কি পশ্চিমা চাপ?
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিতঅতীতের গৌরব, বর্তমানের সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকার বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিতঅতীতের গৌরব, বর্তমানের সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকার
ডাকসুর নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি, অভিযুক্ত শিবির নেতা আলী হোসেন ডাকসুর নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি, অভিযুক্ত শিবির নেতা আলী হোসেন
যুদ্ধবিমান নয়, জনগণের ভাত কাপড় বাসস্থান চাই–মোশরেফা মিশু : যুদ্ধবিমান নয়, জনগণের ভাত কাপড় বাসস্থান চাই–মোশরেফা মিশু :
গুরুতর আহত নুর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর আহত নুর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি
গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ: চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মব সংস্কৃতির পুনরুত্থান-ড. কামাল হোসেন গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ: চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মব সংস্কৃতির পুনরুত্থান-ড. কামাল হোসেন
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের দোহা সফর: মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের দোহা সফর: মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)