
মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » বিশ্লেষণ প্রতিবেদন পাকিস্তানি সংবাদপত্রে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ পুনরুদ্ধারের দাবি:
বিশ্লেষণ প্রতিবেদন পাকিস্তানি সংবাদপত্রে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ পুনরুদ্ধারের দাবি:
পাকিস্তানি সংবাদপত্রে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ পুনরুদ্ধারের দাবি: ইতিহাসের বিকৃতি না কৌশলগত বার্তা?
১৯ আগস্ট ২০২৫ পক্ষকাল ডেস্ক
একটি পাকিস্তানি ইংরেজি দৈনিক The Catchline সম্প্রতি একটি বিতর্কিত নিবন্ধে দাবি করেছে, “পূর্ব পাকিস্তানকে ফিরে পাওয়ার সময় এসেছে।” সিনিয়র সাংবাদিক তাবাসসুম মোয়াজ্জাম খানের লেখা এই নিবন্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে “ভারতের ষড়যন্ত্র” এবং “পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ” হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে “দেশদ্রোহী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
নিবন্ধের মূল বক্তব্য:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের ফল হিসেবে দেখানো হয়েছে
মুক্তিবাহিনীকে “বিচ্ছিন্নতাবাদী” এবং “ভারত-সমর্থিত” শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বকে ভারতীয় আধিপত্যের প্রতিফলন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে
ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আজমিকে “দেশপ্রেমিক” হিসেবে তুলে ধরে তার পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে
শেখ হাসিনার শাসনকে ভারতীয় প্রভাবের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে তার “ভারতে পালিয়ে যাওয়া”র দাবি করা হয়েছে
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাকিস্তানপন্থী পুনর্গঠনের নেতৃত্বে দেখানো হয়েছে
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ:
এই নিবন্ধটি এমন সময় প্রকাশিত হয়েছে, যখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ পুনরায় সক্রিয় হচ্ছে। তবে নিবন্ধের ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও ইতিহাসের স্বীকৃত বয়ানের পরিপন্থী।
ইতিহাসের বিকৃতি:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, যা পাকিস্তানের সামরিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জনগণের আত্মত্যাগের ফল। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং বহু রাষ্ট্র এই যুদ্ধকে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করেছে।
ঘৃণাত্মক ভাষ্য ও বিভাজন:
নিবন্ধে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজনমূলক বক্তব্য যেমন “হিন্দু আধিপত্য” বা “দেশদ্রোহী বাঙালি”-এসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থী। এমন ভাষ্য দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য হুমকি।
কৌশলগত বার্তা না উসকানি?
বিশ্লেষকদের মতে, এই নিবন্ধ পাকিস্তানের একটি অংশের কৌশলগত পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা হতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে চায়। তবে ইতিহাসের বিকৃতি ও উসকানিমূলক ভাষা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশের অবস্থান:
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে নাগরিক সমাজ, ইতিহাসবিদ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে “উসকানিমূলক” এবং “অগ্রহণযোগ্য” হিসেবে দেখছেন।
সুপারিশ:
বাংলাদেশ সরকার: বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে উত্থাপন করে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়: দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এমন ঘৃণাত্মক ভাষ্যকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত
গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ: ইতিহাসের সত্য ও স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানো জরুরি