ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে ইউরোপের আট দেশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজা শহর পুরোপুরি দখল করার ইসরায়েলি পরিকল্পনার ‘তীব্র’ নিন্দা জানিয়েছে আটটি ইউরোপীয় দেশ। রবিবার এক যৌথ বিবৃতিতে আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, মাল্টা, নরওয়ে, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া এবং স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে যেকোনো ধরনের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বা ভৌগোলিক পরিবর্তনের বিষয়টিকে ‘দৃঢ়ভাবে’ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসরায়েলের পতাকা
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ইসরায়েল সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণায় গাজা শহরসহ দখলদারিত্ব ও সামরিক অভিযান জোরদার করার তীব্র নিন্দা জানাই। এই সিদ্ধান্ত কেবল মানবিক সংকটকে আরও গভীর করবে এবং জিম্মিদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলবে।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই বিতর্কিত দখলদারিত্বের পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উল্লেখ করেন, পরিকল্পিত এই দখলদারিত্বের ফলে অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় প্রাণহানি ঘটবে এবং প্রায় ১০ লক্ষ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুত হবে। তারা জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যেকোনো ধরনের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বা ভৌগোলিক পরিবর্তনের বিষয়টিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সতর্ক করে বলেন, সামরিক অভিযান তীব্র করা এবং গাজা শহর দখল করা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের পথে একটি ‘গুরুতর প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের সঙ্গে গাজা ভূখণ্ড অবশ্যই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে হবে।’ ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয় রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে ‘উভয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ হিসেবে উল্লেখ করে তারা বলেন, এটি সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
তারা আরও যোগ করেন, ‘আমরা অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং স্থায়ীভাবে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে হামাসের হাতে থাকা সকল জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া এবং দ্রুত, নির্বিঘ্নে ও বৃহৎ পরিসরে মানবিক সহায়তা প্রবেশের দাবি জানাই।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় পুনরায় হামলা শুরু করে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ৯,৮৬২ জনকে হত্যা এবং ৪০,৮০৯ জনকে আহত করেছে, যা জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তিকে ভেঙে দিয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের প্রাণঘাতী যুদ্ধে ৬১,৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এই সামরিক অভিযানে ভূখণ্ডটি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, যার ফলে ইসরায়েল বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের সম্মুখীন হচ্ছে।
গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, এই ভূখণ্ডে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলারও মুখোমুখি হয়েছে।