
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » ‘ইউনূস জঙ্গি নেতা, দেশ বেচে দিচ্ছেন’, তীব্র আক্রমণে হাসিনা
‘ইউনূস জঙ্গি নেতা, দেশ বেচে দিচ্ছেন’, তীব্র আক্রমণে হাসিনা
‘ইউনূস জঙ্গি নেতা, দেশ বেচে দিচ্ছেন’, তীব্র আক্রমণে হাসিনা
আওয়ামি লিগের ফেসবুক পেজে অডিও বার্তা দিয়েছেন হাসিনা।
ঢাকা: পদত্যাগের জল্পনার মধ্য়ে কড়া বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ‘পরাজিত শক্তি’ এবং ‘বিদেশি শক্তি’র ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব তুলে ধরেছেন। সেই আবহেই ইউনূসকে তীব্র আক্রমণ করলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইউনূস ‘আমেরিকাকে দেশ বিক্রি করে দিচ্ছেন’ বলে অভিযোগ করলেন। (Sheikh Hasina)
বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। সেনার তরফ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে বলে একদিকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন সেনা প্রধান, অন্য দিকে, আবার BNP-র তরফেও দ্রুত নির্বাচন করানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে খবর আসছি। সেই আবহেই গতকাল কড়া বার্তা দেয় ইউনূস সরকার। ‘পরাজিত শক্তি’ এবং ‘বিদেশি শক্তি’ ষড়যন্ত্র করছে, সরকারকে কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে, অযথা চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়, হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় কড়া পদক্ষেপের। (Muhammad Yunus)
আওয়ামি লিগের ফেসবুক পেজে অডিও বার্তা দিয়েছেন হাসিনা। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমেরিকা চেয়েছিল। আমার বাবা রাজি হননি। তাঁকে জীবন দিতে হল। আমার ভাগ্যেও সেটাই জুটল। দেশ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকার চিন্তা কখনওই ছিল না আমার। যে দেশটা জাতীর পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে, যুদ্ধ করে, ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে স্বাধীন করেছেন, সেই দেশের মাটি কাউকে ছেড়ে দেওয়া কারও অভিসন্ধি হতে পারে না।”
ইউনূসের বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও ধারাল করে হাসিনা বলেন, “আজ কী দুর্ভাগ্য! এমন এক ব্যক্তি ক্ষমতায় এলেন, তিনি নাকি গোটা দেশের খুব পছন্দের! বিশ্বের পছন্দের মানুষ। আজ তিনি ক্ষমতায় এসে কী হল? আমি তো এঁকে দরজা খুলে দিয়েছিলাম ‘৯৬ সালে যখন সরকার গড়ি। আমার কাছেই তো হাত পেতেছিলেন। গ্রামীণ ব্যাঙ্কে নাকি টাকা নেই! টাকাগুলি যে সরিয়ে রেখেছেন, জানতাম না। এতবড় প্রতারণা ভাবতেই পারিনি। খুচরো ঋণ দেওয়া যাচ্ছে না বললেন, তখন বন্যাও। মোট ৪০০ কোটি দিয়েছিলাম। সেই টাকার কিন্তু কোনও হদিশ নেই। গ্রামীণ ফোরাম ব্য়বসার কথা বলা হল। ইউনূসের হাতেও সংস্থা দিলাম, কারণ প্রতিদিন ধর্না দিতেন। ওখান থেকেই টাকা মেরে খেল! ৬০০০ টাকা বেতনে যে ব্যক্তি ১৯৯০ সালে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এমডি-র চাকরি করতেন যিনি, তিনি দেশ-বিদেশে হাজার হাজার কোটির মালিক হলেন কী করে, সেই প্রশ্ন কেন জাগল না কারও মনে?”
সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের জেরে গতবছর হাসিনার সরকারের পতন ঘটে বাংলাদেশে। আর তার পরই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ক্ষমতায় আসীন হন ইউনূস। সেই প্রসঙ্গে হাসিনার বক্তব্য, “নিজের যত দুর্নীতির মামলা, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের টাকা, শ্রমিকদের টাকা মেরে খাওয়ার মামলা, শ্রমিক আদালতে টাকা তছরুপের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইউনূস। ক্ষমতায় এসে যত দুর্নীতির মামলা সব বাতিল করে দিয়েছেন, নিজেরটাও, বাকিদেরটাও। জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের সাহায্যে ক্ষমতা দখল করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও যারা নিষিদ্ধ, যাদের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করেছিলাম আমরা, সবাইকে মুক্ত করে দিয়েছে। যত জঙ্গি, সন্ত্রাসী, খুনি, সব ছেড়ে দিয়েছে। জেলখানা খালি। এখন বাংলাদেশে সেই জঙ্গিদের রাজত্ব। তাদের ব্যবহার করেই, আমাকে হত্যার চক্রান্ত করেই ক্ষমতা দখল করেছেন ইউনূস। শয়ে শয়ে শুধু মামলা করছেন আওয়ামি লিগ আমার নামে।”
গত বছর জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনকেও ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন হাসিনা। তাঁর বক্তব্য, “১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে যে হত্যাকাণ্ড এবং অগ্নিসংযোগ শুরু হয়, তা ইউনূসের নির্দেশেই হয়। নিজেই স্বীকার করেছেন উনি যে হিসেব কষে এগিয়েছেন। ছাত্র আন্দোলনের কোনও নেতা ছিল না। উনি মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সূক্ষ্ম ভাবে গোটা বিষয়টির পরিকল্পনা করে ঘটিয়েছেন। হত্যাকারীরা দায়মুক্ত হয়েছে, মামলা হয়েছে আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে। এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র, কোন ধরনের ন্যায়, কোন ধরনের স্বাধীনতা?”
ইউনূসকে ‘জঙ্গিনেতা’ বলেও উল্লেখ করেন হাসিনা। বলেন, “যে সংবিধান দীর্ঘ সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালিজাতি পেয়েছে, তাতে হাত দেওয়ার অধিকার এই অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলকারী জঙ্গিনেতাকে কে দিয়েছে? যে ৭.৬২ রাইফেল-বুলেট, সেই অস্ত্র কার কাছে আছে? উদ্ধার হয়েছে কি? পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা জামাত-ই-ইসলামির অস্ত্র কি উদ্ধার হয়েছে? সেসব উদ্ধার না করে, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে হাতে লাঠি ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে আজ। যে ক্ষমতায় আছেন, তা দখল করা। মানুষের সমর্থন নেই, সাংবিধানিক ভিত্তি নেই, পদেরও কোনও ভিত্তি নেই। সংসদ ছাড়া তিনি কী করে আইন তৈরি করেন?” শিক্ষক-বিচারপতিদের উপর যে পড়ুয়াদের দিয়ে হামলা করানো হচ্ছে, সেই গোটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কী, সেই প্রশ্নও তোলেন হাসিনা।
বাংলাদেশের সীমান্তও অন্য দেশে ঢুকে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন হাসিনা। বলেন, “আজ বাংলাদেশের সীমান্ত কোথায়? মায়ানমার সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ নেই। লজ্জা হয় না, যে ক্ষমতায় থাকতে দেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দিচ্ছে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে দেশটাকে? দেশের মানুকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে। মায়ানমার সরকার আক্রমণ করলে মানুষের জীবনে ধাক্কা এসে পড়বে। ক্ষমতার লোভী ইউনূস। ক্ষমতায় এসেই রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাবে বলেছিলেন। আট মাসে ক’জনকে ফেরত পাঠাতে পেরেছেন? বরং আরও ১.৫ লক্ষ রোহিঙ্গা ঢুকে গিয়েছে। একটা প্রতিশ্রুতিও রাখতে পারেননি, শুধু মিথ্যে বাহানায় ভুলিয়ে রাখছেন। এভাবে একটা দেশকে শেষ হয়ে যেতে দেওয়া যায় না।”